বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট বাংলাদেশের প্রথম কৃত্তিম উপগ্রহ। এটি মূলত যোগাযোগ ও সম্প্রচার কাজের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের ১১ই মে যুক্তরাষ্ট্রের কেপ কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে “বিএস-১” উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ৫৭ তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইটের মর্যাদা লাভ করে। এবং স্যাটেলাইটের অভিজাত ক্লাবে বাংলাদেশের নাম যুক্ত হয়। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের ওজন ছিল ৩ হাজার ৭০০ কেজি, যা “ফ্যালকন-৯” রকেটের মাধ্যমে পৃথিবী থেকে ৩৬,০০০ কিলোমিটার পথ দূরে পাঠানো হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর উৎক্ষেপনকারী সংস্থা ছিল মার্কিন মহাকাশযান ও রকেট প্রস্তুতকারক এবং উৎক্ষেপণকারী প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। উৎক্ষেপণ করার সময় স্পেসএক্স অফিসিয়ালভাবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের দৃশ্যটি সরাসরি সম্প্রচার করে এবং বাংলাদেশ থেকেও লক্ষ লক্ষ উৎসুক জনতা উৎক্ষেপণের দৃশ্যের লাইভ দেখে। এই স্যাটেলাইট প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীনে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়িত হয়।
বঙ্গবন্ধু-১ নির্মাণ ব্যয় ও অর্থায়ন:
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ হচ্ছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি। BTRC স্যাটেলাইট সিস্টেম কিনার জন্য ফ্রান্সের কোম্পানি “থ্যালাস অ্যালেনিয়া” স্পেসের সঙ্গে ১ হাজার ৯৫১ কোটি ৭৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকার চুক্তি করে। ২০১৫ সালে BTRC ২১৯ কোটি টাকায় ১৫ বছরের জন্য রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনার আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ কৃত্রিম উপগ্রহটি একটি জিও-স্টেশনারি স্যাটেলাইট বা ভূস্থির উপগ্রহ। এতে মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে। এর মধ্যে ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে। বাকি ২০টি বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির জন্য রয়েছে। মহাকাশে উৎক্ষেপণের পর বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট পরিচালনার জন্য ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। এই সংস্থার প্রাথমিক মূলধন হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয় ৫ হাজার কোটি টাকা।
অবস্থান ও বিবরণ:
১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের অবস্থান; যা বাংলাদেশসহ বঙ্গোপসাগরে তার জলসীমাসহ ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া অঞ্চল এর পরিধি বিস্তৃত থাকবে এবং গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় ভূকেন্দ্র থেকে এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এটিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণ করা হয়েছে। ফ্রান্সের “থ্যালিস অ্যালেনিয়া স্পেস” কর্তৃক নকশা ও তৈরি করা হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিমালিকানাধীন মহাকাশযান সংস্থা স্পেস এক্স থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট ১৬০০ মেগাহার্টজ ক্ষমতাসম্পন্ন মোট ৪০টি কে-ইউ এবং সি-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার বহন করবে এবং এটির আয়ু ১৫ বছর। উপগ্রহটির বাইরের অংশে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকার রঙের নকশার ওপর ইংরেজিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু ১। বাংলাদেশ সরকারের একটি মনোগ্রামও সেখানে আছে।
বঙ্গবন্ধু-১ উপগ্রহের সুবিধাসমূহ:
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সকল সুবিধাগুলির মধ্যে অন্যতম হলো বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়লেও এর মাধ্যমে দুর্গত এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থা চালু রাখা সম্ভব হবে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু-১ উপগ্রহের আরো কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো:
- বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মোট ফ্রিকোয়েন্সি ক্ষমতা হলো ১ হাজার ৬০০ মেগাহার্টজ। এর ব্যান্ডউইডথ ও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে ইন্টারনেটবঞ্চিত অঞ্চল যেমন পার্বত্য ও হাওড় এলাকায় ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া সম্ভব। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট ও ব্যাংকিং সেবা, টেলিমেডিসিন ও দূরনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারেও ব্যবহার করা যাবে “বিএস-১” স্যাটেলাইট।
- টিভি চ্যানেলগুলো তাদের সম্প্রচার কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য স্যাটেলাইট ভাড়া করে। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট চ্যানেলের সক্ষমতা বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। আবার দেশের টিভি চ্যানেলগুলো যদি এই স্যাটেলাইটের সক্ষমতা কেনে তবে দেশের টাকা দেশেই থাকবে। এর মাধ্যমে ডিটিএইচ বা ডিরেক্ট টু হোম ডিশ সার্ভিস চালু সম্ভব।
উল্লেখ্য, ১৯ মে ২০১৯ থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও ব্যাংকগুলি বাণিজ্যিকভাবে বিএস-১ “বঙ্গবন্ধু-১” এর ব্যান্ডউইথ ব্যবহার শুরু করেছে। এক্ষেত্রে স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা “বিসিএসসিএল” প্রাথমিকভাবে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে ৩ মাস “বিএস-১” থেকে ফ্রি ব্যান্ডউইথ সরবারহ করবে।
তথ্য সংগ্রহ করে লিখেছেন: AL-Amin Islam