প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ : বাংলা ব্যাকরণ

বাংলা ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগে শব্দের প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ সম্পর্কে জানা অপরিহার্য। আসুন উদাহরণসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ এবং বানান শুদ্ধি দেখে নেই।

০১। বহুবচনের অপপ্রয়োগজনিত ভুলঃ আমরা অনেক সময় অশুদ্ধভাবে বহুবচনের দ্বিত্ব ব্যবহার করি। যেমন:-

❌অপপ্রয়োগঃ সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশগুলো।
✅ শুদ্ধ প্রয়োগঃ সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশ অথবা, সার্কভুক্ত অন্য দেশগুলো।

এখনো amarStudy অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড না করে থাকলে গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করতে এখানে যানঃ Download Now. অ্যাপটি বিসিএস’সহ প্রায় সব রকমের চাকুরির প্রস্তুতির সহায়ক।

❌অপপ্রয়োগঃ অনেক ছাত্রগণ
✅ শুদ্ধ প্রয়োগঃ অনেক ছাত্র।

❌অপপ্রয়োগঃ সকল দর্শকমণ্ডলী।
✅ শুদ্ধ প্রয়োগঃ সকল দর্শক অথবা দর্শকমণ্ডলী।

বি: দ্র: মনে রাখুন বহুবচনের পর দ্বিত্ব প্রয়োগ হয় না।

০২। শব্দের অপপ্রয়োগজনিত ভুল: আমরা প্রায় শব্দের অপপ্রয়োজনিত ভুল করে থাকি। যেমন:-

ℹ️ অশ্রুজলঃ অশ্রু অর্থই চোখের জল। তাই অশ্রুজল ব্যবহার ভুল।
ℹ️ আয়ত্তাধীনঃ আয়ত্ত শব্দের অর্থই অধীন। তাই আয়ত্তের পর অধীন ব্যবহার বাহুল্য।
ℹ️ জন্মবার্ষিকীঃ জন্মবার্ষিক শব্দই যথেষ্ট। এক্ষেত্রে স্ত্রী প্রত্যয় যোগ বহুল প্রচলিত হলেও তা অশুদ্ধ।
ℹ️ ভাষাভাষীঃ ভাষা ব্যবহারকারী অর্থে ভাষীই যথার্থ ও যথেষ্ট। ভাষাভাষী প্রয়োগ অশুদ্ধ।

০৩। শব্দের বানানগত অশুদ্ধি/অপপ্রয়োগঃ বানানরীতি সম্পর্কে অজ্ঞতার ফলে শব্দের বানান-বিভ্রান্তি ঘটে থাকে। যেমন:-

❌ অশুদ্ধঃ অপেক্ষমান
✅ শুদ্ধঃ অপেক্ষমাণ

❌ অশুদ্ধঃ প্রাণীবিদ্যা
✅ শুদ্ধঃ প্রাণিবিদ্যা

❌ অশুদ্ধঃ উল্লেখিত
✅ শুদ্ধঃ উল্লিখিত

❌ অশুদ্ধঃ মন্ত্রীসভা
✅ শুদ্ধঃ মন্ত্রিসভা

❌ অশুদ্ধঃ শিরচ্ছেদ
✅ শুদ্ধঃ শিরশ্ছেদ

০৪। শব্দের গঠনগত অপপ্রয়োগ: শব্দের গঠনরীতি সম্পর্কে অজ্ঞতার ফলে শব্দ ব্যবহারে বিভ্রান্তি ঘটে থাকে। যেমন:-

❌ অশুদ্ধঃ অর্ধাঙ্গিনী
✅ শুদ্ধঃ অর্ধাঙ্গী

❌ অশুদ্ধঃ কর্তাগণ
✅ শুদ্ধঃ কর্তৃগণ

❌ অশুদ্ধঃ সম্ভব
✅ শুদ্ধঃ সম্ভবপর

প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ : বাংলা ব্যাকরণ

❌ অশুদ্ধঃ ইতিমধ্যে
✅ শুদ্ধঃ ইতোমধ্যে

❌ অশুদ্ধঃ একত্রিত
✅ শুদ্ধঃ একত্র

❌ অশুদ্ধঃ চলমান
✅ শুদ্ধঃ চলন্ত।

০৫। প্রায় সমোচ্চারিত শব্দের বানান: শব্দের সঠিক অর্থ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকার কারণেও প্রয়োগ বিভ্রান্তি ঘটে থাকে। যেমন:-

ℹ️ অণু: বস্তুর ক্ষুদ্রতম ক্ষুদ্রতম অংশ
ℹ️ অনু: পশ্চাৎ

ℹ️ অশ্বঃ ঘোড়া
ℹ️ অশ্মঃ পাথর

ℹ️ ছাড়ঃ ত্যাগ
ℹ️ ছারঃ তুচ্ছ

ℹ️ দীপঃ প্রদীপ
ℹ️ দ্বিপঃ হাতি

ℹ️ ভাষাঃ কথা
ℹ️ ভাসাঃ জল বা বায়ুর উপর ভর করে থাকা

০৬। গুরুত্বপূর্ণ বানান শুদ্ধি :

(I) বস্তুবাচক শব্দ ও প্রাণিবাচক অ-তৎসম শব্দের শেষে ই-কার (ি) হবে। যেমনঃ বস্তুবাচক শব্দ: বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি এবং প্রাণিবাচক শব্দ: পাখি, হাতি ইত্যাদি।

(II) দেশ, জাতি ও ভাষার নাম লিখতে সর্বদা ই-কার হবে।

দেশঃ জার্মানি, চিলি, হাইতি ইত্যাদি।
জাতিঃ বাঙালি, জাপানি ইত্যাদি।
ভাষাঃ ইংরেজি, হিন্দি, আরবি ইত্যাদি।

(III) –ইনী, -ঈ, -ঈয়সী, -নী, -বতী, -মতী, -ময়ী অন্ত্য প্রত্যয়যুক্ত স্ত্রীবাচক শব্দের শেষে সর্বদা ঈ-কার (ী) হবে। যেমন- মনোহারিণী, গরীয়সী, যুবতী, গণবতী, জননী, নারী ইত্যাদি।

(IV) বিদেশী শব্দের বানান বাংলায় লেখার সময় ‘ষ’ ও ‘ণ’ না হয়ে ‘স’ ও ‘ন’ হবে।

❌ অশুদ্ধঃ ষ্টেশন
✅ শুদ্ধঃ স্টেশন

❌ অশুদ্ধঃ ফটোষ্ট্যাট
✅ শুদ্ধঃ ফটোস্ট্যাট

❌ অশুদ্ধঃ কর্ণেল
✅ শুদ্ধঃ কর্নেল

(V) বানানে যে বর্ণের উপর রেফ থাকবে, সেই বর্ণে দ্বিত্ব হবে না। যেমন-

❌ অশুদ্ধঃ ধর্ম্মসভা
✅ শুদ্ধঃ ধর্মসভা

❌ অশুদ্ধঃ পর্ব্বত
✅ শুদ্ধঃ পর্বত।

(VI) বিশেষণবাচক ‘আলি’ প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই-কার হবে।

❌ অশুদ্ধঃ বর্ণালী
✅ শুদ্ধঃ বর্ণালি

❌ অশুদ্ধঃ রূপালী
✅ শুদ্ধঃ রুপালি

০৭। কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বাক্য শুদ্ধি :

❌ অশুদ্ধঃ দৈন্য সর্বদা মহত্বের পরিচায়ক নয়।
✅ শুদ্ধঃ দৈন্য সর্বদা মহত্ত্বের পরিচায়ক নয়।

