পাবলিক সার্ভিস কমিশনের গঠন | একটি প্রশাসন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ। আর এ দক্ষ জনশক্তি সরকারিভাবে নিয়োগ করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশেই সরকারি একটি সংগঠন তথা প্রশাসন থাকে। তেমনি বাংলাদেশেও একটি প্রশাসন রয়েছে যা ‘পাবলিক সার্ভিস কমিশন’ বা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নামে পরিচিত।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিকাশ:
১৯১৯ সালে ভারত শাসন আইন এবং ১৯২৪ সালে ব্রিটিশ ভারতের লী. কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ ভারতে সর্বপ্রথম ‘Central Public Service Commission’ নামে একটি কমিশন গঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হলে P.S.C. of Pakistan গঠিত হয়। এরপর
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর অনুরূপ ধাঁচেই ‘Bangladesh Public Service Commission’ গঠিত হয়।
কমিশন-১ এবং কমিশন-২ নামে ১৯৭২ সালের ৯মে রাষ্ট্রপতির আদেশ বলে। ১৯৭৭ সালে ২১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির ৫৭নং অধ্যাদেশ বলে দুটি কমিশন একত্রিত হয়ে ‘Bangladesh Public Service Commission’ নামে একক কর্মকমিশন গঠিত হয় যা আজও কার্যকর রয়েছে।
বাংলাদেশের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের গঠন :
বাংলাদেশে সংবিধানের ১৩৭নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে একজন সভাপতি ও আইনের দ্বারা যেরূপ নির্ধারিত হবে সেরূপ অন্যান্য সদস্যকে নিয়ে প্রত্যেক কমিশন গঠিত হবে। রাষ্ট্রপতির ৫৭নং আদেশ বলে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের সদস্যসংখ্যা সভাপতিসহ অন্তত ৬জন বা তার ঊর্ধ্বে ১৫জন নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের বিভিন্ন পদে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সংখ্যা হলোঃ
০১। সভাপতিঃ ১ জন।
০২। সদস্যঃ ১১ জন।
০৩। সচিবঃ ১ জন।
০৪। উপসচিবঃ ১ জন।
০৫। পরিচালকঃ ২ জন।
০৬। উপ-পরিচালকঃ ৫ জন।
০৭। সহকারি পরিচালকঃ ০ জন।
০৮। মনস্তত্ত্ববিঃ ১০ জন।
০৯। গবেষণা কর্মকতাঃ ১ জন।
১০। এছাড়াও বিভিন্ন পদে ২৭১ জন সহকারী কর্মকর্তা, করণিক ও অন্যান্য কর্মচারী রয়েছে।
সদস্যদের নিয়োগ পদ্ধতি:
সংবিধানের ১৩৮(১) অনুযায়ী চেয়ারম্যানসহ P.S.C সকল সদস্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সরাসরি নিয়োগ লাভ করেন। নিয়মানুযায়ী চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য সদস্যদের কমপক্ষে ২০ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। তাদের মেয়াদকাল ৫ বছর। তবে ৫ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বে যদি তাদের বয়স ৬২ বছর পূর্ণ হয় তাহলে সদস্যপদ বাতিল বলে গণ্য হবে। অবশ্য সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৩৯ অনুচ্ছেদে ১ দফার পরিবর্তন করে সরকারি কর্মকমিশন (PSC) চেয়ারম্যানের ও অন্যান্য সদস্যদের অবসর গ্রহণের বয়ঃসীমা ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করা হয়।
উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, দেশের সার্বিক শাসনব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক তথা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই সুক্ষ্ম কমিশন গঠনও গুরুত্বপূর্ণ। আর সূক্ষ্ম সিভিল সার্ভিস গঠন করতে হলে অবশ্যই একে যথাসম্ভব রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে হবে। এর মাধ্যমে যদি সূক্ষ্ম প্রশাসন ব্যবস্থা গঠিত হয়, তাহলেই দেশের সার্বিক অগ্রগতি সম্ভব।
আরো পড়ুন:
- রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার সমস্যা দূর করার উপায়সমূহ
- রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার সমস্যাসমূহ
- সরকারি খাত ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব
- সরকারি খাত ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্যসমূহ
- রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার প্রকৃতি
- রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা
- প্রমথ চৌধুরী
- শামসুর রাহমান
- জহির রায়হান
- মুনীর চৌধুরী
- বিসিএস প্রিলি সূচিপত্র (সকল বিষয়, সকল অধ্যায়)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস ইবুক
যে ধরনের পোস্ট শেয়ার করছেন তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে