দ্বিজাতি তত্ত্ব – মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ

দ্বিজাতি তত্ত্ব উপস্থাপনা: ভারতীয় উপমহাদেশে উনিশ শতকে হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটলে মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বাতন্ত্র্যবোধ সৃষ্টি হয়। কিন্তু মুসলিমলীগ সভাপতি এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ভারতে হিন্দু ও মুসলমান দুটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে দুটি পৃথক জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি শুধুমাত্র ধর্মীয় দিককে প্রাধান্য দিয়েই দ্বিজাতি তত্ত্ব ঘোষণা করেন।


উইকিপিডিয়া অনুসারে দ্বিজাতি তত্বের সংঙ্গা: দ্বিজাতি তত্ব হল এমন একটি মতাদর্শ যেখানে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের প্রথমিকভাবে কেবলমাত্র তাদের ধর্মের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারতীয় মুসলমান এবং হিন্দু দুটি স্বতন্ত্র জাতীয়তার পরিচয় দেয়া হয়েছে, এবং যেখানে ভাষা, বর্ণ এবং অন্যান্য বৈশিষ্টের তুলনায় ধর্মকে বেশি প্রধান্য দেয়া হয়েছে।

এখনো amarStudy অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড না করে থাকলে গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করতে এখানে যানঃ Download Now. অ্যাপটি বিসিএস’সহ প্রায় সব রকমের চাকুরির প্রস্তুতির সহায়ক।

দ্বি-জাতি তত্ত্ব:

পাকিস্তানের জনক মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪০ সালের জানুয়ারী মাসে একটি ইংরেজি পত্রিকায় দ্বিজাতি তত্ত্ব নামে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, “ভারতে দুটি জাতি রয়েছে এবং মাতৃভূমির শাসনব্যবস্থায় উভয় জাতিকে অংশগ্রহণ করতে হবে।” তার দ্বি-জাতি তত্ত্ব আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। এক জাতির এক রাষ্ট্র নীতির ওপর ভিত্তি করে তিনি দ্বিজাতি তত্ত্বের বিশ্লেষণ করেন। ভারতের হিন্দু ও মুসলমান দুটি পৃথক জাতি ১৯৪০ সালে লাহোরে যে “পাকিস্তান প্রস্তাব” গৃহীত হয় তা দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল।

১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে মুসলীম লীগ অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, “হিন্দু-মুসলীমের ধর্মীয় দর্শন, সামাজিক রীতিনীতি ও সাহিত্য পৃথক ও স্বতন্ত্র।” কাজেই তারা পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়না অথবা একত্রে আহার্য গ্রহণ করেনা। মূলত তাদের সভ্যতা স্বতন্ত্র ও ভিন্নমুখী এবং তাদের জীবন দর্শন সম্পূর্ণ আলাদা। এটি অত্যন্ত স্পষ্ট যে, হিন্দু ও মুসলমানগণ ইতিহাসের স্বতন্ত্র উৎস থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করে থাকে। তাদের মহাকাব্য ভিন্ন, তাদের বীর সোনানিগণ স্বতন্ত্র এবং যেকোনো বিষয়ও ভিন্ন। একজনের কাছে যা পবিত্র, অন্যজনের কাছে তা হাস্যকর। তিনি বলেন, “ভুলবসত প্রায় বলা হয় যে, মুসলমানরা সংখ্যালঘু সম্প্রাদায়;” কিন্তু আসলে তা নয়।

যেকোনো সূত্রে তারা একটি জাতি। ভারতবর্ষ একটি জাতি বা দেশ নয়, বরং বহু জাতীয় জনসমাজ সহযোগে এই উপমহাদেশ গঠিত। তার মধ্যে হিন্দু ও মুসলিম দুটি প্রধান জাতি। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে জিন্নাহ আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবিও তুলে ধরেন। এই দাবি গণতন্ত্রের। জিন্নাহ বলেন, “একই রাষ্ট্রে দুটি জাতিকে বেঁধে রাখলে সে জাতিদ্বয়ের মধ্যে যদি একটি সংখ্যালঘু এবং অপরটি সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়, তাহলে কালক্রমে তা থেকে অসন্তোষ বৃদ্ধি পাবে এবং শাসনব্যবস্থা একদিন ভেঙ্গে পড়বে।” তিনি আরো বলেন, “জাতির যেকোনো সংজ্ঞা অনুসারে মুসলমানরা এক জাতি এবং মুসলমান জাতির নিজস্ব বাসভূমি, ভূখণ্ড এবং রাষ্ট্র থাকতে হবে।” এছাড়াও তিনি আরো বলেন, “আমরা স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে আমাদের প্রতিবেশির সাথে সুখে-শান্তিতে বসবাস করার ইচ্ছা পোষণ করি।”


উপরিউক্ত বক্তব্য থেকে আমরা বলতে পারি যে, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্ব ভারতীয় উপমহাদেশের বিভক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাকিস্তান আন্দোলন এবং ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের অন্যতম কারণ ছিলো এই দ্বিজাতি তত্ত্ব। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগস্ট ভারত নামে দুটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়।


Al-Amin Islam | অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো ভুল হয়ে থাকলে মেসেজ করার জন্য অনুরোধ রইল।

আরো পড়ুন:

2 thoughts on “দ্বিজাতি তত্ত্ব – মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You're currently offline !!

error: Content is protected !!