বিসিএস ভাইভা অভিজ্ঞতা – ০১

০১।প্রার্থীর নামসেলিম আল দিন
০২।তারিখ১২ এপ্রিল, ২০২৩
০৩।বিসিএস৪১ তম
০৪।বোর্ডঅধ্যাপক ড. নূরজাহান বেগম
০৫।বিষয়গণিত
০৬।ক্যাডারবোথ ক্যাডার
০৭।ক্যাডার চয়েসপ্রশাসন, পুলিশ, অডিট, ট্যাক্স …
০৮।সময়২০-২২ মিনিট (আনুমানিক)
সেলিম আল দিনের ভাইভা অভিজ্ঞতাঃ

আনুমানিক সকাল ৯ টার পর পর পিএসসিতে পৌঁছি। পরিচিত একজনের সাথে হালকা কথাবার্তা, আলোচনা, পেপারের হেডলাইনে চোখ বুলিয়ে ৯.৩০ টার পরে ভেতরে ঢুকি। রিসিপশনে মোবাইল জমা দিয়ে নীচতলায় হলরুমে সবার সাথে বসি। আনুমানিক ১০ টার পর বোর্ড করার জন্য রোল ডাকা শুরু হয়। আমি রোল পড়ে ১ নং বোর্ডে।

একজন কর্মকর্তার পেছেনে আমরা ১০ জন পিএসসি ৬ তলায় পৌঁছে জানতে পারি আমাদের অধ্যাপক ড. নূরজাহান বেগম স্যারের বোর্ডে ভাইবা দিতে হবে। ঐখানে সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর কপি জমা দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকি। আমার সিরিয়াসল ছিল ১০ জনের মধ্যে ৮ম। ঠিক ১ টা ৫/৬ এর দিকে আমার ডাক পরে।★ কলিং বেল বাজার পর দরজা খুলে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলাম।

এখনো amarStudy অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড না করে থাকলে গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করতে এখানে যানঃ Download Now. অ্যাপটি বিসিএস’সহ প্রায় সব রকমের চাকুরির প্রস্তুতির সহায়ক।

একটু সামনে এগুতেই (আমার সালাম দেওয়ার পূর্বেই) বসতে বললেন। তবুও আমি সালাম দিলাম। চেয়ারম্যান স্যার সালামের উত্তর দিয়ে পুনরায় বসতে বললেন। আমি ধন্যবাদ জানিয়ে বসলাম। বসার পরপরই মাস্ক খুলে সামনের টেবিলে রাখতে বললেন। এরপর প্রশ্ন শুরু হলো…


❓ চেয়ারম্যান স্যার: আপনার নাম?
💡 আমি: বললাম


❓ চেয়ারম্যান স্যার: কোন সাবজেক্ট?
💡 আমি: গণিত


❓ চেয়ারম্যান স্যার: পড়াশোনা কোথায় করেছেন?
💡 আমি: মুরারিচাঁদ কলেজ, সিলেট


❓ চেয়ারম্যান স্যার: এটা সিলেটের কোথায়, কখনো নাম শুনিনি তো?
💡 আমি: ম্যাডাম [আমি স্যার বলার অনেক প্রস্তুতি নিয়ে গেলেও এই ভুলটা বারবারই করেছি!] এটি ‘M.C. College’ নামে সর্বার্ধিক পরিচিত। আমি M.C. College বলার সাথে সাথেই চিনেছেন।]


❓ চেয়ারম্যান স্যার: কলেজের নাম ‘মুরারিচাঁদ কলেজ’ কেন হলো?
💡 আমি: বললাম


❓ চেয়ারম্যান স্যার: হোম ডিস্ট্রিক্ট কোথায়?
💡 আমি: নরসিংদী


❓ চেয়ারম্যান স্যার: [অবাক হয়ে] নরসিংদী ছেলে সিলেটের কলেজে কেন। তোমাদের জন্যে তো ঢাকা কাছে?
💡 আমি: বললাম [কারণ বলার সাথে সাথে কলেজেরও একটু প্রশংসা করে নিলাম]


❓ চেয়ারম্যান স্যার: আচ্ছা সেলিম, তুমি তো গণিতে ছাত্র? বলো Integration কী?
💡 আমি: বললাম।


❓ চেয়ারম্যান স্যার: বাস্তব জীবনের একটা ঘটনা বা উদাহরণ দিয়ে এটা বুঝাও।
💡 আমি: চেষ্টা করলাম, মনে হলো পেরেছিও।


❓ চেয়ারম্যান স্যার: তাহলে Differentiation কী?
💡 আমি: বললাম।


❓ চেয়ারম্যান স্যার: এটাকেও বাস্তব জীবনের উদাহরণ দিয়ে বুঝাও।
💡 আমি: তৎক্ষনাৎ মাথায় আসছিলো না, তাই স্যারি বলেছি।


