সানশাইন পলিসি কী ?

সানশাইন পলিসি হল দক্ষিণ কোরিয়া কর্তৃক উত্তর কোরিয়ার সাথে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার নীতি।

২য় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ঠান্ডা যুদ্ধের ফলাফল হিসেবে ১৯৪৫ সালে কোরিয়া ভেঙ্গে যাওয়ার পর তাদের আর এক হওয়া সম্ভব হয় নি। রাজনৈতিক ভাবে সমাজতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী ব্লকে চলে যায় উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার কূটনৈতিক অবস্থাও তলানিতে ছিল।ভূ-রাজনৈতিক কারণে তথা দক্ষিণ চীন সাগরে ও এশিয়া প্যাসিফিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিশ্ব মোড়ল পুঁজিবাদী যুক্তরাষ্ট্র ও সমাজতান্ত্রিক চীন , রাশিয়ার ক্রীড়ানকে পরিণত হয় দুই কোরিয়া । পরমানু শক্তি ও তথ্য প্রযুক্তিতে উন্নত হওয়া দুই কোরিয়া ১৯৫০ সালে যুদ্ধও বেঁধে যায়।

এখনো amarStudy অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড না করে থাকলে গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করতে এখানে যানঃ Download Now. অ্যাপটি বিসিএস’সহ প্রায় সব রকমের চাকুরির প্রস্তুতির সহায়ক।

দুই কোরিয়া তথা দুই সতীনের লড়াইয়ের ফায়েদা লুটে নেয় বিশ্ব মোড়লরা । ১৯৫৩ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের unity for peace resolution এর মাধ্যমে যুদ্ধ বিরতি হলেও মাঝে মাঝেই পারমানবিক অস্ত্রের ঝনঝনানিতে যুদ্ধের দামামা বাজায় দুই কোরিয়া; তাদের সাথে সুর মিলিয়ে গর্জন করতে বসে থাকে না তাদের মিত্ররা । দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতা, সম্পর্কের টানাপোড়েন আর উত্তেজনাকে নিরসনে গেল শতকের ‘৯০ এর দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট কিম দায়ে জং এক নীতি গ্রহণ করেন যা সানশাইন পলিসি । কিম দায়ে জং এর এই নীতির ফলশ্রুতিতে ২০০১ সালের ১৩ জুন দু দেশের

প্রেসিডেন্টের মধ্যে শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । ২০১৩ সালে আবার দুই কোরিয়া পারমানবিক যুদ্ধের হুঁশিয়ারী দিয়ে আবার সম্পর্ক খারাপ করে । ২৭ এপ্রিল ২০১৮ সীমান্তবর্তী গ্রাম পানমুনজামে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইন দীর্ঘ ৬৮ বছর পর যে শান্তির ডাক দিয়েছে তা পরোক্ষভাবে দীর্ঘদিনের সানশাইন পলিসির এর বাইপ্রোডাক্ট বললেও ভুল হবে না।

অলিম্পিক ডিপ্লোম্যাসি বা অলিম্পিক কূটনীতি কী?

বিবদমান দুই দেশের বিভিন্ন ট্রাকের কূটনৈতিক পর্যালোচনা যখন বন্ধ থাকে তখন সেটি নিরসনের লক্ষ্যে বা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনুরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে মূলত অলিম্পিক গেমসে দুই দেশের আ্যথলেটদের কে অংশগ্রহণের মাধ্যমে যে কূটনৈতিক তৎপরতা দেখা যায় অলিম্পিক ডিপ্লোম্যাসি বা অলিম্পিকস কূটনীতি বলা হয় যা অনেকটা পিং পং ডিপ্লোম্যাসি এর মত। এই কূটনৈতিক তৎপরতা যে সবসময় পজিটিভই হয় তা নয়; কখনো কখনো শত্রুতা ও প্রতিযোগিতাকে আরো তীব্রতরও করে।

প্রাচীন গ্রিসে আদি অলিম্পিক ছিল সমাজের যাঁরা নিয়ন্ত্রক তাঁদের বিনোদনের উদ্দেশ্যে আয়োজিত নানা রকম প্রতিযোগিতা, যেখানে সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই ছিল ক্রীতদাস। ফলে রাজনৈতিক বিভাজন সেখানে ছিল অলিম্পিকের একটি আবশ্যকীয় উপাদান। ১৮৯৬ সালে ব্যারন কুবার্ত কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক অলিম্পিক যে রাজনৈতিক বিভাজন থেকে দূরে তা আশা করাই যায় ।

৯ ফেব্রুয়ারি ,২০১৮ তে কোরীয় উপদ্বীপের যুদ্ধংদেহী দুই কোরিয়ার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় শীতকালীন অলিম্পিক গেমসটি সেকেন্ড ট্রাক কূটনীতির মতো কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে । দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংচ্যাংয়ে অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিকসে উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে ইতিবাচক সাডা পাওয়ায় অলিম্পিকস কূটনীতি সফলতার মুখ দেখে । পিয়ংচ্যাংয়ের অলিম্পিকসে যুদ্ধংদেহী দুই কোরিয়ার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কোরিয়ার পতাকার নিচে দুই দেশের ক্রীড়াবিদদের অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কুচকাওয়াজে যোগ দেওয়া এবং নারীদের আইস হকি প্রতিযোগিতার জন্য সম্মিলিত একটি দল ঠিক করে নেওয়া।

বিগত দিনগুলোর বাগাড়ম্বরপূর্ণ পদধ্বনির আলোকে সাম্প্রতিক এই উদ্যোগকে রীতিমতো বৈপ্লবিক আখ্যায়িত করা যায়। অলিম্পিক-পরবর্তী সময়ে এই ঐক্যবদ্ধতা বা শান্তির ঐক্যতার বিস্তৃত হতে থাকে ; কেননা , এর পরই ২৭ এপ্রিল ২০১৮ সীমান্তবর্তী গ্রাম পানমুনজামে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইন দীর্ঘ ৬৮ বছর পর যে শান্তি প্রস্তাবে যে একমত হয়েছেন তা পরোক্ষভাবে অলিম্পিক ডিপ্লোম্যাসিরই বাইপ্রোডাক্ট বললেও ভুল হবে না। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় কোরীয় উপদ্বীপে অলিম্পিক ডিপ্লোম্যাসি সফলতার মুখ দেখেছে ।

আরো পড়ুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You're currently offline !!

error: Content is protected !!