ভাষা আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে ১৯৫৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমেই বাঙালি জাতিয়তাবাদের প্রথম বিজয় সূচিত হয়। ১৯৫৪ সালের এই নির্বাচনের মাধ্যমেই পাকিস্তানের তদানীন্তন মুসলিমলীগের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে বাংলার অধিকার সচেতন জনতা যুক্তফ্রন্টের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলে এবং বাংলার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। আজকে আমরা যুক্তফ্রন্ট গঠনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোচনা করবো। মূলত অনেকগুলো কারণে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। নিম্নে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন:
পূর্ব-বাংলার জনগণ ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ফলে আরো আত্বসচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠে এবং মুসলীম লীগের বিরোধী হয়ে উঠে। স্বভাবতই মুসলিম লীগের বিরোধীতা যুক্তফ্রন্ট গঠনে সহায়তা করে।
পূর্ব-বাংলার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ:
ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্তির পর থেকেই পশ্চিম-পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীরা পূর্ব-বাংলার জনগণের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করে। এছাড়া মুসলীমলীগের চাটুকারিতা বাংলার জনগণের মনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। যেটা ছিল ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে একটি।
কাগজ, লবণ ও পাটশিল্পে অরাজকতা:
পূর্ব-পাকিস্তানে উৎপাদিত সব কাগজ পশ্চিম পাকিস্তানে অবাধে পাঁচার হয়ে যেত, ফলে পূর্ব পাকিস্তানে কাগজের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকে। পূর্ব-পাকিস্তানে তীব্র লবণ সংকট দেখা যায় এবং বাংলার প্রধান অর্থকরী ফসল পাটশিল্পে চরম অরাজকতা সৃষ্টি হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে তৎকালীন বিরোধীদলগুলো যেমন: আওয়ামীলীগ, নেজামে ইসলাম, কৃষক-শ্রমিক পার্টি এবং গণতন্ত্রী পার্টি নিয়ে ‘যুক্তফ্রন্ট‘ গঠিত হয়।
অনিয়মিত নির্বাচন:
ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্তির পর পাকিস্তানে ১৯৫১ সালে নির্বাচনের কথা থাকলেও কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব-বাংলার আইনসভার মেয়াদ বৃদ্ধি করার ফলে ১৯৫৪ সালের আগে কোনো নির্বাচন সম্ভব হয়নি। এরকম অনিয়মিত নির্বাচন নিয়ে মুসলিম লীগের টালবাহানার বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়।
আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন:
পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণের কাছ থেকে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নীতিতে বিশ্বাসী ছিল। তাই পূর্ব পাকিস্তানে স্বায়ত্তশাসন বিকশিত হতে পারেনি। অথচ পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো স্বায়ত্বশাসন প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ ছিল। তাই ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে যুক্তফ্রন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়।
পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার্থে:
১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্তির পর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীরা পূর্ব-পাকিস্তানকে তাদের একটি উপনিবেশে পরিণত করার জন্য পূর্ব-পাকিস্তান থেকে পশ্চিম-পাকিস্তানে অবাধে সবকিছু পাঁচার করা শুরু করে। এভাবে পূর্ব-পাকিস্তানকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার পরিকল্পনাকে নসাৎ করার জন্য যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়।
তথ্য সংগ্রহ করে লিখেছেন: Al-Amin Islam
আরো পড়ুন:
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
- বিসিএস প্রিলি সূচিপত্র (সকল বিষয়, সকল অধ্যায়)
- ছয়দফা দাবি, বাঙালির ম্যাগনাকার্টা
- অপারেশন সার্চলাইট গণহত্যা-১৯৭১
- বিসিএস মডেল টেস্ট: অনলাইন এক্সাম
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস ইবুক