❓ চেয়ারম্যান স্যার: [হালকা অখুশি হলেন মনে হলো] তোমরা গণিতের শিক্ষক হবা, তোমাদের তো ইন্টারমিডিয়েট এর ছাত্র-ছাত্রীদেরও পড়াতে হবে। কীভাবে পড়াবা তাহলে…? (পরে এক্সটার্নাল স্যারকে প্রশ্ন করতে বললেন)।


❓ এক্সটার্নাল স্যার-১: তোমার সাবজেক্ট কী শুধু Math নাকি Applied ম্যাথ?
💡 আমি: স্যার, পিওর ম্যাথ।


❓ এক্সটার্নাল স্যার-১: মাস্টার্সে?
💡 আমি: স্যার, মাস্টার্সেও পিওর ম্যাথ।


❓ এক্সটার্নাল স্যার-১: Pure Math এবং Applied Math এর মধ্যে প্রার্থক্য কী?
💡 আমি: বললাম।


❓ এক্সটার্নাল স্যার-১: আচ্ছা মাস্টার্সে আপনার পঠিত বিষয়গুলোর নাম বলুন তো?
💡 আমি: অনার্স চতুর্থ বর্ষ এর কিছু বই এবং মাস্টার্স এর কিছু বই মিলিয়ে ৭-৮ টা বইয়ের নাম কনফিডেন্টলি বলে দিসি। আসলে মাস্টার্স এর সবগুলো বইয়ের নাম মনে ছিল না, তাই না থেমে বলে দিসি। উনিও কোন রিএক্ট বা অভিযোগ করেন নি।


❓ এক্সটার্নাল স্যার-১: বাংলাদেশের একজন গণিতবিদ এর নাম বলতে পারবেন?
💡 আমি: বললাম


❓ এক্সটার্নাল স্যার-১: গণিতে উনার অবদান কী?
💡 আমি: বললাম।


❓ এক্সটার্নাল স্যার-১: আচ্ছা তোমরা যে গণিত অলিম্পিয়াড করো, একজন ছাত্র কেন গণিত অলিম্পিয়াডে প্রতিযোগিতা করবে? তার এতে কী লাভ?
💡 আমি: বললাম


❓ এক্সটার্নাল স্যার-১: এরপর উনি বললেন, “তোমরা গণিতের স্যার ও ডাক্তাররা তো একই! ডাক্তাররা একজন একজন করে রোগী ধরেন, আর তোমরা ৫০ জন করে একবারে।” বলেই হাসি…


❓ এক্সটার্নাল স্যার-১: আচ্ছা, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমনের মূল কারণ তো ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করা। কিন্তু ফিনল্যান্ড তো ইতিমধ্যে ন্যাটোর সদস্য হয়ে গেলো। রাশিয়া তাহলে ফিনল্যান্ড কেন আক্রমণ করলো না?
💡 আমি: বললাম


❓ এক্সটার্নাল স্যার-১: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব তো সমগ্র বিশ্বব্যাপীই পড়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে না। আপনার মতে, বাংলাদেশ কীভাবে এই প্রভাব থেকে বেড়িয়ে আসতে পার, কীভাবে এই প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারে?
💡 আমি: বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানি আমাদানির কথা বলেছিলাম। আর বলতে না দিয়েই আবার প্রশ্ন..


❓ এক্সটার্নাল স্যার-১: এটা তো আমাদের হাতে নাই, আমরা কী করতে পারি?
💡 আমি: স্যার, উৎপাদন বাড়াতে পারি। কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে আমরা আমদানি নির্ভরতা কমাতে পারি। এই উত্তরে স্যার খুবই খুশি হলেন…


❓ এক্সটার্নাল স্যার-১: হ্যাঁ, এই উত্তরটাই চাচ্ছিলাম।
💡 (চেয়ারম্যান স্যার মাঝে একটু বাহিরে ছিলেন। উনি পুনরায় প্রশ্ন করলেন)।


❓ চেয়ারম্যান স্যার: আপনার প্রথম পছন্দ কী?
💡 আমি: মেডাম, বিসিএস প্রশাসন। (ক্যাডার চয়েস সম্পর্কিত আর কোন প্রশ্নই করেননি)।


❓ চেয়ারম্যান স্যার: পড়াশোনা শেষ করেছেন কবে?
💡 আমি: বললাম


❓ চেয়ারম্যান স্যার: এখন কী করছেন?
💡 আমি: জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসাবে কর্মরত আছি।


❓ চেয়ারম্যান স্যার: কতদিন হলো জয়েন করেছেন?
💡 আমি: মেডাম, ৫ মাস এর মত হলো।


❓ চেয়ারম্যান স্যার: তাহলে তো ব্যাংকিং তেমন ভালো বুঝবেন না। আচ্ছা বলেন, আপনার মতে রেমিট্যান্স বাড়াতে কী করা যেতে পারে?
💡 আমি: হুন্ডিতে লেনদেন কমিয়ে বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠাতে প্রবাসীদের উৎসাহিত করতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কথা বলেছিলাম। আরো কিছু বলেছিলাম…


