ভার্চুয়াল ভাইরাস | প্রযুক্তির অপ্যব্যবহার

ভার্চুয়াল ভাইরাস ও প্রযুক্তির অপ্যব্যবহার

প্রযুক্তির অপ্যব্যবহার | ভার্চুয়াল ভাইরাস | লেখাটি তরুণ প্রজন্মের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটু সময় নিয়ে পড়ুন। হয়তোবা আপনার সাথে মিলে যেতে পারে।


প্রযুক্তি আমাদের কি দিচ্ছে আর কি কি কেড়ে নিচ্ছে?

ভার্চুয়াল ভাইরাস | লেখাটি একটু দীর্ঘ হবে, তাই একটু সময় নিয়ে ধৈর্য ধরে পড়তে হবে। প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা পেয়েছি ফেসবুক, ইউটিউবসহ নানা ধরণের সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট, যেখানে ভার্চুয়াল জগতে দিনরাত অনায়াশে কাটিয়ে দিচ্ছি কিন্তু আমরা এটা কখনো বুঝার চেষ্টা করিনা যে এই ভার্চুয়াল জগতের আড়ালে প্রযুক্তি আমাদের কতটা ক্ষতি করে যাচ্ছে। ফেসবুক,ইউটিউবের নির্মাতারা তাদের সাইটে দীর্ঘসময় মানুষকে আটকিয়ে রাখার জন্য এমনভাবে কিছু হাইপারলিংকসহ কিছু রংচটা বিজ্ঞাপন বা সাজেশন শো করে যেটা দেখলে আপনি ক্লিক করতে ভুলবেন নাহ। এভাবে ফেসবুক কিংবা ইউটিউবের অ্যালগরিদম একটার পর একটা সাজেশন আপনাকে এমনভাবে দেখাবে যাতে আপনি মনে করবেন এটা না দেখলে বা এটা না পড়লে চরম মিস হয়ে যাবে। এভাবে আপনি একটার পর একটাতে ক্লিক করতে করতে কখন রাত শেষ হয়ে ভোর হয়ে গেছে আপনি বুঝতেও পারছেন নাহ।

এখনো amarStudy অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড না করে থাকলে গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করতে এখানে যানঃ Download Now. অ্যাপটি বিসিএস’সহ প্রায় সব রকমের চাকুরির প্রস্তুতির সহায়ক।

ভার্চুয়াল ভাইরাস | হাতটা বাড়ালেই স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ওয়াইফাই আর ৯ টাকায় এক জিবি ফোরজি ইন্টারনেট পেয়ে যাচ্ছি। আমরা যদি এগুলোর যথার্থ ব্যবহার করি তবে নিসন্দেঃহে প্রযুক্তি আমাদের কাছে খারাপ কিছু নয়। আর আমরা যারা এই প্রযুক্তির অপ্যব্যবহার করি তাদের জন্য আজকে আমার এই লেখাটা। 


