এসডিজি ও এমডিজির পার্থক্য

এসডিজি ও এমডিজির পার্থক্য :

এসডিজি ও এমডিজির পার্থক্য | এসডিজি কেন? এমডিজি’র সাথে এর কী সম্পর্ক ও পার্থক্য?

এমডিজি ছিলো বিশ্বনেতাদের প্রণীত সার্বজনীন উন্নয়ন পরিকল্পনা। এমডিজি’র মাধ্যমে বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানরা উন্নয়নের ৮টি বিষয়ে একমত হয়ে স্ব স্ব দেশের উন্নয়নের চেষ্টা করেছেন বিগত ১৫ বছরে। কিছু লক্ষ্য পূরণ হয়েছে, কিছু বাকি থেকেছে।

এখনো amarStudy অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড না করে থাকলে গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করতে এখানে যানঃ Download Now. অ্যাপটি বিসিএস’সহ প্রায় সব রকমের চাকুরির প্রস্তুতির সহায়ক।

এমডিজি’র মাধ্যমে উন্নয়ন সম্পর্কে বিশ্বনেতাদের মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি হলেও, এতে দারিদ্রের মূল কারণে (root cause) দৃষ্টিপাত করা যায় নি। জেন্ডার বৈষম্যে গুরুত্ব দেওয়া যায় নি এবং সার্বিক উন্নয়নের বিষয়গুলো থেকেছে অবহেলিত। এমডিজি’র মেয়াদ শেষ হলেও ১০০ কোটি মানুষ এখনও দরিদ্র সীমার নিচে, অর্থাৎ তাদের দৈনিক আয় ১.২৫ ডলারের নিচে।

এসডিজি ও এমডিজির পার্থক্য | এমডিজিতে মানবাধিকার বিষয়ে কোন উল্লেখ ছিল না এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টিও ছিল অস্পষ্ট। তাত্ত্বিকভাবে সকল দেশে প্রযোজ্য হলেও শুধুমাত্র দরিদ্র দেশগুলোতে এটি প্রয়োগ করা হয়েছে। অর্থ দিয়েছে তথাকথিত ধনী দেশগুলো।
এভাবেই ২০১৫ সালে এমডিজি’র নির্ধারিত ১৫ বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এসডিজি হলো গত ১৫ বছরে প্রচলিত এমডিজি’র সম্প্রসারিত ও হালনাগাদ রূপ। এতে টেকসই উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ধনী এবং গরীব সকল দেশকেই যথাযথভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সংক্ষেপে এসডিজি: ১. দারিদ্র্য বিমোচন; ২. ক্ষুধামুক্তি; ৩. সুস্বাস্থ্য; ৪. মানসম্মত শিক্ষা; ৫. জেন্ডার সমতা; ৬. বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন; ৭. ব্যয়সাধ্য ও টেকসই জ্বালানি; ৮. সবার জন্য ভালো কর্মসংস্থান; ৯. উদ্ভাবন ও উন্নত অবকাঠামো; ১০. বৈষম্য হ্রাসকরণ; ১১. টেকসই শহর ও সম্প্রদায়; ১২. (সম্পদের) দায়িত্বশীল ব্যবহার; ১৩. জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ; ১৪. সমুদ্রের সুরক্ষা; ১৫. ভূমির সুরক্ষা; ১৬. শান্তি ও ন্যায়বিচার; ১৭. লক্ষ্য অর্জনের জন্য অংশিদারিত্ব। ১৭টি লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করার জন্য বিশ্বের প্রায় সকল দেশ একমত হয়েছে জাতিসক্সেঘর অতিসাম্প্রতিক এক সাধারণ সভায়। আমাদের সরকার প্রধানও সেখানে ছিলেন।

এসডিজি ও এমডিজির পার্থক্য | ১) সম্পূর্ণতা/ Zero – Total Achievement: ২০১৫ সাল পর্যন্ত এমডিজি’র উদ্দেশ্য ছিল ক্ষুধা ও অভাবমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে অন্তত ‘অর্ধেক পথ’ আগানো। এসডিজি’র লক্ষ্য হলো কাজটি সম্পূর্ণ শেষ করা, অর্থাৎ ২০৩০ নাগাদ কোন ক্ষুধা বা খাদ্যাভাব থাকবে না – জেরো হাংগার ও zero poverty। সম্পূর্ণ অর্জনের জন্য শতভাগ মনযোগ, শতভাগ অংশগ্রহণ এবং শতভাগ ক্ষমতায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

২) সার্বজনীনতা/ Universal: ধনী দেশগুলো গরীব দেশগুলোকে সাহায্য করবে, এই ছিল এমডিজি’র বাস্তবতা। এরপর অনেক পরিবর্তন এসেছে বিশ্ব সমাজে। ODA-র পরিমাণ নামতে নামতে শূন্যে চলে এসেছে। সমস্যাটি দেশ বা জাতিভিত্তিক নয়। সমস্যা হলো, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং ধনী গরীবের পার্থক্য, যা সকল দেশেই আছে। ইউরোপের মতো ধনী মহাদেশে তিনকোটি বস্তিবাসী আছে। তাই এসডিজিতে সকল দেশকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

