হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায়

প্রতারণামূলক হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায়

হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায় | প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে আমাদের সমাজ প্রতিনিয়ত প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে। তথ্যপ্রযুক্তি তথা ইন্টারনেট আমাদেরকে পুরো বিশ্বটা হাতের কাছে এনে দিয়েছে। সবাই এখন ইন্টারনেট ব্যবহারের দিকে ঝুকে পড়ছে। অন্যদিকে, ইন্টারনেটের এই উন্নত প্রযুক্তির অপব্যবহার করে একদল প্রতারকচক্র বা ব্লাক হ্যাট হ্যাকর বিভিন্ন ধরণের ফাঁদ পেতে সাধারণ মানুষের মূল্যবান সব তথ্য চুরি করে ব্লাকমেইলের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তারা শুধু টাকা হাতিয়ে নিয়েই ক্ষান্ত হয়না। বরং অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ব্লাক হ্যাট হ্যাকাররা অনেকের আপত্তিকর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও প্রতিনিয়ত ঘটতে চলছে। এসব ব্লাক হ্যাট হ্যাকারদের কাছ থেকে কিভাবে অনলাইনে নিরাপদ থাকা যায় আজকে আমরা সেই সম্পর্কে জানবো। তবে এক্ষেত্রে আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি নিজে একটু সর্তক থাকলে এসব বিরক্তিকর ঘটনা থেকে নিজেকে রক্ষা করা অনেককাংশেই সম্ভব।


Spoofing হ্যাকিং বা ‍Spoofing Attack কি?

Spoofing হ্যাকিং সম্পর্কে জানতে হলে সর্বপ্রথমে আমাদেরকে জানতে হবে Spoofing টা আসলে কি? Spoof থেকে Spoofing শব্দটি এসেছে। যার বাংলা অর্থ হলো প্রতারণা। আর spoofing attack বলতে বোঝায় আতঙ্কজনক আক্রমণ। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক একাউন্টসহ যত প্রকার হ্যাকিং হয় তার একটা বড় অংশ হলো স্পুফিং হ্যাকিং। Spoofing অথবা Phishing Attack আসলে সরাসরি কোনো হ্যাকিং না। এখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহারকারীর গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়। বাংলাদেশে যেসবকল ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হয় তার প্রায় ৯০ শতাংশ এই Spoofing এর মাধ্যমে হ্যাক করা হয়। বাকি ১০ শতাংশ অপেন ওয়াইফাই, পাবলিক কম্পিউটার ব্যবহারসহ অন্যান্যভাবে হ্যাক করা হয়। আপনি কোথাও ফ্রি ওয়াইফাই পেয়ে সেটাতে আপনার ফোন ইন্টারনেটে সংযুক্ত করলেন কিন্তু আপনি হয়তোবা জানেনও না যে এইভুলটার কারণে আপনার ফোনের সব মূল্যবান তথ্য অন্যকেউ খুব সহজেই হাতিয়ে নিল। তাই যতদুর সম্ভব পাবলিক ওয়াইফাই বা পাবলিক কম্পিউটার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। এক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় জেনে রাখা দরকার হ্যাকিংয়ের একটা অংশ নিকট আত্বীয়দের মাধ্যমেও হতে পারে তাই যতদুর সম্ভব নিজের ডিভাইস ছাড়া অন্যকোনো ডিভাইসে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ না করাই ভালো। নিকট আত্বীয়ের ব্যপারটা কিন্তু সবার জন্য প্রযোজ্য নয়।

এখনো amarStudy অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড না করে থাকলে গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করতে এখানে যানঃ Download Now. অ্যাপটি বিসিএস’সহ প্রায় সব রকমের চাকুরির প্রস্তুতির সহায়ক।

Spoofing এর মাধ্যমে যেভাবে প্রতারণা বা হ্যাকিং করা হয়:

স্পুফিং, ফিশিং করে অনেক রকমভাবেই ডিজিটাল জালিয়াতি কিংবা হ্যাকিংয়ের মতো প্রতারণা করা সম্ভব। হ্যাকাররা বিভিন্ন ধরণের Spoofing Tools বা সফটওয়্যার ব্যবহার করে হ্যাকিং করে থাকে। যেমন ধরুন আপনি ফ্যামিলির সাথে থাকেন না এবং আপনি আপনার ফোনটি আপনি কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রেখেছেন। এমন সময় কেউ Spoofing Software ব্যবহার করে হুবহু আপনার ফোন নম্বরটি নকল করে আপনার বাবার ফোন নম্বরে কল করে বলা হলো আপনি খুব বিপদে আছেন অথবা আপনাকে অপহরণ করা হয়েছে। তাই আপনাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে হলে ১ লক্ষ টাকা পাঠাতে হবে। আপনার বাবা কিছু বুঝে উঠতে না পেরে প্রতারক চক্রের কাছে টাকা পাঠিয়ে দিল। অথচ আপনি বুঝতেও পারলেন না। ফোন নম্বর স্পুফিং করে আজকাল অহরহ প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি পুলিশের ডিআইজির ফোন নম্বর Spoofing করে শাহাবাগ থানা থেকে আসামি বের করে নিয়ে যাওয়ারও ঘটনাও ঘটেছে। তাই আপনার পরিচিত কারো ফোন নম্বর থেকে কল এসে টাকা-পয়সা কিংবা অন্যকিছু চাওয়া হলে দ্বিতীয়বার তাকে কল করে নিশ্চিত হয়ে তারপর টাকা পাঠাবেন। অন্যথায় আপনিও পড়ে যেতে পারেন প্রতারক চক্রের পাল্লায়। শুধু তাই নয়, স্পুফিং অথবা ফিশিংয়ের মাধ্যমে আপনার সব তথ্য হ্যাক করে আপনার ক্রেডিট কার্ড ক্লোন করে ব্যাংক একাউন্টে থাকা আপনার সব টাকা উঠিয়ে নেওয়াও সম্ভব। তাই স্পুফিং থেকে সাবধান।