❌ অশুদ্ধঃ আমি সাক্ষী দিয়েছি।
✅ শুদ্ধঃ আমি সাক্ষ্য দিয়েছি।

❌ অশুদ্ধঃ অধ্যায়ন ছাত্রদের তপস্যা।
✅ শুদ্ধঃ অধ্যয়নই ছাত্রদের তপস্যা।

❌ অশুদ্ধঃ তাহার জীবন সংশয়ময় ।
✅ শুদ্ধঃ তাহার জীবন সংশয়াপূর্ণ ।

❌ অশুদ্ধঃ আমি অপমান হয়েছি।
✅ শুদ্ধঃ আমি অপমানিত হয়েছি।

❌ অশুদ্ধঃ একটা গোপন কথা বলি
✅ শুদ্ধঃ একটা গোপনীয় কথা বলি।

❌ অশুদ্ধঃ তার দারিদ্রতা অসহনীয়
✅ শুদ্ধঃ তার দারিদ্র্য অসহনীয়/ তার দরিদ্রতা অসহনীয়

❌ অশুদ্ধঃ এ কথা প্রমাণ হয়েছে।
✅ শুদ্ধঃ এ কথা প্রমাণিত হয়েছে।

❌ অশুদ্ধঃ আমি অপমান হয়েছি।
✅ শুদ্ধঃ আমি অপমানিত হয়েছি।

❌ অশুদ্ধঃ সর্ববিষয়ে বাহুল্যতা বর্জন কর।
✅ শুদ্ধঃ সব বিষয়ে বাহুল্য বর্জন কর।

❌ অশুদ্ধঃ তার সৌজন্যতা ভুলতে পারব না।
✅ শুদ্ধঃ তার সৌজন্য ভুলতে পারব না।

❌ অশুদ্ধঃ সে বড় দুরাবস্থায় পড়েছে
✅ শুদ্ধঃ সে বড় দুরবস্থায় পড়েছে।

❌ অশুদ্ধঃ বাংলা ব্যাকরণ অত্যান্ত জটিল
✅ শুদ্ধঃ বাংলা ব্যাকরণ অত্যন্ত জটিল।

প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ : বাংলা ব্যাকরণ

❌ অশুদ্ধঃ লেখাপড়ায় তার মনযোগ নেই।
✅ শুদ্ধঃ লেখাপড়ায় তার মনোযোগ নেই।

❌ অশুদ্ধঃ আজকের সন্ধ্যা মনমুগ্ধকর
✅ শুদ্ধঃ আজকের সন্ধ্যা বড়ই মনোমুদ্ধকর।

❌ অশুদ্ধঃ অন্নাভাবে প্রতি ঘরে ঘরে হাহাকার।
✅ শুদ্ধঃ অন্নাভাবে ঘরে ঘরে হাহাকার।

❌ অশুদ্ধঃ সকল সভ্যগণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
✅ শুদ্ধঃ সকল সভ্য সভায় উপস্থিত ছিলেন।

❌ অশুদ্ধঃ তারা সকলেই এলো।
✅ শুদ্ধঃ তারা এলো/ সকলেই এলো।

❌ অশুদ্ধঃ বৃক্ষটি সমূলসহ উৎপাটিত হয়েছে।
✅ শুদ্ধঃ বৃক্ষটি সমূলে উৎপাটিত হয়েছে।

❌ অশুদ্ধঃ এ কাজটি আমার পক্ষে সম্ভব নহে।
✅ শুদ্ধঃ এ কাজটি করা আমার পক্ষে নম্ভব নয়।

প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ : বাংলা ব্যাকরণ

❌ অশুদ্ধঃ এ কাজে তাহার হস্ত পাকা।
✅ শুদ্ধঃ এ কাজে তার হাত পাকা।

❌ অশুদ্ধঃ অরন্য জনপদে একটি চমৎকার পুস্তক।
✅ শুদ্ধঃ ‘অরণ্য জনপদে’ একটি চমৎকার পুস্তক।

❌ অশুদ্ধঃ ঝর্ণা, ঝর্ণা সুন্দরী ঝর্ণা।
✅ শুদ্ধঃ ঝরণা ঝরনা সুন্দরী ঝরনা।

❌ অশুদ্ধঃ এটি একটি মহৎ আবিস্কার।
✅ শুদ্ধঃ এটি একটি মহৎ আবিষ্কার।

❌ অশুদ্ধঃ তাদের যথোচিত পুরষ্কার দাও।
✅ শুদ্ধঃ তাদের যথোচিত পুরস্কার দাও।

❌ অশুদ্ধঃ কস্ট অর্থ ক্লেস।
✅ শুদ্ধঃ কষ্ট অর্থ ক্লেশ।

❌ অশুদ্ধঃ আমি সাক্ষী দিয়েছি।
✅ শুদ্ধঃ আমি সাক্ষ্য দিয়েছি।

❌ অশুদ্ধঃ মহারাজ সভাগৃহে প্রবেশ করলেন।
✅ শুদ্ধঃ মহারাজ সভাকক্ষে প্রবেশ করলেন।

❌ অশুদ্ধঃ সে সঙ্কট অবস্থায় পড়েছে।
✅ শুদ্ধঃ সে সঙ্কটে পড়েছে।

❌ অশুদ্ধঃ তিনি আরোগ্য হয়েছেন।
✅ শুদ্ধঃ তিনি আরোগ্য লাভ করেছেন।

❌ অশুদ্ধঃ তারা শব পোড়াতে গেল।
✅ শুদ্ধঃ তারা শবদাহ করতে গেল।

❌ অশুদ্ধঃ দরিদ্র আমাদের দেশের একটি অভিশাপ।
✅ শুদ্ধঃ দারিদ্র্য আমাদের দেশের একটি অভিশাপ।

বাংলা ব্যাকরণে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ :

ভাষা অপপ্রয়োগের ক্ষেত্র :বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভাষার অপপ্রয়োগ হতে পারে। যেমন:

০১। শব্দদ্বিত্ব অপপ্রয়োগঃ শুধু/কেমলমাত্র, অশ্রুজল, ঘামজল, ভুলত্রুটি, ভুলভ্রান্তি।

০২। শব্দ রূপান্তজাত অপপ্রয়োগঃ দৈন্যতা, মাধুর্যতা, সমসাময়িক, উদ্ধেলিত, চোখের দৃষ্টিশক্তি, মাতাহারা।

০৩। সংখ্যাজাত অপপ্রয়োগঃ ১ জুলাই/১লা জুলাই।

০৪। বচনজাত অপপ্রয়োগঃ বড় বড় মানুষরা সব, সকল/সমস্ত /সব যুদ্ধাপরাধীদের।

০৫। নির্দেশকজাত অপপ্রয়োগঃ এই লোকটি।

০৬। সন্ধিজাত অপপ্রয়োগঃ লজ্জাস্কর, ইতিমধ্যে, উল্লেখিত, দুরাবস্থা।

০৭। সমাসজাত অপপ্রয়োগঃ দেশ ও বিদেশে।

০৮। বিভক্তিজাত অপপ্রয়োগঃ আমাদেরকে, তাদেরকে, নারীদেরকে, বাড়িতে।

০৯। উপসর্গজাত অপপ্রয়োগঃ সুস্বাগতম, অক্লান্তি হীনভাবে, উপ-পরিচালক।

১০। প্রত্যয়জাত অপপ্রয়োগঃ দৈন্যতা, দারিদ্রতা।

১১। চিহ্নজাত অপপ্রয়োগঃ সুন্দরী বালিকা, আসমা অস্থিরা, অভাগিনী, কাঙালিনী।

প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ : বাংলা ব্যাকরণ

১২। পক্ষজাত অপপ্রয়োগঃ আমি অর্থাৎ হাসান জেনে শুনে ভুল করি না।

১৩। কারকজাত অপপ্রয়োগঃ ছুরিতে, আমের কাননে।

১৪। বিসর্গজাত অপপ্রয়োগঃ পুন:প্রচার।

১৫। সমোচ্চারিত অপপ্রয়োগঃ তাড়া আমরাতলায় বসে আমরা খাওয়ার সময় মালির তারা খেয়েছে।

