ন্যায়পাল

ন্যায়পাল (Ombudsman), এই শব্দটি প্রথম উৎপওি ঘটে সুইডেনে। সুইডিস শব্দ ‘Ombudsman’- এর অর্থ হইল ‘প্রতিনিধি’ (Representative) বা ‘মুখপাএ’ (Spokesman)। এই অর্থে ন্যায়পাল বলিতে এমন ব্যক্তিকে বুঝানো হয় থাকে যিনি অন্যের প্রতিনিধিত্ব করেন বা অন্যের জন্য কথা বলেন।

১৮০৯ সালে প্রথম সুইডেনের সংবিধানে (Ombudsman) পদের সৃষ্টি করা হয়। অর্থাৎ সরকারী চাকুরীজীবী, বিচারক বা সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যগন কতৃক দেশের আইন যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কি না এবং তাদের বে-আইনী কাজ ও অহেতুক হয়রানি কারনে জনগনের অধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতা পদদলিত হচ্ছে কি না তা পরীক্ষা -নীরিক্ষা ও তদন্ত করে দেখার জন্য “অভিযোগ তদন্ত কারী” দপ্তর হিসাবে ন্যায়পাল পদের উৎপওি ঘটে। পরবর্তীকালে সুইডিনের সংবিধানকে অনুসরণ করে বিশ্বের অন্যান্য দেশের শাসনব্যবস্থায় এই পদ (ন্যায়পাল) সৃষ্টি করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যে ন্যায়পালকে বলা হয় ‘পার্লামেন্টারি কমিশনার’। সব দেশেই ন্যায়পাল আইনসভা কর্তৃক নিযুক্ত হন। সাধারণত আইনসভায় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ সর্বসম্মতিক্রমে ন্যায়পাল নির্বাচন করেন। রাজনৈতিক দলসমূহের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তই ন্যায়পালকে যথাযথ নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

এখনো amarStudy অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড না করে থাকলে গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করতে এখানে যানঃ Download Now. অ্যাপটি বিসিএস’সহ প্রায় সব রকমের চাকুরির প্রস্তুতির সহায়ক।

ন্যায়পালের কার্যাবলি :

ন্যায়পালের কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে বেসামরিক প্রশাসন ও আদালতের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান। তাকে বেআইনি কার্যকলাপ, কর্তব্যে অবহেলা ও ক্ষমতার অপপ্রয়োগের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত করতে হয়। বিশেষভাবে প্রতারণামূলক অপরাধ ও ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ন্যায়বিচারের পরিপন্থী কার্যকলাপের প্রতি ন্যায়পালকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয়। যেকোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সংবিধানের বিধি বা দেশের আইন লঙ্ঘন কিংবা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিধিবদ্ধ নিয়মকানুন ভঙ্গ করলে ন্যায়পাল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

সাধারণভাবে ন্যায়পাল পদের মূল উদ্দেশ্য সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে কাজের সমতা ও সততা বিধান এবং সুনির্দিষ্টভাবে প্রশাসনের যেকোন ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের গতিবিধির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ।

ন্যায়পালের শাস্তি প্রদানের কোনো ক্ষমতা নেই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যেমন জনসাধারণের সম্পত্তি বেদখল হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে আদালতে অভিযুক্ত করার পরিবর্তে ক্ষতিপূরণের জন্য তিনি প্রস্তাব দিতে পারেন। অবশ্য বিচারক বা প্রশাসনিক কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ক্ষমতাও তার নেই। তবে এসকল সীমাবদ্ধতা প্রশাসনের ওপর ন্যায়পালের নিয়ন্ত্রণ এবং সংশোধন প্রক্রিয়াকে অকার্যকর করতে পারে না। কোনো কর্মকর্তা যদি নিজের সিদ্ধান্তকে বিধিসম্মত ও আইনানুগ বলে দাবি জানিয়ে ন্যায়পাল প্রদত্ত সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেন, সেক্ষেত্রে ন্যায়পাল বিষয়টি সম্পর্কে আইনসভা কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর নিকট রিপোর্ট করতে পারেন। দেশের প্রচলিত আইন ও বিধিসমূহের ত্রুটি নির্দেশ করার অধিকারও তার এখতিয়ারভুক্ত।

বাংলাদেশের সংবিধানে ন্যয়পালের বিধান:- বাংলাদেশর সংবিধানেরর ৭৭ অনুচ্ছেদে ন্যায়পাল পদের কথা বলা আছে। তবে তাতে ন্যায়পালের নিয়োগ কি ভাবে হবে, ক্ষমতা বা দায়িত্ব সমপরকে কোন বিস্তারিত বিধান নাই। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে ন্যায়পাল পদ সৃষ্টি করা হইলেও ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তেমন কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় নাই। অতঃপর ৭৭ অনুচ্ছেদের অধীনে ১৯৮০ সালে ন্যায়পাল পদ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৮০ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রাহমানের আমলে (The Ombudsman Act,1980) পাস হয়। তবে আজ পর্যন্ত তা কার্যকর করার জন্য কোন পদক্ষেপ বা উদ্যোগ নেওয়া হয় নি। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ন্যায়পাল পদ বিলোপ করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You're currently offline !!

error: Content is protected !!