❓ চেয়ারম্যান স্যার: হুন্ডিতে টাকা আসলে সমস্যা কী?
💡 আমি: বললাম। (পরে চেয়ারম্যান স্যার আরো অনেককিছু বলে ২য় এক্সটার্নাল স্যারকে প্রশ্ন করতে বললেন। শুনেছি উনি নাকি RAKUB এর এমডি, তাই ব্যাংকার পেয়ে ব্যাংক থেকে প্রশ্ন করবেন এই ভয়ে ছিলাম)।


❓ এক্সটার্নাল স্যার-২: আচ্ছা আপনি তো ব্যাংকার, তাহলে বলতে পরবেন ‘ব্যাংক রেট’ কী?
💡 আমি: বললাম।


❓ এক্সটার্নাল স্যার-২: তাহলে ‘রেপো রেট’ কী?
💡 আমি: বললাম।


❓ এক্সটার্নাল স্যার-২: এই দুটোর মধ্যে পার্থক্য কী?
💡 আমি: বললাম।


❓ এক্সটার্নাল স্যার-২: আচ্ছা মানি লন্ডারিং বলতে কী বুঝেন?
💡 আমি: বললাম।


❓ এক্সটার্নাল স্যার-২: মানি লন্ডারিংয়ের ধাপগুলি বলতে পারবেন?
💡 আমি: বললাম।


❓ এক্সটার্নাল স্যার-২: আসল ব্যাংক নোটের বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?
💡 আমি: বললাম।


❓ এক্সটার্নাল স্যার-২: তাহলে জাল নোট চিনবেন কীভাবে?
আমি: বললাম। (ভাগ্য ভালো ব্যাংক থেকে আর গভীরে যাননি)।


❓ এক্সটার্নাল স্যার-২: আচ্ছা, 4IR এর নাম শুনেছেন?
💡 আমি: বললাম। AI যোগ করেছিলাম, তাই এখান থেকে পরেরে প্রশ্নগুলো করেছেন…


❓ এক্সটার্নাল স্যার-২: তাহলে তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের ইন্সট্রুমেন্ট কী ছিল?
💡 আমি: ইন্টারনেট বললাম।


❓ এক্সটার্নাল স্যার-২: তাহলে দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের ইন্সট্রুমেন্ট কী ছিল?
💡 আমি: ভুলে কম্পিউটার বলে ফেলছিলাম, পরে শুধরে নিয়ে বিদুৎ বলেছি।


❓ এক্সটার্নাল স্যার-২: তাহলে প্রথম শিল্প বিপ্লবের ইন্সট্রুমেন্ট কী ছিল?
💡 আমি: বাস্পীয় ইঞ্জিন বললাম।


❓ এক্সটার্নাল স্যার-২: এটা কোথায় হয়েছিল?
💡 আমি: ইংল্যান্ড বললাম।


❓ এক্সটার্নাল স্যার-২: ChatGPT কী?
💡 আমি: বললাম।


❓ এক্সটার্নাল স্যার-২: আপনি কখনো এটা আপনার মোবাইলে ব্যাবহার করেছেন।
💡 আমি: জ্বী স্যার করেছি। (যদিও ইনস্টল করে ব্যবহার করা হয়নি, তবুও করেছি বলে ভয়ে ছিলাম। উনি নিজেই এটার নিয়ে কথা বললেন। আমি জ্বী স্যার জ্বী স্যার বলতে থাকলাম)।


❓ এক্সটার্নাল স্যার-২: আচ্ছা, আমাদের দেশে কোন ক্ষেত্রে AI ব্যাবহার করতে পারি?
💡 আমি: খানিকক্ষণ ভেবে, সরি বললাম। বললাম, এই বিষয়টা আমার আরো জানতে হবে। (পরে চেয়ারম্যান স্যার কাগজগুলো নিয়ে আসতে বললেন)।


আমার ব্যাক্তিগত পর্যালোচনা:

  • আমাকে কোন ইংরেজিতে প্রশ্ন করেনি!
  • চ্যাডার চয়েস, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, সংবিধান এসব বিষয়ে কোন প্রশ্নই করেননি।
  • বোর্ড খুবই আন্তরিক ছিলো।

❝ভাইবা অভিজ্ঞতা পড়ে যেমনই মনে হোক, আমি হালকা কনফিডেন্সহীনতায় ভুগেছিলাম। কিছু উত্তরে 'হয়ত, সম্ভবত' এসব শব্দ ব্যবহার করায় কিছুটা পেচিয়েছেন। আপাতত এই আমার ভাইবা অভিজ্ঞতা। আমার জন্য দোয়া করবেন।❞
-
সেলিম আল দিন

আরো পড়ুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You're currently offline !!

error: Content is protected !!