ছয় দফা দাবি, বাঙালির ম্যাগনাকার্টা

১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে ভারত পাকিস্তান স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হলেও স্বাধীন হয়নি তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশ। ভারত পাকিস্তান বিভক্ত হলে পূর্বপাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের অন্তভূক্ত হয়ে থাকে। বাঙালীদের উপর ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের বৈষম্য, শোষণ-নিপীড়ন, জোড়-জুলুম, অন্যায়-অত্যাচার শেষ হয়ে গেলে পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালীদের উপর চরম বৈষম্য, অন্যায়-অত্যাচার শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবী, অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদেরা এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে এবং ১৯৬৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী আওয়ামীলীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ছয়দফা দাবি আদায়ের লক্ষে কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়।

পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ‘আমাদের বাঁচার দাবি: ৬-দফা কর্মসূচি’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রচার করা হয়। ক্রমান্বয়ে ছয় দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন গড়ে উঠে। আর তাই ছয় দফা দাবিকে বাঙালী জাতির মুক্তির সনদ বলা হয় এবং এটিকে ইংল্যান্ডের ”রাজা জন” কতৃক স্বীকৃত ম্যাগনাকার্টার সাথে তুলনা করা হয়। নিম্নে ছয় দফার দাবিগুলো তুলে ধরা হলোঃ

এখনো amarStudy অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড না করে থাকলে গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করতে এখানে যানঃ Download Now. অ্যাপটি বিসিএস’সহ প্রায় সব রকমের চাকুরির প্রস্তুতির সহায়ক।

প্রথম দফাঃ শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি

১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তান হবে যুক্তরাষ্ট্রীয় ও সংসদীয় পদ্ধতীর সরকার। আইন পরিষদ নির্বাচিত হবে জনগণের সরাসরি ভোটে এবং আইন পরিষদ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী থাকবে।


দ্বিতীয় দফাঃ কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা

কেন্দীয় সরকারের ক্ষমতা শুধু প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক নীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে এবং বাকি সকল ক্ষমতা অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে বহাল থাকবে।


তৃতীয় দফাঃ মুদ্রা ও অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা

পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে যাতে মুদ্রা পাচার না হয় এজন্য পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সহজে বিনিময়যোগ্য দুটি পৃথক মুদ্রা ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং মুদ্রার পরিচালনা ক্ষমতা আঞ্চলিক সরকারের হাতে ন্যাস্ত থাকবে। অথবা এর বিকল্প হিসেবে একটি মুদ্রা ব্যবস্থা চালু থাকবে এই শর্তে যে, একটি কেন্দীয় রিজার্ভ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যার অধীনে দুই অঞ্চলে দুইটি রিজার্ভ ব্যাংক থাকবে এবং মূলধন পাচার বন্ধ করার জন্য কার্যকরী সাংবিধানিক ব্যবস্থা থাকতে হবে।


চতুর্থ দফাঃ কর, রাজস্ব ও শুল্ক বিষয়ক ক্ষমতা

অঙ্গরাজ্যগুলির কর ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। দুই অঞ্চলের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পৃথক হিসাব থাকবে এবং অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা রাজ্যের হাতে থাকবে। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গ-রাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের অঙ্গরাজ্যগুলির করের শতকরা একই হারে আদায়কৃত অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠিত হবে।


পঞ্চম দফাঃ বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা

০১। অঙ্গরাজ্যগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পৃথক হিসাব থাকবে।

০২। অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলির হাতে থাকবে।

০৩। কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অঙ্গরাজ্যগুলিই মিটাবে।

০৪। রাজ্যগুলির মধ্যে দেশিয় পণ্য বিনিময়ে কোনো শুল্ক ধার্য করা হবে না।

০৫। রাজ্যগুলোর হতে অন্যকোনো রাষ্ট্রের সাথে আন্তজার্তিক বাণিজ্য করার ক্ষমতা থাকবে।

০৬। শাসনতন্ত্রের অন্তভূক্ত অঙ্গরাজ্যগুলো বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি প্রেরণ করতে পারবে।

০৭। অঙ্গরাজ্যগুলোর নিজেদের প্রয়োজনে বানিজ্যিক চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে।


ষষ্ঠ দফাঃ আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন সংক্রান্ত ক্ষমতা

আঞ্চলিক সংহতি ও প্রতিরক্ষার জন্য অঙ্গরাজ্যগুলিতে আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন করার ক্ষমতা দিতে হবে। কেন্দ্রীয় নৌবাহিনীর সদর দপ্তর পূর্ব পাকিস্তানে তথা বর্তমান বাংলাদেশে স্থাপন করতে হবে এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অস্ত্র কারখানা স্থাপন করতে হবে।


আরো পড়ুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You're currently offline !!

error: Content is protected !!