খিলাফত আন্দোলন: রাসূলুল্লাহ (স:)-এর পরবর্তী সময়ে যারা তাঁর প্রতিনিধি হন তাঁদের বলা হতো খলিফা। খলিফাগণ যে পথ অবলম্বন করতেন তার নাম খিলাফত। ১৫১২ সাল থেকে তুরস্কের সুলতানের উপর খিলাফত বর্তায়। তখন থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত যিনি তুরস্কের সুলতান হতেন তিনি মুসলীম খলিফা হিসেবেও সন্মান পেতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক ব্রিটিশ বিরোধী শিবিরে যোগ দেন। এতে ভারতের মুসলমান বিপদে পড়ে। একদিকে তারা ছিল ব্রিটিশ সরকারের অনুগত প্রজা।
অন্যদিকে, তুরস্কের সুলতান ছিল তাদের খলিফা। ব্রিটিশ সরকার মুসলমানদের আশ্বাস দেয় তুরস্কের প্রতি কোনো অবিচার করা হবেনা। সরল বিশ্বাসে মুসলমানগণ ব্রিটিশ সরকারকে সমর্থন যোগায়। কিন্তু যুদ্ধ শেষে ব্রিটিশ সরকার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন। তারা তুরস্কের উপর অন্যায় সন্ধি চাপিয়ে দেন। তুরস্কের অনেক এলাকা মিত্র পক্ষ কেড়ে নেয়। এতে মুসলমানগণ মর্মাহত হয়। নিম্নে খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
খিলাফত কমিটি গঠন:
মুসলমানগণ তুরস্কের উপর অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করেন। ১৯২১ সালের ১১ই নভেম্বর মুসলীম নেতৃবিন্দ মুম্বাই শহরে খিলাফত কমিটি গঠন করেন। খিলাফতের সন্মান রক্ষার জন্য এই খিলাফত কমিটির নেতৃত্বে যে আন্দোলন পরিচালিত হয় তাই খিলাফত আন্দোলন নামে পরিচিত। মাওলানা মো: আলী, মওলান সওকত আলী, ড. আনসারী, আবুল কালাম আজাদ, হাকিম আজমল খান প্রমুখ খিলাফত আন্দোলনের নেতা ছিলেন। গান্ধী, তিলক, মতিলাল নেহেরু, মদনমোহন মালব্য প্রমুখ কংগ্রেস নেতাও এই আন্দোলনকে সমর্থন করেন।
অসহযোগ আন্দোলন:
রাউলাট আইন ও জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ১২৯০ সালের ১০ই মার্চ গান্ধী অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করেন। ওই বছর ২০ মে তারিখে কেন্দ্রীয় খিলাফত কনফারেন্সে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন করার সীন্ধান্ত নেয়। এর অর্থ হল ভারতীয়গণ ব্রিটিশ সরকারের সাথে সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকবে। অফিস আদালতে কাজ করবে ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া উপাধি বর্জন করবে ইত্যাদি।
খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন:
১৯২০ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে কংগ্রেস অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচী গ্রহণ করে। এছাড়াও সীন্ধান্ত নেওয়া হয় যে, খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন একসাথে পরিচালিত হবে। সীন্ধান্ত অনুসারে প্রায় একবছর দুটি আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল।
অসহযোগ আন্দোলন স্থগিতকরণ:
১৯২২ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী উত্তর প্রদেশের চৌরিচৌরা নামক একটি গ্রামে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। জনতা উত্তোজিত হয়ে থানায় আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ২২ জন পুলিশ পুড়ে মারা যায়। আন্দোলন অহিংস থাকছেনা মনে করে গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন।
খিলাফত আন্দোলনের সমাপ্তি:
অসহযোগ আন্দোলন বন্ধ হওয়ার পরে খিলাফত আন্দোলনও দুর্বল হয়ে পড়ে। এসময় মোস্তফা কামাল তুরস্কের ক্ষমতায় আসেন। তিনি তুরস্ককে প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করেন। সুতরাং, খিলাফত আর রইল না। এর ফলে ভারতেও খিলাফত আন্দোলনের অবসান হয়।