❌ ১৬। বাচ্যজাত অপপ্রয়োগঃ সূর্য পূর্বদিকে উদয় হয়।

১৭। বাক্যজাত অপপ্রয়োগঃ আমি স্বচক্ষে/নিজের চোখে।

❌ ১৮। এককথায় প্রকাশ অপপ্রয়োগঃ চারিদিকে প্রদক্ষিণ, হাতে কলমে ব্যবহারিক শিক্ষা।

❌ ১৯। প্রবাদ অপপ্রয়োগঃ স্বল্প বিদ্যা ভয়ংকরী।

❌ ২০। বাগধারা অপপ্রয়োগঃ পাকা ধানে আগুন দেয়া।

❌ ২১। বানান ও উচ্চারণ অপপ্রয়োগঃ প্রাণীজগৎ, কীভাবে, পৃথিবীব্যাপী, স্ত্রীবাচক, শশীভূষণ, মন্ত্রীসভা, স্বামীগৃহ, গুণীজন, নদীতীর, নদীমাতৃক, বৈশাখীমেলা, আগামীকাল।

সমাসবদ্ধ শব্দের বানান লেখা হয় ঈ-কার দিয়ে। ব্যাকরণ নিয়ম অনুসারে ঈ-কার হয়ে যায় ই-কার। ঊ-কার হয়ে যায় উ-কার। ণ-হয়ে যায় ন। য-ফলা থাকে না। যেমন: ঘরনি, কানাই/কানু, বোশেখি, সুয্যি, সোনা, সন্ধে ইত্যাদি।

প্রাদেশিক ও বিদেশি শব্দ হলে /ছ/য/ণ/ষ/ঞ্জ/ঞ্চ/ ঈ-কার/উ-কার বসে না তবুও ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন: লুংগি, ডেংগু, ঠান্ডা, ঝান্ডা, লন্ঠন, মিসরি, পসন্দ, নামাজ, ওজু, ইস্টার্ন, স্টোর, ইনজিন, ইনজিনিয়ার, সেনচুরি, তির (ধনুক অর্থে, পাড় অর্থে নয়), অ্যাকাডেমি/এ্যাকাডেমি/একাডেমি, রসুল, নুর ইত্যাদি।

সংস্কৃতশব্দে য-ফলা চল আছে কিন্তু ইংরেজি শব্দে নাই তবু লেখা হচ্ছে। যেমন: ইস্যু, টিস্যু, গ্যেটে, স্যার। ইংরেজি শব্দকে তদ্ভব করে লেখা হচ্ছে। যেমন: হসপিটাল>হাসাপাতাল, চকোলেট>চকলেট।

শব্দের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ :

সংস্কৃত সহিত থেকে ‘সঙ্গে বা সাথে’র উৎপত্তি। নিয়ম আছে গদ্যে ‘সঙ্গে’ আর পদ্যে ‘সাথে’ ব্যবহার করতে হবে তবে এখন সর্বত্রই ‘সঙ্গে’ ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার বিশেষণ সাধারণত পদক্রম অনুসারে বিশেষ্যের আগে বসে। যেমন: খাঁটি গরুর দুধ।

‘কী খাঁটি’ প্রশ্ন করলে পাওয়া যায় গরুর দুধ (সংস্কৃত গোদুগ্ধ)। অনেকেই বর্তমানে এই বাক্যকে ভুল মনে করে শুদ্ধ করে লেখেন গরুর খাঁটি দুধ।

ইংরেজিতে লেখা হয় Fresh/Pure Milk অর্থাৎ খাঁটি দুধ। লেখা হয় না Fresh /Pure Cow Milk। সাধারণত গরুর দুধই বিক্রি হয় অন্য দুধ নয়। তাই গরুর খাঁটি লেখার প্রয়োজন হয় না। খাঁটি দুধ—লেখলেই হয়। বিভিন্নভাবে বাক্য অুশুদ্ধ হতে পারে। যেমন :

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ আপনি সদাসর্বদা জনগণের মঙ্গল চেয়েছেন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ আপনি সর্বদা/সব সময় জনগণের মঙ্গল চেয়েছেন।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ রহিম ছেলেদের মধ্যে কনিষ্ঠতম/তর।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ রহিম ছেলেদের মধ্যে কনিষ্ঠ।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ শুনেছি আপনি স্বস্ত্রীক ঢাকায় থাকেন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ শুনেছি আপনি সস্ত্রীক/স্ত্রীসহ ঢাকায় থাকেন।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ঘটনাটি শুনে আপনি তো উদ্বেলিত হয়ে পড়েছিলেন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ঘটনাটি শুনে আপনি তো উদ্বেল হয়েছিলেন।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ আপনি জনগণের হয়েও তাদের পক্ষে সাক্ষী দেননি।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ আপনি জনগণের হয়েও তাদের পক্ষে সাক্ষ্য দেননি।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ বাসের ধাক্কায় তিনি চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ বাসের ধাক্কায় তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ আমাদের প্রধানমন্ত্রী চেষ্টা করেছেন নর-নারীর বৈষম্যতা দূর করতে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ আমাদের প্রধানমন্ত্রী চেষ্টা করেছেন নর-নারীর বৈষম্য দূর করতে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ আপনার এলাকার উন্নয়নের জন্য আপনি দিবারাত্রি পরিশ্রম করেছেন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ আপনার এলাকার উন্নয়নের জন্য আপনি দিবারাত্র/দিনরাত পরিশ্রম করেছেন।

প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ : বাংলা ব্যাকরণ

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ বেশি চাতুর্যতা দেখাতে গিয়ে শেষে নিজেই দল থেকে বাদ পড়লেন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ বেশি চাতুর্য/চতুরতা দেখাতে গিয়ে শেষে নিজেই দল থেকে বাদ পড়লেন।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ শুধু নিজের না, দেশের উৎকর্ষতা সাধন করা প্রত্যেকেরই উচিত।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ শুধু নিজের না, দেশের উৎকর্ষ/উৎকৃষ্টতা সাধন করা প্রত্যেকেরই উচিত।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ তার কথার মাধুর্যতা নাই।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ তার কথার মাধুর্য বা মধুরতা নাই।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ অন্য কোন উপায়ন্ত না দেখে তারা গুলি ছুড়তে লাগল।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ অন্য কোন উপায় না দেখে তারা গুলি ছুড়তে লাগল।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ঢাকা দিন দিন তার ভারসাম্যতা হারিয়ে ফেলছে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ঢাকা দিন দিন তার ভারসাম্য/ভারসমতা হারিয়ে ফেলছে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ঢাকার সৌন্দর্যতা বৃদ্ধিতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ঢাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ সে ক্যান্সারজনিত কারণে মারা গিয়েছে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ সে ক্যান্সার/ক্যান্সারজনিক রোগে মারা গিয়েছে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ অনুমতি ছাড়া কারখানায় ঢুকা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ অনুমতি ছাড়া কারখানায় ঢুকা আইনত দণ্ডনীয়/আইনত অপরাধ।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ শহীদুল্লাহ কায়সার এবং মুনীর চৌধুরী দুজনই দেশের জন্য প্রাণ দিলেন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ শহীদুল্লাহ কায়সার ও মুনীর চৌধুরী দুজনই দেশের জন্য প্রাণ দিলেন।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ এত বড় মানুষ হয়েও আপনার সৌজন্যতার কমতি নাই।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ এত বড় মানুষ হয়েও আপনার সৌজন্যের/সুজনতার কমতি নাই।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ আগুনের দ্বারা নিভে গেছে কতগুলো প্রাণ।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ আগুনে নিভে গেছে কতগুলো প্রাণ।