৩) সর্বব্যাপী/ Comprehensive: এমডিজিতে ৮টি লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এসডিজি’র জন্য উচ্চপর্যায়ের কমিটি প্রথমে ১২টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু দারিদ্রতার মূলোৎপাটন, মানবাধিকার, বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতা, এবং সুশাসনকে বিবেচনায় এনে ওপেন ওয়ার্কিং গ্রæপ মোট ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরে। এটিই চূড়ান্ত। টেকসই উন্নয়নের জটিল বিষয়গুলো এমডিজিতে সেভাবে স্থান পায় নি, যা এসডিজিতে গুরুত্ব পেয়েছে।

৪) ক্ষুধামুক্তির শর্তাবলী/ Hunger Issues: ‘ক্ষুধামুক্তির তিনটি স্তম্ভকে’ (নারীর ক্ষমতায়ন, সকলকে সম্পৃক্তকরণ এবং স্থানীয় সরকারের সাথে অংশিদারিত্ব) এমডিজিতে তেমন গুরুত্ব দেওয়া যায় নি। জেন্ডার, ক্ষমতায়ন, এবং সকল পর্যায়ে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ইত্যাদি জটিল বিষয়গুলোকে এসডিজিতে আরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এসডিজি ও এমডিজির পার্থক্য | ৫) অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা/ Inclusive Goal-setting: এমডিজি নির্ধারিত হয়েছিল টপ-ডাউন প্রক্রিয়ায়, অর্থাৎ উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ও বিশ্বনেতাদের অংশগ্রহণে। কিন্তু এসডিজি নির্ধারণে সকল পর্যায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে, যা বিশ্বে এর আগে কখনও হয় নি। প্রায় ১০০ দেশের সাথে মুখোমুখি সভা হয়েছে এবং কোটি মানুষের মতামত সংগ্রহ করা হয়েছে বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে।

৬) দারিদ্রতা থেকে ক্ষুধাকে আলাদাকরণ/ Distinguishing Hunger and Poverty: এমডিজিতে ক্ষুধা ও দারিদ্রকে একসাথে MDG1-এ রাখা হয়েছিল। মনে করা হয়েছিল একটি সমাধান হলেই আরেকটির সুরাহা হয়ে যাবে। কিন্তু এসডিজিতে খাদ্য এবং পুষ্টি নিরাপত্তাকে ‘দারিদ্রতা’ থেকে আলাদাভাবে দেখা হয়েছে।

৭) অর্থায়ন/ Funding: এমডিজিতে মনে করা হয়েছিল যে, ধনী দেশগুলো থেকে সহায়তা নিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে সেটি সফলতা পায় নি। এসডিজিতে টেকসই এবং সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নকে প্রধান কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তাতে সংশ্লিষ্ট দেশের রাজস্ব বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

৮) শান্তি প্রতিষ্ঠা/ Peace Building: বিগত ১৫ বছরে দেখা গেছে যে শান্তিপূর্ণ এবং সুশাসনভুক্ত দেশগুলো অগ্রগতি লাভ করেছে। ১৫ বছর পর এখন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধুমাত্র বিরোধপূর্ণ দেশগুলোতেই ‘তীব্র দারিদ্রতা’ থেকে যাবে। ক্ষুধা ও দারিদ্রতাকে দূর করার জন্য তাই শান্তি প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। কিন্তু এটি এমডিজিতে গুরুত্ব পায় নি, এসডিজিতে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এসডিজি ও এমডিজির পার্থক্য | ৯) মূল্যায়ন ও জবাবদিহিতা/ M&E and Accountability: পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন ও জবাবদিহিতা সম্পর্কে এমডিজিতে কিছুই বলা নেই। এসডিজিতে ২০২০ সালের মধ্যে তথ্য বিপ্লব ঘটানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাতে জাতীয় পর্যায়ে মানুষের আয়, বয়স, জেন্ডার, নৃতাত্বিক তথ্য, অভিবাসন পরিস্থিতি, ভৌগলিক অবস্থান এবং অন্যান্য তথ্য সম্পর্কে মানসম্মত, সময়নিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য বিবরণ তৈরি করা হবে।

১০) মানসম্মত শিক্ষা/ Quality Education: এমডিজিতে কেবল সংখ্যার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যেমন: ভর্তির সর্বোচ্চ হার, পাশের হার ইত্যাদি। তাতে সংখ্যা বাড়লেও গুণগত মান গিয়ে তলায় ঠেকেছে। কিন্তু এসডিজিতে মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে একটি ‘মানবিক বিশ্ব’ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You're currently offline !!

error: Content is protected !!