উদাহারণস্বরুপ আমি নিজেকেই ব্যবহার করছি। এখন আমার ঘড়িতে সময় রাত ১ টা ২১ মিনিট। আমি মাত্র এই স্টেটাসটা লেখা শুরু করলাম। নিসন্দেঃহে আজকে আমি রাত ৪ টার আগে ঘুমাবো নাহ। ধরুণ ঘুমাতে গেলাম রাত ৪ টায়। ঘুমাতে ঘুমাতে ফজর হয়ে গেলো। ঘুম থেকে উঠলাম দুপুর ১২ টা কিংবা দুপুর ১/২ টায়। আমার সকালের খাবার টা বাদ পড়ে গেলো কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন সকালের খাবার আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তারা আরও বলছেন সকালে ঘুম থেকে দেরি করে উঠলে খাবার রুচি কমে যাওয়াসহ আরো অনেক ধরণের সমস্যা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রাত থেকে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার জন্য গ্যাস্টিক, আলসার থেকে শুরু করে এমনকি ক্যান্সার পর্যন্তও হচ্ছে কিন্তু এটা দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমাদের দেশের অধিকাংশ ব্যাচলর সকালের খাবার খায়না। আচ্ছা বিশেষজ্ঞদের ওইসব কথা না হয় বাদ দিলাম। দুপুরে ঘুম থেকে উঠে কি করলাম কি নাই করলাম দিন শেষ হয়ে গেলো। দেরি থেকে ঘুম থেকে উঠার ফলে কলেজেও ক্লাসটা মিস হয়ে গেলো। নিয়মিত ক্লাস না করার কারণে স্টাডির প্রতিও মনোযোগটা ভালোভাবে থাকবে নাহ এটাই স্বাভাবিক। দিনটা এভাবেই চলে গেল। সন্ধা হতে না হতেই পড়ালেখা বাদ দিয়ে আবার ল্যাপটপ টা নিয়ে ভার্চুয়াল জগতে ঢুকে পড়লাম। কিভাবে রাত ২ টা বেজে গেছে নিজেও বুঝলাম নাহ। রাতের খাবারটাও টাইমলি খাওয়া হলো না। খাবার টাইমলি না খেলে কি কি জটিল সমস্যায় ভুগতে হয় সেটা নাহয় আপনারা গুগলে সার্চ দিয়ে দেখে নিয়েন। কিন্তু এইযে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্মার্টফোন আর ল্যাপটপের পর্দার দিকে তাকিয়ে আছি সেটা কি আমাদের জন্য ক্ষতিকর কিছু নয়?? অন্ধ হলেই বুঝতে পারবেন কি যে ভুলটাই করলেন?? এইতো কিছুদিন আগে প্রথম আলোতে দেখলাম চীনে এক মহিলা দীর্ঘসময় অনলাইনে গেম খেলতে খেলতে তিনি অনুধাবন করতে পারলেন যে তিনি আর চোখ দিয়ে কিছু দেখতে পাচ্ছেন না। তৎক্ষণাৎ ডাক্টারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্টার তার সব পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষ করে যা জানালো তা খুবী দুঃখ জনক। ওই মহিলার দুটি চোখ আজীবনের জন্য অন্ধ হয়ে গেছে। কোনো চিকিৎসাতেই তার চোখদুটি আর ফিরে আনতে পারলো না উন্নত বিশ্বের ডাক্টার মশাইরা। সেই অবস্থা হওয়ার আগেই সচেতনতাটা আমাদের জরুরী।


প্রযুক্তি আমাদের জন্য আর্শীবাদ নাকি অভিশাপ?