বচনের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগঃ

সচেতনভাবেই হোক আর অবচেতনভাবেই হোক অনেক লেখক/কবি/সাধারণ মানুষ একটি বাক্যে দুবার বা তিনবার বহুচিহ্ন ব্যবহার করে বাক্যের গুণ নষ্ট করে।

যেমন: গ্রামগুলো সব, লক্ষ লক্ষ শিশুগুলো সব, সব রাজাকারদের, সকল যুদ্ধাপরাধীদের ইত্যাদি। ‘কিছু’ ব্যবহার হলে পরে বহুবচন হয় না। যেমন: কিছু লোকদের না হয়ে হবে কিছু লোক। বচন ঘাটতি বা বাহুল্যের কারণেও বচন ভুল হতে পারে। যেমন:

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ আইভী ছাড়া অন্যান্য মেয়র প্রার্থীদের অবস্থা কেমন?
✅ শুদ্ধবাক্যঃ আইভী ছাড়া অন্যান্য মেয়র প্রার্থীদের/অন্য প্রার্থীদেদের অবস্থা কেমন?

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ সকল/সমস্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করেছে জনতা।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ সকল/সমস্ত যুদ্ধাপরাধীর/যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করেছে জনতা।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ এবারও আইডিয়াল স্কুলের সব ছাত্ররা ভালো রেজাল্ট করেছে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ এবারও আইডিয়াল স্কুলের সব ছাত্র/ছাত্ররা ভালো রেজাল্ট করেছে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ সব পাখিরা ঘর বাঁধে না।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ সব পাখি ঘর বাঁধে না।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ লক্ষ লক্ষ জনতারা সব সভায় উপস্থিত হয়েছিল।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ লক্ষ লক্ষ জনতা সভায় উপস্থিত হয়েছিল।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ যেসব ছাত্রদের নিয়ে কথা তারা বখাটে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ যেসব ছাত্রকে নিয়ে কথা তারা বখাটে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ যেসব অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দের পরে বসে শব্দ গঠন করে তাকে প্রত্যয় বলে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ যেসব অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দের পরে বসে শব্দ গঠন করে তাদের প্রত্যয় বলে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ক্লাসে যে ১০ জন ছাত্র আছে তার মধ্যে ৮ জনই ভালো ছাত্র।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ক্লাসে যে ১০ জন ছাত্র আছে তাদের মধ্যে ৮ জনই ভালো ছাত্র।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ আমরা এমন কিছু মানুষদের চিনি, যারা এখনও দেশের জন্য প্রাণ দেবে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ আমরা এমন কিছু মানুষকে চিনি যারা এখনও দেশের জন্য প্রাণ দেবে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ কিছু কিছু মানুষ আছে যে অন্যের ভালো দেখতে পারে না।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ কিছু কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের ভালো দেখতে পারে না।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ সুজন, অন্যান্য মেয়র প্রার্থীদের খবর কী?
✅ শুদ্ধবাক্যঃ সুজন, অন্যান্য মেয়র প্রার্থীর খবর কী?

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ প্রধান মন্ত্রীর সঙ্গে অন্যান্য মন্ত্রীবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ প্রধান মন্ত্রীর সঙ্গে অন্যান্য মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ এমন কিছু লোকদের কথা বললেন, যারা রাজাকার।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ এমন কিছু লোকের কথা বললেন, যারা রাজাকার।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ এটি সার্বজনীন ব্যাপার।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ এটি সর্বজনীন ব্যাপার।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ রহিমসহ অরো অনেকেই আছেন এই নাটকে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ রহিমসহ অনেকেই আছেন এই নাটকে।

নির্দেশকের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগঃ

‘টা/টি/খানা/খানি’ ব্যবহার করে শব্দকে নির্দিষ্ট করলে তার আগে ‘এই’ বা ‘ঐ’ ব্যবহার করা যাবে না। আবার গুলো বা গুলি বা গুলিন থেকে শুধু গুলো ব্যবহার করা যায়। আল্লাদিপনা বাদ দিয়ে টি’র ব্যবহার বেশি করা যেতে পারে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ আমি এই মানুষটিকে চিনি।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ আমি এই মানুষকে চিনি। /আমি মানুষটিকে চিনি।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ঐ লোকটি খুব সৎ।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ লোকটি খুব সৎ।

সন্ধির মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগঃ

সন্ধি শব্দ গঠনের শক্তিশালী মাধ্যম তবে সংস্কৃত ও সংস্কৃত শব্দে সন্ধি করতে হয়। সংস্কৃত ও বাংলা শব্দের সন্ধি হয় না। বাংলা ও বাংলা শব্দে সন্ধি না করে আলাদা লেখাই ভালো।

উচ্চারণে সুবিধা করতে গিয়ে শব্দকে অশুদ্ধ করা ঠিক নয়। লেখা যায়: মিশি কালো>মিশকালো, নাতি বউ>নাতবউ, নাত জামাই> নাজ্জামাই, ঘোড়া দৌড়>ঘোড়দৌড়, পিছে মোড়া>পিছমোড়া ইত্যাদি লেখি। কিন্তু লেখা যাবে না: বচ্ছর, কুচ্ছিত, উচ্ছব, ঘোড়গাড়ি ইত্যাদি।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ এবারের ইলেকশান করে আপনে নাকি খুব দুরাবস্থায় আছেন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ এবারের ইলেকশান করে আপনে নাকি খুব দুরবস্থায় আছেন।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ব্যাপারটি ছিল আপনার জন্য লজ্জাস্কর।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ব্যাপারটি ছিল আপনার জন্য লজ্জা কর বা লজ্জাজনক।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ইত্যাবসারে বৃদ্ধ লোকটির দিন কাটে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ইত্যবসারে বৃদ্ধ লোকটির দিন কাটে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ইতিমধ্যে আপনি বলেছেন, আপনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ইতোমধ্যে আপনি বলেছেন, আপনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ উল্লেখিত বিষয় হলো তিনি এখন সমাজসেবী।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ উল্লিখিত বিষয় হলো তিনি এখন সমাজসেবী।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ শরৎ চন্দ্র বাংলার বিখ্যাত কথাকার।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ শরৎচন্দ্র বাংলার বিখ্যাত কথাকার/শরচ্চন্দ্র নামে একজন প্রবন্ধকার আছে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ পয়লা বৈশাখ বাঙালির আসল উৎসবের দিন। (ভুলটাই শুদ্ধ)
✅ শুদ্ধবাক্যঃ পয়লা বৈশাখ বাঙালির আসল উচ্ছবের দিন।

