পাকিস্তানের তৎকালীন রাজনৈতিক ইতিহাসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তাদের অধিকার ও দাবি আদায়ের জন্য একের পর এক আন্দোলন চালিয়ে যায়। এগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ছয়দফা দাবি আদায়ে বাঙালিরা ঔক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকে। বাঙালির সকল ন্যায্য দাবি ও অধিকারকে দমন করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন ষড়যস্ত্রমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেন। তার মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা অন্যতম। নিম্নে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কারণসমূহ আলোচনা করা হলোঃ
বিরোধী দল দমন:
মূলত শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক অস্তিত্ব ধ্বংস করে বিরোধী দল দমন করাই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়াও ছয়দফা দাবি ভিত্তিক আন্দোলনের ভিত্তি নষ্ট করে দেওয়ার জন্য আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়।
আইয়ুব সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ:
স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের ক্ষমতা নড়বড়ে করে দেয় পূর্ব পাকিস্তানের ছয়দফা ভিত্তিক গণআন্দোলন। তাই আইয়ুব সরকারের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আগরতলা যড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়।
ছয় দফা আন্দোলন দমন:
শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি পেশ করে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে সফর করে ছয়দফা দাবির গুরুত্ব সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরেন। ফলে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে ছয়দফা আন্দোলনের জনসমর্থন বেড়ে যায়। এটি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীরা মেনে নিতে পারেনি। তারা ছয়দফা দাবিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও পাকিস্তান ভঙ্গনের দাবি বলে অভিহিত করেন। তাই তারা ছয়দফা দাবি ভিত্তিক আন্দোলন দমন করার জন্য আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করেন।
পাকিস্তানের ইতিহাসে আগরতলা যড়যন্ত্র মামলা একটি ঘৃণ্য, জঘন্যতম, প্রতারণামূলক মিথ্যা মামলা। কিন্তু তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের গণআন্দোলনের মুখে সরকার আগরতলা যড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।