বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি শক্তির অবদান | ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্বত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমাদের স্বাধীনতার পেছনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন অবদান রয়েছে, ঠিক তেমনি বিদেশি শক্তির অবদানও অস্বীকার করার মতো নয়। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ নানা প্রেক্ষিতে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে যেমন প্রভাব বিস্তার করেছে, ঠিক তেমনি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও এর কমতি ছিলনা। একদিকে পাকিস্তান, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র অন্যদিকে বাংলাদেশ, ভারত ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমন্বয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সেসময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আলোচিত বিষয় ছিল।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন ভারত সরকারের অবদানের কথা কমবেশি আমরা সকলেই জানি। তারা প্রায় এক কোটি শরণার্থীদের আশ্রয়দান করার পাশাপাশি সামাজিক, অর্থনৈতিক, সামরিক প্রভৃতি দিক দিয়ে সহযোগিতা করেছে। এছাড়াও ভারতীয় সেনাবাহিনী ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ সরাসরি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ভারত প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি শক্তির অবদান :
এতো গেলো ভারতের অবদানের কথা। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা আমরা ভুলবো কি করে? বাংলাদেশের স্বাধীনতার মুক্তিযুদ্ধ সেসময়ের বহুল আলোচিত বিষয় হওয়ার কারণে বিভিন্ন পরাশক্তি মুক্তিযুদ্ধে পরোক্ষভাবে যুক্ত হওয়া শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের ক্রান্তিলগ্নে সোভিয়েত ইউনিয়নের দৃঢ় সমর্থন ও সহায়তা বাংলাদেশ অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। নিরাপত্তা পরিষদে স্বাধীনতার বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখতে যুদ্ধ বিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ৩ বার ভেটো প্রদান করে। ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়া থেকে রক্ষা পায়।
মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে পাকিস্তানের অবশ্যম্ভাবী পরাজয় আচ করতে পেরে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তাদের সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরে প্রেরণ করেন। যেটাকে নিউক্লিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার হুমকি হিসেবে ধরা হয়েছিল। তাদের সপ্তম নৌবহর ১৯৭১ সালের ১১ই ডিসেম্বর বঙ্গোপসাগরে পৌঁছায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের এই হুমকির জবাব হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ৬ ও ১৩ ডিসেম্বর নিউক্লিয়ার মিসাইলবাহী দুটি ডুবোজাহাজ ভ্লাডিভস্টক থেকে বঙ্গোপসাগরে প্রেরণ করেন। যারা ইউএস টাস্ক ফোর্স-৭৪ কে ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ভারত মহাসাগরে তাড়া করে বেড়ায়। বাংলাদেশের ৫১ তম স্বাধীনতা দিবসে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ যেসকল দেশ ও ব্যক্তি আমাদের স্বাধীনতার মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছে তাদের প্রতি রইল রক্তিম শুভেচ্ছা ও আন্তরিক ভালোবাসা।
মোঃ আলামীন ইসলাম একজন ক্ষুদে লেখক এবং প্রতিষ্ঠাতাঃ amarStudy.com