সমাসের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগঃ

সমাসবদ্ধ শব্দ হলে একশব্দে লিখতে হবে। অথবা মাঝে হাইফেন দিতে হবে। ও দিয়ে দুটি শব্দ যুক্ত হলে শব্দ দুটি এ-বিভক্তিযুক্ত হতে হবে। সহ অর্থ বুঝালে ‘স্ব’ না বসে ‘স’ বসে।

সংস্কৃত শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত শব্দের সমাস হয়। সমাসজাত শব্দ ও ব্যাসবাক্য একই সঙ্গে বসে না। সমাসবদ্ধ শব্দের বানানে শুধু মাঝের ঈ-কার ই-কার হয়। যেমন :

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ শহর ও গ্রামে এখন ইলেকশনের আমেজ।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ শহরে ও গ্রামে এখন ইলেকশনের আমেজ।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধ ও ভাতে’, এই কথা কবি বলেছেন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ও ভাতে, এই কথা কবি বলেছেন/আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে, এই কথা কবি বলেছেন।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ তিনি স্বসম্মানে হল ত্যাগ করলন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ তিনি সসম্মানে হল ত্যাগ করলন।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ কুআকারের মানুষগুলো ভালো স্বভাবেরও হয়।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ কদাকার মানুষগুলো ভালো স্বভাবেরও হয়।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ঘি মাখা ভাত ডিম দিয়ে খেতে খুব মজা।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ঘিভাত ডিম দিয়ে খেতে খুব মজা।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ মাল বহনকারী গাড়িগুলোতে আগুন ধরিয়ে তারা পালালো।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ মালগাড়িগুলোতে আগুন ধরিয়ে তারা পালালো।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ দুধ মাখা ভাত কাকে খায়।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ দুধভাত কাকে খায়।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ আগে সিংহচিহ্নিত আসনে বসে রাজা দেশ চালাতেন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ আগে সিংহাসনে বসেরাজা দেশ চালাতেন।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ তালে কানা লোককে দিয়ে কিছুই হবে না।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ তালকানা লোককে দিয়ে কিছুই হবে না।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ লোকটি মিশির মতো কালো হয়েও সাদা মনের মানুষ।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ লোকটি মিশকালো হয়েও সাদা মনের মানুষ।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ছয়টি ঋতুর সমাহারের দেশ বাংলাদেশ।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ছয়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ক্ষণে ক্ষণে প্রতিক্ষণে মাকে পরে মনে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ক্ষণে ক্ষণে মাকে পরে মনে। /প্রতিক্ষণে মাকে পরে মনে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ রীতিকে অতিক্রম না করেও যথারীতি সে বড়লোক।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ রীতিকে অতিক্রম না করেও সে বড়লোক।

বিভক্তির মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগঃ

দুটি বিভক্তি না বসিয়েও কিন্তু বক্তব্য অসম্পূর্ণ থাকে না। ‘কে’ একাধিক কারকে ব্যবহৃত হয় বলে একে তির্যক বিভক্তি বলে। তবে যে কারকেই ব্যবহৃত হোক; এটি একবচনের বিভক্তি। বহুবচনজাতীয় শব্দে (দের) ‘কে’ বসে না।

যেমন: তাদেরকে (তাদের) দিয়ে একাজ করিও না। আমাদেরকে (আমাদের) অনেক কষ্ট করে শুটিং করতে হয়েছে। সব পাগোলগুলোকে (পাগলগুলো) দিয়ে ক্লাস নেয়। এক শব্দে দুটি বিভক্তি বসলে শব্দের গুণ হারায়। যেমন: তোমার কথায় বুকেতে (বুকে) আঘাত পাই।
বস্তুবাচক একবচন পদে কোন বিভক্তি (কে, রে) বসে না। যেমন: ঘড়িকে (ঘরি/ঘরিটি) হাতে দাও। বইকে (বই/বইটি/ বইগুলো) পুড়িয়ে ফেলো। এই কলমটাকে (কলম) দিয়ে ভালো লেখা হয়। সংস্কৃত ভাষায় তাহাদিগকে, আমাদিগকে ব্যবহার করা হয় কিন্তু বাংলা ভাষাতে হয় না। দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাসে বস্তু বা প্রাণিবাচক কর্তায় ‘কে’ বসানো হচ্ছে।

যেমন: বইকে পড়া—বইপড়া, গানকে শোনা—গানশোনা, সাপকে ধরা—সাপধরা, মাছকে ধরা—মাছধরা, রথকে দেখা, ভয়কে প্রাপ্ত, কাপড়কে কাঁচা, ভাতকে রাঁধা, নথকে নাড়া, স্বর্গকে প্রাপ্ত ইত্যাদি। কিন্তু আমরা ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এমন ব্যবহার না করে শুধু সমাসে পড়ে থাকি।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ বইকে পুড়িয়ে ফেলো/বইগুলোকে পুড়িয়ে ফেলো।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ বই/বইটি পুড়িয়ে ফেলো (একবচন)/বইগুলো পুড়িয়ে ফেলো (বহুবচন)

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ভিক্ষুকদেরকে ভিক্ষা দাও।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও। (একবচন) /ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দাও। (বহুবচন)

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ আপনি রবীন্দ্রনাথকে পড়ে কী পেলেন?
✅ শুদ্ধবাক্যঃ আপনি রবীন্দ্রনাথ পড়ে কী পেলেন?

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ এ কলমকে দিয়ে কাজ হবে না।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ এ কলমে কাজ হবে না। /এ কলম দিয়ে কাজ হবে না।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ গরুকে দিয়ে শুধু লাঙল না গাড়িও টানা হয়।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ গরু দিয়ে শুধু লাঙল না গাড়িও টানা হয়।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ এই কলমটিকে দিয়ে ভালো লেখা হয়।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ কলমটি দিয়ে ভালো লেখা হয়।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ সাতভাই যুক্তি করে ইউসুফ ফেলিল কুয়ায়।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ সাতভাই যুক্তি করে ইউসুফকে ফেলিল কুয়ায়।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ তাদেরকে দিয়ে একাজ করিও না।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ তাদের দিয়ে একাজ করিও না।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ গেলাসে করে দুধ দাও।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ গেলাসে দুধ দাও।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ তোমার কথায় বুকেতে আঘাত পাই।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ তোমার কথায় বুকে আঘাত পাই।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ক্রিয়ার সঙ্গে যেসব বিভক্তি যুক্ত হয় তাকে ক্রিয়াবিভক্তি বলে/ক্রিয়ার সঙ্গে যেসব বিভক্তি যুক্ত হয় তাদেরকে ক্রিয়াবিভক্তি বলে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ক্রিয়ার সঙ্গে যেসব বিভক্তি যুক্ত হয় তাদের ক্রিয়াবিভক্তি বলে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ঘড়িকে হাতে দাও।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ঘড়ি হাতে দাও /ঘড়িটি হাতে দাও।

প্রত্যয়ের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগঃ

কোন শব্দের সঙ্গে কোন প্রত্যয় যুক্ত হয় তা খেয়াল রেখেই শব্দ তৈরি করতে হয়। ভুল প্রত্যয়ের ব্যবহারের কারণে বানান ভুল হয়ে যায়। আর বানান ভুল হলে বাক্যের অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়। তাই প্রত্যয় ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হয়।

