১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের পটভূমি | ভারতীয় উপমহাদেশ ব্রিটিশ শাসনামলে বিংশ শতকের শুরুতে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায় দুটি পৃথক প্লাটফরমে ভাগ হয়ে যায়। ১৯৩৪ সালে মুসলিম লীগ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে সভাপতি করলো, কেবল সভাপতি নয়, সারা জীবনের জন্য স্থায়ী হলেন তিনি ওই পদে।
গান্ধীর সঙ্গে এখানেও তার পার্থক্য, গান্ধী কখনো কংগ্রেসের সভাপতি হন নি। ওই নতুন ধারায় রাজনীতি শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই যে তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ ঘটেছিল তা নয়, ১৯৩৬-এ জিন্নাহ কলকাতায় এসেছিলেন, দলের কাজে। হাওড়া স্টেশনে ইস্পাহানীরা দুই ভাইসহ তিনজন মাত্র লোক উপস্থিত ছিলেন তাঁকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য। সেই জিল্লাহই বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ. কে. ফজলুল হককে দিয়ে চল্লিশ সালে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করিয়ে নিয়েছিলেন।
১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের পটভূমি :
প্রস্তাবটি রচনার সময় ফজলুল হক উপস্থিত ছিলেন না, সেটি তিনি পড়েন মঞ্চে উঠে এবং পড়ে শোনান গগনবিদারী করতালির মধ্যে। এর আগে ১৯৩৭ সালে ফজলুল হককে মুসলিম লীগের সম্মেলন থেকেই শেরে বাংলা উপাধি দেয়া হয়েছিল লক্ষ্ণৌতে। জিল্লাহ তখন কায়েদে আজম, গান্ধীও তাঁকে ওই নামে সম্বোধন করেন, এ কায়েদে আজম, শ্রেষ্ঠ নেতা, শেরে বাংলাকে মুসলিম লীগ থেকে বহিষ্কার করে দেন লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের অল্প পরেই। বৃটিশ আমলে দাবিটা ছিল ডমিনিয়ন স্ট্যাটাসের, অর্থাৎ সাম্রাজ্যের অধীনে স্বায়ত্তশাসনের। পরে শাসক বৃটিশ যখন চলে গেল তখনও ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই কমনওয়েলথের মধ্যে রয়ে গেল স্বেচ্ছায়।
পাকিস্তান আমলে পূর্ববাংলার মানুষের প্রাথমিক দাবিটা ছিল স্বায়ত্তশাসনেরই, তার বেশি নয়। এ স্বায়ত্তশাসনের একটি যৌক্তিক কাঠামোও ছিল, সেটি হলো লাহোর প্রস্তাব। ১৯৪০ সালে লাহোরে এ. কে. ফজলুল হক যে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন, যে প্রস্তাব পরে পাকিস্তান প্রস্তাব নামে পরিচিত হয় তাতে একটি নয়, একাধিক রাষ্ট্রের কথা ছিল।
১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের পটভূমি | বাঙালি মুসলমান ধরেই নিয়েছিল অন্তত দু’টি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হবে, যদি হয়। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান। বাস্তবে সেটা ঘটে নি। এককেন্দ্রিক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার কেন্দ্র পশ্চিমে এবং যার অভ্যন্তরে বাঙালি নির্যাতিত হয় অবাঙালির হাতে। যদিও বাঙালির সংখ্যা ছিল শতকরা ৫৬ জন, অবাঙালি ৪৪ জন। বাঙালি তাই দাবি তুললো লাহোর প্রস্তাবে ফিরে যেতে হবে, পূর্ব বাংলাকে স্বায়ত্তশাসন দেয়া চাই। ব্রিটিশ-ভারতের রাজনৈতিক এবং শাসনতান্ত্রিক অগ্রগতির ইতিহাসে ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চের ঐতিহাসিক ‘লাহোর প্রস্তাব’ এক যুগান্তকারী ঘটনা।
এ দিন নিখিল ভারত মুসলিম লীগের ঐতিহাসিক লাহোর অধিবেশনে ভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা নিয়ে মুসলমানদের জন্য পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানিয়ে এক প্রস্তাব গৃহীত হয়। লাহোর অধিবেশনে এ প্রস্তাব গৃহীত হয় বলে একে লাহোর প্রস্তাব বলা হয়। উল্লেখ্য, বাংলার তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক ঐ অধিবেশনে প্রস্তাবটি পেশ করেন। এ প্রস্তাবই ভারতীয় শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের জন্য মুসলিম লীগের প্রথম গঠনমূলক প্রস্তাব।
১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ সম্মেলনে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির দাবি জানিয়ে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক যে প্রস্তাব পেশ করেন তাই হচ্ছে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব। কিন্তু আসল সত্য হলো তিনি পাকিস্তান প্রস্তাব তোলেন নাই। তিনি ঐ প্রস্তাব পাঠ করেছিলেন মাত্র। এর বেশি কিছু মাত্র নয়। তিনি (ফজলুল হক) জানতেন না যে ঐ প্রস্তাবে কি আছে। যে কারণে তিনি শেরে বাংলা’ হয়েছিলেন। শেরে বাংলা উপাধিটা তাকে দেওয়া হয়েছিল লখনৌ কনফারেন্সে। কংগ্রেসের ভুল থেকেই জন্ম নিল ১৯৪০-এর পাকিস্তান প্রস্তাব।
আরো পড়ুুন:
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাঃ দ্বিতীয় পর্ব
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাঃ প্রথম পর্ব
- ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
- বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস
- মৌর্য বংশ – প্রাক সুলতানী আমল
- মুঘল আমল – সাধারন জ্ঞান
- সুলতানী আমল – মুসলিম রাজত্ব
- মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য এবং মুসলিম কবি ও শাসকদের অবদান
- পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিবাহিনীর পরিবর্তে কেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে?
- বিসিএস ভাইবাতে স্যুট পরা যাবে কিনা ?
- বঙ্গবন্ধুকে কেন রাজনীতির মহাকবি বলা হয় ?
- বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নোত্তর
- বাংলা ব্যাকরণ
- বাংলাদেশের সংবিধান
- কে কাকে শপথ পড়ান ??
- বিখ্যাত সাহিত্যিকদের প্রথম গ্রন্থ
- নদী সংশ্লিষ্ট স্থাপনা
- বাংলাদেশ সংবিধান বিস্তারিত