মুজিবনগর সরকার-১৯৭১

১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের অধিকাংশ নির্বাচিত সদস্যদের উদ্যোগে ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। এই সরকার গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল সুষ্ঠুভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুক্তিবাহিনী সংগঠন, সমন্বয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় এবং এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহায়তাকারী রাষ্ট্র ভারতের সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক রক্ষায় এই সরকারের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। নিচে মুজিবনগর সরকারের গঠনপ্রণালী সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:


মুজিবনগর সরকার গঠন:

বাংলাদেশের ইতিহাসে মুজিবনগর সরকার গঠন একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ সরকার প্রবাসী সরকার অথবা অস্থায়ী সরকার নামেও পরিচিত। ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল “মুজিবনগর সরকার” গঠিত হলেও এ সরকার শপথ গ্রহণ করে ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ৮ নম্বর সেক্টরের আওতাভুক্ত তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে মুজিবনগর সরকার গঠিত গঠিত হয়। স্বাধীনতার পরে বৈদ্যনাথতলা বা ভবেরপাড়া গ্রামের নাম মুজিবনগর রাখেন তোফায়েল আহাম্মেদ। এই অস্থায়ী বা প্রবাসী সরকারের সচিবালয় ছিল ৮ নং থিয়েটার রোড, কলকাতায়। নিচের টেবিলে মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভা ও তাদের মন্ত্রণালয়ের নাম দেওয়া হলো:

এখনো amarStudy অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড না করে থাকলে গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করতে এখানে যানঃ Download Now. অ্যাপটি বিসিএস’সহ প্রায় সব রকমের চাকুরির প্রস্তুতির সহায়ক।

দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
রাষ্ট্রপতিশেখ মুজিবুর রহমান
উপরাষ্ট্রপতিসৈয়দ নজরুল ইসলাম
প্রধানমন্ত্রীতাজউদ্দিন আহমদ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়খন্দকার মোস্তাক আহমদ
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়এএইচএম কামরুজ্জামান
অর্থ মন্ত্রণালয়এম মনসুর আলী

মুক্তিযুদ্ধে ‍মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা:

বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে মুজিবনগর সরকার গৌরবোজ্জল ভুমিকা রাখে। এই সরকারের বিচক্ষণ নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হয়। নিচে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে আলোচনা করা হলো:


মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দান: মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রদান করে। এই সরকার মুক্তিবাহিনীকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য তাদেরকে একটি সাংগঠনিক কাঠামোতে নিয়ে আসেন। তারপর এ বাহিনীতে পদসোপানিক নেতৃত্ব সুনিদিষ্ট করে দেন। এ সরকার মুক্তিযুদ্ধে সারা দেশকে ১১ টি সেক্টরে বিভক্ত করে যুদ্ধ সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে।


মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধকরণ: মুজিবনগর সরকারের নেতৃবৃন্দ নানা রকমের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ মাতৃকার মুক্তির লক্ষ্যে নিচের জীবন বাজি রাখতে উদ্বুদ্ধ করে। মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ এক বেতার ভাষণে বলেন, “আমরা তিতুমীর সূর্যসেনের বংশধর স্বাধীনতার জন্য যেমন জীবন দিতে পারি, তেমনি আমাদের দেশ থেকে বিদেশী শত্রু সেনাদের চিরতরে হটিয়ে দিতে আমরা সক্ষম।” এভাবে মুজিবনগর সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যোগাত।


বেসামরিক প্রশাসন পরিচালনা: মুজিবনগর সরকার একটি বেসামরিক প্রশাসন গড়ে তোলে। এ প্রশাসনের মূল লক্ষ্য ছিল মুক্ত অঞ্চলে শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এছাড়াও এই প্রশাসন ভারতে অবস্থানরত শরণার্থীদের দেখাশোনার ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।


মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ: মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য “মুজিবনগর সরকার” কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রশিক্ষণ শিবির খোলা হয়। এছাড়াও মুজিবনগর সরকার এসব প্রশিক্ষণ শিবিরের প্রয়োজনীয় উপকরণের যোগান নিশ্চিত করে।


অস্ত্র সংগ্রহ: মুজিবনগর সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রের যোগান নিশ্চিত করার জন্য ভারতের সাথে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে। ভারত সরকার এক্ষেত্রে উদারভাবে সহায়তা করে। ১৯৭১ সালের ৮ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের নিকট অস্ত্র সাহায্য চেয়ে আবেদন করেন।


জনগণের সাথে যোগাযোগ রক্ষা: মুজিবনগর সরকার সবসময় বাংলাদেশের জনগণের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জনগণের করণীয় সম্পর্কে এ সরকার নির্দেশনা দিত। এছাড়াও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বেতার ভাষণের মাধ্যমে দেশবাসিকে উজ্জীবিত রাখতেন।


বৈদেশিক সম্পর্ক: বাংলাদেশের সাথে বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষার উদ্দেশ্যে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের নিকট চিঠি লিখে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন কামনা করেন। মুজিবনগর সরকার বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে বহির্বিশ্ব ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ করে।


বিশ্বজনমত গঠন: মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বিশ্ব জনমত তৈরি করতে মুজিবনগর সরকার কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই সরকার পাক-হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা, নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বিশ্ববাসীর নিকট তুলে ধরে। এ সরকারের প্রচেষ্টার কারণে বিশ্ব বিবেক মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গড়ে তোলে।


আন্তর্জাতিক সমর্থন: বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভে মুজিবনগর সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই লক্ষ বাস্তবায়নের জন্য “মুজিবনগর সরকার” ভারতের উদাত্ত সমর্থন পায়। ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের মুক্তিকামি রাষ্ট্রসমূহের সমর্থন লাভ করে বাংলাদেশ।


উপরিউক্ত আলোচনার উপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারি যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ছিল অনন্য। নানামুখী চাপ ও ঝামেলার মাঝেও “মুজিবনগর সরকার” কাজ করে গেছে বিরামহীনভাবে। যার ফলশ্রুতিতে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম হয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের।


Al-Amin Islam | অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো তথ্য ভুল হয়ে থাকলে মেসেজ করার জন্য অনুরোধ রইল।

আরো পড়ুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You're currently offline !!

error: Content is protected !!