একই শব্দের সঙ্গে দুটি প্রত্যয়চিহ্ন বসে না। বিভক্তি না দেয়ার কারণে যেমন বাক্যের গুণ নষ্ট হয়ে যায় আবার বেশি দিলেও গুণ নষ্ট হয়ে যায়। যেমন: এতটুকু মেয়ে কলেজ পড়ে, তোমার কথায় বুকেতে আঘাত পাই। তার সঙ্গে আমার সখ্যতা (সখ+য-ফলা+ তা) আছে। এটি তার দৈন্যতা।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ তবলাওয়ালা ভালোই তবলা বাজায়।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ তবলচি /তবলাবাদক ভালোই তবলা বাজায়।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ এতটুকু মেয়ে কলেজ পড়ে
✅ শুদ্ধবাক্যঃ এতটুকু মেয়ে কলেজে পড়ে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ দারিদ্র কবি কাজী নজরুল ইসলামকে মহান করেছে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ দারিদ্র্য কবি কাজী নজরুল ইসলামকে মহান করেছে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ এটি দল কোন্দল।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ এটি দলীয় কোন্দল।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ বিকার লোক যে কোন সময় ক্ষতি করতে পারে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ বিকৃত লোক যে কোন সময় ক্ষতি করতে পারে।

উপসর্গের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগঃ

উপসর্গে হাইফেন বসে না। যেমন: উপ-সচিব। ‘অ’ যদি নাবোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাহলে সেই শব্দের শেষে হীন যুক্ত হয় না। যেমন: অসচেতনহীনভাবে, অক্লান্তিহীনভাবে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ শিক্ষা উপ-পরিচাল ও সহ-উপ পরিচালক আজ এই স্কুলে আসবেন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ শিক্ষা উপপরিচালক ও সহউপপরিচালক আজ এই স্কুলে আসবেন।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ফুল দিয়ে তাঁকে সুস্বাগতম জানানো সবার কর্তব্য।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ফুল দিয়ে তাঁকে স্বাগতম জানানো সবার কর্তব্য।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ তিনি নামকরা একটি দৈনিক পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ তিনি নামকরা একটি দৈনিক পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ অক্লান্তি হীনভাবে প্রজন্ম চত্বরে সমায়েত হচ্ছে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ক্লান্তি হীনভাবে প্রজন্ম চত্বরে সমায়েত হচ্ছে।

চিহ্নের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগঃ

০১। সংস্কৃতিতে বিশেষণ ও বিশেষ্য দুটিকেই চিহ্নের আওতায় আনা হয়। যেমন: নর—সুন্দর বালক আর নারী—সুন্দরী বালিকা কিন্তু বাংলাতে বিশেষণকে ঠিক রেখে শুধু বিশেষ্যকে নর বা নারী প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ বাংলায় বিশেষণকে নারী বাচক করার দরকার হয় না। যেমন: সুন্দর বালক ও সুন্দর বালিকা।

০২। সংস্কৃতিতে দুটি বিশেষ্যকেই চিহ্নের আওতায় আনা হয়। যেমন: মেয়েটি পাগলি, আসমা অস্থিরা কিন্তু বাংলাতে দুটি বিশেষ্যের একটিকে নারিচিহ্নের আওতায় আনা হয়। যেমন: মেয়েটি পাগল, আসমা অস্থিরা ইত্যাদি।

০৩। সংস্কৃতিতে ঈ বা ইনি বা নী প্রত্যয়ই একসঙ্গে বসে কিন্তু বাংলায় বসে না। যেমন: অভাগা—অভাগী—অভাগিনী, কাঙাল—কাঙালী—কাঙালিনী, ননদ—ননদী—ননদিনী, গোয়াল—গোয়ালী—গোয়ালিনী কিন্তু বাংলায় অভাগী, ননদী, মায়াবী, কাঙালী, গোয়ালী, বাঘিনী। তবে ক্লীববাচক শব্দে নী প্রত্যয় যুক্ত করে নারী বাচক শব্দ তৈরি করতে হয়। যেমন: মেধাবিনী, দুখিনী, যোগিনী, মায়াবিনী ইত্যাদি।

০৪। সংস্কৃতিতে ক্ষুদ্রার্থবাচক কিছু ক্লীববাচক শব্দকে নর বা নারী বাচক করা যায় যা বাংলাতে সঠিক নয়। যেমন: নাটক—নাটিকা, পুস্তক—পুস্তিকা, গীতি—গীতিকা, উপন্যাস—উপন্যাসিকা, ইত্যাদি।

০৫। সংস্কৃতিতে নরবাচক শব্দ—বৃক্ষ, নারী বাচক শব্দ—লতার ক্লীববাচক শব্দ—জল আবার হিন্দিতে নরবাচক শব্দ—রুটি আর নারী বাচক শব্দ—দই। এবার ভাবুন কত কঠিন।

০৬। বাক্য দেখে নির্ণয় করতে হয় কোনটি নর আর কোনটি নারী বাচক শব্দ। যেমন: গরু গাড়ি টানে। গরু দুধ দেয়। সে/তিনি গর্ভবতী, সে কৃষিকাজ করে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ রহিমা খুব সুন্দরী।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ রহিমা খুব সুন্দর।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ সেলিনা হোসেন একজন বিদ্বান লেখিকা।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ সেলিনা হোসেন একজন বিদ্বান লেখক। /সেলিনা হোসেন একজন বিদুষী লেখিকা।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ তার মা খুব মহান নেতা ছিলেন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ তার মা খুব মহিয়সী নেতা ছিলেন।

পক্ষের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগঃ

প্রথমপক্ষ যদি অন্যপক্ষের সঙ্গে একই বাক্যে ব্যবহৃত হয় তাহলে ক্রিয়া প্রথমপক্ষ অনুসারে হয়। একশেষ হলে নিয়ম অনুসারে প্রথমে সে, তুমি ও আমি বসে আর ক্রিয়া প্রথমপক্ষ অনুসারে হয়।

আগে কবিতার বাক্যের ক্ষেত্রে কবিগণ পক্ষ অনুসারে ক্রিয়ার ব্যবহার ঠিকরাখেন নাই। যেমন: হাসঁগুলো যায় ভাসি। বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই। কারণ সংস্কৃত ‘ভাসিয়া’ থেকে ‘ভাসি’ চলিত হয়েছে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ এ ব্যাপারে আমার অর্থাৎ হাসানের ভুল হবে না।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ এ ব্যাপারে আমার অর্থাৎ হাসানের ভুল হয় না।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ আমি অর্থাৎ হাসান জেনে শুনে ভুল করি না।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ আমি অর্থাৎ হাসান জেনে শুনে ভুল করে না।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ আমি, সে আর তুমি কাজটি করব।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ সে, তুমি আর আমি কাজটি করব।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ আপনি বা হুজুর যদি বলেন, তাহলে (আমি) যাই।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ আপনি বা হুজুর যদি বলেন, তাহলে (আমি) যাব।

কারকের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগঃ

বস্তুর প্রাণিবাচক শব্দে ‘কে’ বসে না। ব্যক্তির নামের সঙ্গেও ‘কে’ বসে না।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ পাহাড়কে নাড়ায় সাধ্য কার।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ পাহাড় নাড়ায় সাধ্য কার।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ সাপুড়ে সাপকে খেলায়।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ সাপুড়ে সাপ খেলায়।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ আপনি তো ছুরিতে মানুষ মারেন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ আপনি তো ছুরি দিয়ে মানুষ মারেন।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ আপনি তো গরিবদেরকে সাহায্য করেন না।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ আপনি তো গরিবদের সাহায্য করেন না। /আপনি তো গরিবকে সাহায্য করেন না।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ধর্মের কল বাতাসেতে নড়ে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ একসময় আমের কাননে মিটিং বসেছিল।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ একসময় আম্রকাননে মিটিং বসেছিল। /একসময় আমের বাগানে মিটিং বসেছিল।