ভার্চুয়াল ভাইরাস | যারা অনলাইন গেমে এডিক্টেট ভাইয়ারা তাদেরকে বলছি সময় থাকতে নিজেদের মাঝে পরিবর্তন আনো, নতুবা চোখ দুইটা চলে গেলে বুঝবেন কয়মাসে বছর হয়!! ভাই ধরলাম অনলাইন গেমে আপনি জিতলেন কিন্তু আপনি নিজের কাছে হেরে যাচ্ছেন। দিনরাত অনলাইন গেম খেলে নিজের কতটা ক্ষতি করে বসতেছেন তা বুঝেও বুঝতেছেন নাহ। আচ্ছা চোখ অন্ধ হওয়ার কথা না হয় বাদ দিলাম কিন্তু গবেষকরা বলছে যারা ভার্চুয়াল জগতে এডিক্টেট তাদের মস্তিষ্কের প্যাটানটাই চেঞ্জ হয়ে যায়। যারা ভার্চুয়াল জগতে এডিক্টেট বিশেষজ্ঞরা তাদেরকে বলছে তারা “ভার্চুয়াল ভাইরাসে” এডিক্টেট। আর যারা “ভার্চুয়াল ভাইরাসে” এডিক্টেড তাদের মস্তিষ্কে একধণের হরমোন উৎপন্ন হয় যেই হরমোনটা নাকি মাদকাশক্তদের মস্তিষ্কেও উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ, সমিকরণটা খুবই সহজ। ধরুণ আপনি ফেসবুক থেকে লগআউট করে পড়ার টেবিলে পড়তে বসলেন এমন সময় আপনার মনে হলো আপনি আজকে যেই প্রোফাইল ফটোটা আপলোড করেছেন ওটাতে আপনার বন্ধুরা কমেন্ট করতেছে। পড়াতে আপনার মনোযোগ নাই। তারপড়েও আপনি জোর করে বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন কিন্তু আপনার কোনো পড়া হচ্ছেনা, মনে হচ্ছে আপনি বইটার দিকে যেভাবে তাকিয়ে আছেন বইটাও ঠিক আপনার দিকে সেভাবে তাকিয়ে আছে এবং অবশেষে আপনি ফেসবুকে লগইন করে কমেন্টের রিপ্লে দেওয়া শুরু করলেন। তাহলেই আপনি নিজের কাছে হেরে গেলেন, যেমনটা মাদকাশক্ত ব্যাক্তিরা নিজেদের কাছে হেড়ে যায়। অর্থাৎ, মাদকাশক্ত ব্যাক্তির সাথে আপনার তেমন কোনো পার্থক্য নেই। আপনার মস্তিষ্কে যে হরমোনটা উৎপন্ন হয়েছে সেইম হরমোনটা মাদকাশক্ত ব্যাক্তিদের মস্তিষ্কেও উৎপন্ন হয় এবং যার প্রভাবে মাদকাশক্ত ব্যাক্তি মাদক সেবন না করে থাকতে পারেননা আর আপনি কমেন্টের রিপ্লে না দিয়ে অথবা নোটিফিকেশন যাচাই না করে নিজেকে চেক দিয়ে রাখতে পারেননা। উভয়ের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। অনেকের ক্ষেত্রে এমনটাও হতে পারে যে আপনি ফেসবুকে আসলেন নিউজফিট দেখতেছেন অথবা বন্ধুদের সাথ চ্যাটিং করতেছেন কিন্তু আপনার কোনোটাই করতে ভালো লাগছে না কিন্তু আপনি মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোড় করে চ্যাটিং করতেছেন কিংবা নিউজফিট দেখতেছেন। তাহলে আপনিও বুঝে নিয়েন যে আপনিও “ভার্চুয়াল ভাইরাসে” আক্রান্ত। এখন আমার ঘড়িতে রাত ২টা ১৭ বাজে। এরকম উদাহারণ দিতে থাকলে আগামীকাল রাত দুইটা পার হয়ে যাবে কিন্তু উদাহারণ দিয়ে শেষ করা যাবেনা ভাই। এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলি, প্রযুক্তির বিভিন্ন আবদানের জন্য এখন আর আমরা পরিশ্রম করতে চাচ্ছি না। উদাহারণস্বরুপ, এখন বাজারে রিমোট কন্ট্রোল ফ্যান বের হয়েছে। কিছুদিন আগেও আমরা ফ্যানের সুইচ অন/অফ করার জন্য বিছানা থেকে উঠে দেওয়াল থেকে সুইচ অন/অফ করতাম, যার ফলে আমাদের এতটুকু হলেও পরিশ্রম হতো কিন্তু এখন আমরা তা না করে রিমোট দিয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফ্যান অন/অফ করা শুরু করছি। ফলেই বুঝতে পারতেছেন যে প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?? তবে এটা নিসন্দেঃহে সত্যি যে প্রযুক্তিকে আমরা যদি সঠিক পথে ব্যবহার করি তবে তা আমাদের জন্য মোটেও খারাপ কিছু নয় বরং আর্শীবাদস্বরুপ কিন্তু আমরা যদি প্রযুক্তিকে সঠিক রাস্তায় ব্যবহার করতে ব্যর্থ হই তবে তার পরিণাম খুব বেশি ভয়াবহ হবে এটাই স্বাভাবিক। এই মুহূর্তে আমাদের যেটা সবথেকে বেশি প্রয়োজন সেটা হলো সচেতনতা। আসুন আমরা তরুণ প্রজন্মটা একটু সতর্কতার সাথে চলি, তবেই প্রযুক্তির ভয়ানক দিকগুলি থেকে আমাদের বাঁচা সম্ভব।


বিঃদ্রঃ আমার এই লেখাটি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যারা “ভার্চুয়াল ভাইরাসে” এডিক্টেড তাদের সতর্কতার জন্য, কাজেই কেউ বাজে কমেন্ট করবেন না। আর লেখাটির দ্বিতীয় পর্ব দেখতে চাইলে কমেন্ট করে জানাবেন।


ভার্চুয়াল ভাইরাস | লেখাটি ফেসবুকে লিখেছিলাম ২০১৮ সালে কিন্তু কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে সাইটে পাবলিশ করলাম ১ বছর পরে। যাইহোক কোথাও কোনো ভুল হয়ে থাকলে মেসেজ করে জানানোর জন্য অনুরোধ রইলঃ Al-Amin Islam


আরো পড়ুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You're currently offline !!

error: Content is protected !!