মুজিবের অদৃশ্য শক্তি | বাঙলা ও বাঙালির ইতিহাসে যার নাম জড়িয়ে আছে তিনি হলেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।গোপালগঞ্জের সে মিয়া ভাই থেকে মুজিব ভাই,মুজিব ভাই থেকে বাঙালির জাতির জনক হয়ে উঠার পেছনে যে নারীর অবদান অনস্বীকার্য তিনি হলেন মাতৃস্বরূপা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বাঙালি জাতির নিভৃত কাণ্ডারী।দৃষ্টির অগোচরে থেকে কিভাবে দেশপ্রেম প্রকাশ করা যায় বেগম মুজিব তা দেখিয়েছেন। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না।
বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে সকল দুঃখ কষ্ট নির্যাতনে বঙ্গবন্ধুকে সাহস, শক্তি, অনুপ্রেরণা জোগাতে তাঁর ত্যাগ,সাহস ও সংগ্রামের কথা এখনো লিপিবদ্ধ হয়নি।
দেশের মানুষ জানে, বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতার মহাপরিচালক, কিন্তু মহাপরিচালককে নেপথ্যে বসে কে সাহস,শক্তি জুগিয়েছে তা আজো অকথিত।
সেই যে বালিকা বয়সে বধু হয়েছিলেন, তারপর গৃহবধূ হিসেবে আপনার ভূমিকা আপনি গৃহেই সীমাবদ্ধ রাখতে পারতেন,স্বামীর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারতেন, রাজনীতির, দেশমুক্তির দূর্গমপথের যাত্রী না হয়ে সংসারধর্মী, ছাপোষা মানুষ হয়ে নিশ্চিত ও স্বস্তির জীবন বেছে নিতে পারতেন। কিন্তু আপনি তা করেন নি।আপনি বঙ্গবন্ধুর যোগ্য সঙ্গী হয়েছিলেন।
মুজিবের অদৃশ্য শক্তি | কেউ কি জানে,,সেই ছয়দফা আন্দোলনের ভয়ংকর দিনগুলোতে আপনি স্বামীকে কতটা সাহস জুগিয়েছিলেন? বোরকায় শরীর ঢেকে তার ভেতর ছয়দফার লিফলেট ঢাকা শহরে বিলি করেছেন।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় যখন কারাগারে বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর প্রহর গুনছে তিনি তখনোও নিঃশঙ্কচিত্তে স্বামিকে প্যারোলে মুক্ত করার প্রচেষ্টায় বাঁধা দিয়েছেন এমনকি বঙ্গবন্ধুকে হুমকি দিয়েছেিলেন ” প্যারোলে মুক্তি নিলে তোমার জন্য এ বাড়ি হারাম হয়ে যাবে।”
তারপর সে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস স্বামী পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি, বেগম মুজিবও হায়েনাদের দ্বারা ছেলেমেয়ে নিয়ে ঢাকায় গৃহবন্দী। তবু কোন ভয় প্রলোভন কাজ করেনি।দুই ছেলেকে রণসাজ পরিয়ে রণাঙ্গনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
তারপর ১৫ আগস্ট ভয়ংকর সে রাতে নরপশুরা যখন জাতির মশালকে খুন করলেন,আপনি বঙ্গবন্ধুকে রেখে পালিয়ে নিজের জীবন রক্ষার চেষ্টা করেননি,নির্ভয়ে দুঃসাহসী স্বামী কাছে এসে দাঁড়িয়েছিলেন।
মুজিবের অদৃশ্য শক্তি | কোথায় কখন আপনি ছিলেন না বঙ্গবন্ধুর পাশে- তার জীবন ও কর্মের সাহসী সঙ্গী ও কর্মী হিসেবে?? ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ -প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্বের নেপথ্যের শক্তি এক মহীয়সী নারী -নাম ফজিলাতুন্নেছা। সংকটের মুহূর্তে স্বামী যখন বিচলিত নেতাকর্মীরা দিশেহারা, বেগম মুজিব তখন অবিচলিত,দৃঢ় মানবী।
ছয়দফা হবে বাঙালির মুক্তির সনদ,জয়বাংলা হবে মুক্তিসংগ্রামের জাতীয় স্লোগান, আমার সোনার বাঙলা হবে জাতীয় সংগীত,সূর্য খচিত রক্ত লাল হবে জাতীয় পতাকা।দেশের ক্রান্তিলগ্নে যখন দিশেহারা বঙ্গবন্ধু তখন অদৃশ্য শক্তি হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন মহীয়সী এ নারী।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধীকে সাহস,প্রেরণা জুগিয়েছিলেন তার স্ত্রী কস্তুরাবাই গান্ধী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসকে তার স্বরাজ সাধনায় সাহস জুগিয়েছিল সে তার স্ত্রী বাসন্তী দেবী, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বেগম মুজিবের অবদান, ভূমিকা তাদের চাইতে কোন অংশে কম নয়।
মুজিবের অদৃশ্য শক্তি | বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যার্বতনের পর বঙ্গবন্ধু যখন দেশ গঠনে অংশগ্রহণ করেন বঙ্গমাতা পাশে থেকে আবারো ছায়া সঙ্গী হিসেবে থাকেন।অনেক বীরাঙ্গনাকে সামাজিকভাবে বিয়ে দেন এবং বীরাঙ্গনাদের নিজের মেয়ে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন।
লেখাঃ হিরাত উদ্দিন | Zakir's BCS specials