বিপরীত শব্দের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগঃ

সরাসরি ‘না’ শব্দটি ব্যবহার না করে বিপরীত শব্দ ব্যবহার করে বাক্যের সৌন্দর্য বাড়ানো যায়। যেমন : দুদিন ধরে ছেলেটির কোন খোঁজ নাই। আর দুদিন ধরে ছেলেটি নিখোঁজ।

সব শব্দের পূর্বে উপসর্গ যোগে বিপরীত শব্দ গঠন করা যায় না। অনেকেই ‘অ’ যোগে বিপরীত শব্দ তৈরি করে থাকেন। যেমন: সফলতা—অসফলতা, মূর্খ—অমূর্খ, ভালো—অভালো।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ লোকজন তার প্রতিকূলে নাই।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ লোকজন তার অনুকূলে নাই।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ লোকটি কায়দায় নাই।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ লোকটি বেকায়দায় আছে।

সমোচ্চারিত শব্দের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগঃ

উচ্চারণের দিক থেকে এক হলেও অর্থের দিক থেকে ভিন্ন। বাক্যের অর্থ ঠিক রাখতে সমার্থক শব্দের সঠিক ব্যবহার জরুরি।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ সে ভুড়ি ভুড়ি খেয়ে ভুরিটি বাড়িয়েছে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ সে ভুরি ভুরি খেয়ে ভুঁড়িটি বাড়িয়েছে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ তাড়া আমরাতলায় বসে আমরা খাওয়ার সময় মালির তারা খেয়েছে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ তারা আমড়াতলায় বসে আমড়া খাওয়ার সময় মালির তাড়া খেয়েছে।

শব্দদ্বিত্বের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগঃ

বিভিন্ন প্রকার শব্দ বা পদ দুবার ব্যবহার করে শব্দ বানাতে পারি। কিন্তু অর্থের দিকে খেয়াল করতে হয়। যেমন: ফলাফল শব্দটি ঠিক ব্যবহার কিন্তু এর প্রতিশব্দ হিসেবে লেখা হয় ফলশ্রুতিতে’ তাহলে শব্দটি হবে ভুল। কারণ ‘ফলশ্রুতি’ অর্থ ‘শ্রবণ’ কোন বিষয়ের ফল নয়। ‘ভাষাভাষী’ অর্থ কোন একটি ভাষা ব্যবহারকারী।

তাই ভাষাভাষীর পূর্বে কোন ভাষার নাম উল্লেখ করে লিখলে তা হবে ভুল। যেমন: বাংলা ভাষাভাষী। এমন কিছু দ্বিত্বশব্দ তৈরি করা হয় যা ভুল। যেমন: ভেদাভেদ, গুণাগুণ ইত্যাদি। এদের মধ্যে ভালোমন্দ দুটিই থাকে। যেমন: ভেদ+অভেদ বা গুণ+অগুণ। এদের অপপ্রয়োগ আজ প্রবলভাবে দেখা দিচ্ছে। বলা হচ্ছে ‘ভেদাভেদ ভুলে গেছে’ যা ভুল। আবার বলা হচ্ছে ‘আমাদের পণ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা সচেতন’।
শব্দদ্বিত্ব কোন সময় একবচন আবার কোন সময় বহুবচন প্রকাশ পায়। এরা আলাদা বসে আবার হাইফেনযুক্ত হয়ে বা একশব্দেও বসতে পারে। তাই বাক্যে ব্যবহারের সময় এদিকটি খেয়াল রাখতে হয়।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ অশ্রুজলে তার কপল ভিজে গেছে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ অশ্রুতে তার কপল ভিজে গেছে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ঘামজলে তার শার্ট ভিজে গেছে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ঘামে তার শার্ট ভিজে গেছে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ঘরটি ছিমছিমে অন্ধকার।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ঘরটি ঘুটঘুটে অন্ধকার।

বাক্যের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগঃ

বিভিন্ন নিয়ম অর্থাৎ সন্ধি, উপসর্গ,  সমাস, প্রত্যয় ইত্যাদি দিয়ে শব্দ বানানো যায়। কিন্তু এই বানানো শব্দ পাশাপাশি বসালেই বাক্য হয় না। কিছু গঠন অনুসরণ করেই একটি সার্থক বাক্য তৈরি করা যায়। সার্থক বাক্যে গুণরক্ষা করে বাক্য বানাতে হয়।

বাক্যের অর্থ ঠিক না থাকলে বাক্য গুণহীন হয়ে যায়। আবার যতির ভুল ব্যবহারের কারণেও বাক্যের অর্থের হেরফের হয়ে যায়।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ সকল দৈন্যতা দূর হয়ে যাক।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ সকল দৈন্য দূর হয়ে যাক। সকল দীনতা দূর হয়ে যাক।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ পরবর্তীতে আপনি আসবেন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ পরবর্তিকালে /পরবর্তী সময়ে আপনি আসবেন।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ সেখানে গেলে তুমি অপমান হবে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ সেখানে গেলে তুমি অপমানিত হবে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ আমি অপমান হয়েছি।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ আমি অপমানিত হয়েছি।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ সত্য প্রমাণ হোক।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ সত্য প্রমাণিত হোক।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ সূর্য উদয় হয়নি।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ সূর্য উদিত হয়নি।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ তার কথার মাধুর্যতা নাই।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ তার কথার মাধুর্য/মধুরতা নাই।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ এটি অপক্ক হাতের কাজ।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ এটি অপটু হাতের কাজ।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ রাধা দেখতে খুব সুন্দরী ছিল।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ রাধা দেখতে খুব সুন্দর ছিল।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ স্বল্পবিদ্যা ভয়ংকরী।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ অভাবে চরিত্র নষ্ট।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ অভাবে স্বভাব নষ্ট।

প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ : বাংলা ব্যাকরণ

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ বিদ্বান মূর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ বিদ্বান মূর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ সৎ চরিত্রবান লোক সবার কাছে প্রিয়।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ চরিত্রবান লোক সবার কাছে প্রিয়।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ অল্পদিনের মধ্যে তিনি আরোগ্য হলেন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ অল্পদিনের মধ্যে তিনি আরোগ্য লাভ করলেন।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ মাতাহীন শিশুর অনেক দুঃখ।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ মাতৃহীন শিশুর অনেক দুঃখ।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ শে ভাগ্যবতী মহিলা।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ শে ভাগ্যবতী।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ মিলাদে গোলাপজলের পানি ছিটাও।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ মিলাদে গোলাপজল ছিটাও।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ বইটি তার জরুরি প্রয়োজন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ বইটি তার (খুব) প্রয়োজন।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ছেলেটি শুধুমাত্র /কেবলমাত্র ১০টি টাকার জন্য মারামারি করল।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ছেলেটি শুধু /মাত্র /কেবল ১০টি টাকার জন্য মারামারি করল।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ সবাই বাবা-মার সুস্বাস্থ্য কামনা করে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ সবাই বাবা-মার সুস্থতা কামনা করে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ৫ বছর সময়কাল ধরে তারা জনগনকে সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ৫ বছর ধরে তারা জনগনকে সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ আপনারাই প্রথম তাদেরকে সুস্বাগতম জানালেন।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ আপনারাই প্রথম তাদের স্বাগত জানালেন।

❌ অশুদ্ধবাক্যঃ ভারত ব্রিটিশদের অধীনস্থ ছিল বলেই তারা যুদ্ধ করেছিল।
✅ শুদ্ধবাক্যঃ ভারত ব্রিটিশদের অধীনে ছিল বলেই তারা যুদ্ধ করেছিল।

০৮। বিগত সালের প্রশ্নপত্র :

০১। কোন বাক্যটি শুদ্ধ? (২৫তম বিসিএস)

ক. তাহার জীবন সংশয়পূর্ন
খ. তাহার জীবন সংশয়ভরা
গ. তাহার জীবন সংশয়াপূর্ণ
ঘ. তাহার জীবন সংশয়ময়
✅ উত্তরঃ গ


০২। শুদ্ধ বাক্যটি চিহ্নিত করুন- (১২তম বিসিএস)

ক. বিদ্যান বক্তিগণ দরিদ্রের শিকার হন
খ. বিদ্যান বক্তিগণ দরিদ্রেতার স্বীকার হন
গ. বিদ্যান বক্তিগণ দারিদ্র্যের শিকার হন
ঘ. বিদ্যান বক্তিগণ দারিদ্রেতার স্বীকার হন
✅ উত্তরঃ গ.