স্পুফিং, ফিশিং থেকে বাঁচার উপায়:

আজকাল হ্যাকিং করার উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হলো Spoofing বা Phishing. তাই হ্যাকারারা হ্যাকিং করার জন্য এইমাধ্যমটি বেশি ব্যবহার করতেছে। এ ধরণের হ্যাকিং থেকে বাঁচার জন্য প্রাথমিকভাবে আপনার সচেতনতাই যথেষ্ট। তাই স্পুফিং হ্যাকিং থেকে বাঁচার জন্য যেসব সচেতনতা থাকা অতিগুরুত্বপূর্ণ:

  • আপনার পরিচিত ফোন নম্বর থেকে কল এসে টাকা অথবা অন্যকিছু চাওয়া হলে দ্বিতীয়বার সেই নম্বরে কল দিয়ে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া।
  • SMS-এ অপরিচিত কোনো লিংক আসলে সেটাতে ক্লিক না করা। কারণ- ক্লিক করলেই আপনার ফোন হ্যাক হয়ে যেতে পারে।
  • ফেসবুক অথবা ইমেইলে অপরিচিত কোনো বার্তা আসলে সেটা অপেন করবেন না। সেটা অপেন করলেও আপনার ডিভাইস হ্যাক হয়ে যেতে পারে।
  • Adult Website-এ ব্রাউস করবেন না। এসব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনার ডিভাইসে ম্যালওয়্যার/স্পাইওয়ার প্রবেশ করে আপনার সম্পূর্ণ ডিভাইস রিমুট কন্ট্রোল করা সম্ভব।
  • প্রিমিয়াম এন্টিভাইরাস ব্যবহার করুন। এসব এন্টিভাইরাস আপনাকে Spoofing থেকে অনেকটা সুরক্ষা দিবে। এন্টিভাইরাস ব্যবহার করতে না চাইলে যারা Windows ব্যবহার করেন তারা অবশ্যই windows Defender চালু রাখবেন।
  • Android ডিভাইসের ক্ষেত্রে প্লেস্টোর এবং Apple-এর ক্ষেত্রে অ্যাপ স্টোর ছাড়া অন্যকোথাও থেকে এ্যাপ ইন্সটল করবেন না।
  • Windows এর ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম সফটওয়্যার ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। যতদুর সম্ভব ক্রাক সফটওয়্যার ব্যবহার না করার চেষ্টা করবেন। ক্রাক সফটওয়্যার ইন্সটল করার সময় এন্টিভাইরাস অফ রাখতে হয়, তখন ক্রাক সফটওয়্যারের মাধ্যমে অথবা অন্যকোনো ভাবে আপনার ডিভাইসে ম্যালওয়্যার/স্পাইওয়্যার অ্যাটাক করে হ্যাক হয়ে যেতে পারে আপনার ডিভাইসটি।
  • যেকোনো ডিভাইসে কোনো অ্যাপ বা সফটওয়্যার ইন্সটল করার সময় ওই সফটওয়্যারটি আপনার ডিভাইসের কি কি পারমিশন চাচ্ছে সেটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। কোনো এ্যাপ বা সফটওয়্যার আপনার সন্দেহজনক কোনো পারমিশন চাইলে সেটাতে পারমিশন দিবেন না। প্রয়োজনবোধে সেই সফটওয়্যারটি আনইন্সটল করে দিন।
  • সবশেষে বলে রাখি প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে হ্যাকররাও বসে নাই। তারা প্রতিনিয়ত অভিনব কায়দায় নতুন নতুন প্রতারণার ছক একেই চলছে। তাই হ্যাকারদের গতিবিধির প্রতি লক্ষ রাখতে হবে এবং প্রযুক্তির সাথে সাথে আমাদেরকেও আপডেট থাকতে হবে। প্রযুক্তির সাথে আপডেট থাকতে এবং হ্যাকারদের গতিবিধি লক্ষ রাখতে আমাদের এই ওয়েবসাইটের তথ্য প্রযুক্তি পাতা অনুসরণ করুন।


আরো পড়ুন:


লিখেছেন: Al-Amin Islam

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You're currently offline !!

error: Content is protected !!