০৩। কোনটি শুদ্ধ বাক্য? ১১ তম বিসিএস)

ক. একটা গোপনীয় কথা বলি
খ. একটি গোপণ কথা বলি
গ. একটি গোপন কথা বলি
ঘ. একটি গুপ্ত কথা বলি
✅ উত্তরঃ ক.


০৪। শুদ্ধ বাক্য কোনটি? (১১ তম বিসিএস)

ক. দুর্বলবশত অনাথিনী বসে পড়ল
খ. দুর্বলতাবশত অনাথা বসে পড়ল
গ. দুর্বলতাবশতঃ অনাথিনী বসে পড়ল
ঘ. দুর্বলবশত অনাথা বসে পড়ল
✅ উত্তরঃ খ.


০৫। কোনটি শুদ্ধ বাক্য? (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক ২০১৩)

ক. দারিদ্র্য বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা
খ. দারিদ্র্যতা বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা
গ. দারিদ্রতা বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা
ঘ. দরিদ্র্য বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা
✅ উত্তরঃ ক.

প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ : বাংলা ব্যাকরণ


০৬। কোন বাক্যটি শুদ্ধ তা নির্দেশ করুন।

ক. কীর্তিবাস বাঙলা রামায়ন লিখিয়াছেন
খ. কীর্তিবাস বাংলা রামায়ন লিখিয়াছেন
গ. কৃত্তিবাস বাঙলা রামায়ণ লিখিয়াছেন
ঘ. কৃত্তিবাস বাংলা রামায়ণ লিখিয়াছেন
✅ উত্তরঃ ঘ


০৭। শুদ্ধ বাক্যটি নির্ণয় করুন।

ক. দারিদ্র্য আমাদের প্রধান সমস্যা
খ. দারিদ্র্যতা আমাদের প্রধান সমস্যা
গ. দরিদ্রতা আমাদের প্রধান সমস্যা
ঘ. দারিদ্র্যতাই প্রধান সমস্যা
✅ উত্তরঃ ক


০৮। শুদ্ধ বাক্যটি নির্দেশ করুন।

ক. আপনি সপরিবার আমন্ত্রিত
খ. আপনি স্বপরিবার আমন্ত্রিত
গ. আপনি সপরিবারে আমন্ত্রিত
ঘ. আপনি স্বপরিবারে আমন্ত্রিত
✅ উত্তরঃ গ.


০৯। শুদ্ধ রূপটি দেখান-

ক. সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
খ. সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
গ. সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
ঘ. সাহিত্য ও সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
✅ উত্তরঃ ক.


১০। শুদ্ধ বাক্যটি নির্দেশ করুন-

ক. বিরাট গরু-ছাগলের হাট
খ. বিরাট গরু ও বিরাট ছাগলের হাট
গ. বিরাট গবাদি পশুর হাট
ঘ. গরু-ছাগলের বিরাট হাট
✅ উত্তরঃ ঘ

প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ : বাংলা ব্যাকরণ

১০। শুদ্ধ বাক্যটি নির্দেশ করুন-

ক. দৈন্যতা প্রশংসানীয় নয়
খ. দীনতা প্রশংসনীয় নয়
গ. দৈন্যতা অপ্রশংসানীয়
ঘ. দৈন্যতা নিন্দনীয়
✅ উত্তরঃ খ


১১। ‘বিদ্যান মুর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর” বাক্যটির শুদ্ধরূপ কোনটি?

ক. বিদ্যান মূর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ
খ. বিদ্বান মূর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ
গ. বিদ্বান মুর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ
ঘ. বিদ্বান মুর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর
✅ উত্তরঃ খ

১২। কোন বাক্যটি শুদ্ধ?

ক. ৫ জন ছাত্ররা স্কুলে যায়
খ. ৫ জন ছাত্রগণ স্কুলে যায়
গ. ৫ জন ছাত্র স্কুলে যায়
✅ উত্তরঃ গ


১৩। কোন বাক্যটি শুদ্ধ?

ক. আমি সন্তোষ হলাম
খ. আমি সন্তুষ্ট হলাম
গ. আমি সন্তূষ্ট হলাম
ঘ. আমি সন্তোষ্ট হইলাম
✅ উত্তরঃ খ


১৪। শুদ্ধ বাক্য কোনটি?

ক. দুর্বলবশত অনাথিনী বসে পড়ল
খ. দুর্বলতাবশত অনাথিনী বসে পড়ল
গ. দুর্বলবশত অনাথা বসে পড়ল
ঘ. দুর্বলতাবশত অনাথা বসে পড়ল
✅ উত্তরঃ ঘ


১৫। কোন বাক্যটি শুদ্ধ?

ক. সর্বদা পরিস্কার থাকিবে
খ. সর্বদা পরিস্কৃত থাকিবে
গ. সর্বদা পরিস্কারময় থাকিবে
ঘ. সর্বদা পরিস্কৃতময় থাকিবে
ঙ. কোনোটিই নয়
✅ উত্তরঃ ঙ

১৬. কোন বাক্যটি শুদ্ধ?

ক. তুমি কী ঢাকা যাবে?
খ. তুমি কি ঢাকা যাবে?
গ. তোমরা কী ঢাকা যাবে?
ঘ. তোমরা কী ঢাকায় যাবে?
ঙ. কোনটি নয়
✅ উত্তরঃ খ

প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ : বাংলা ব্যাকরণ


১৭। কোন বাক্যটি শুদ্ধ?

ক. রহিমা পাগল হয়ে গেছে
খ. রাহিমা পাগলি হয়ে গেছে
গ. রহিমা পাগলিনী হয়ে গেছে
ঘ. রহিমা পাগলী হয়ে গেছে
ঙ. কোনটি নয়
✅ উত্তরঃ ক


১৮। সঠিক বাক্য কোনটি-

ক. মনোরম উদানে ভ্রমন দূরাকাঙ্খা
খ. মনরম উদ্যাণে ভ্রমন দুরাকাঙ্খা
গ. মনরম উদ্যাণে ভ্রমন দূরাকাংখা
ঘ.মনোরম উদ্যানে ভ্রমণ দূরাকাংখা
✅ উত্তরঃ সঠিক উত্তর কোনোটিই নয়

১৯। নিচের কোন বাক্যটি সঠিক?

ক. আমি এ ঘটনা চাক্ষুস দেখেছি
খ. আমি এ ঘটনা চাক্ষুস প্রত্যক্ষ করেছি
গ. আমি এ ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছি
ঘ. আমি এ ঘটনা স্বচক্ষে দেখিয়াছি
✅ উত্তরঃ ক

আরো পড়ুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You're currently offline !!

error: Content is protected !!