প্রাচীনকালে বাংলা বিভিন্ন খণ্ড খণ্ড জনপদে বিভক্ত ছিল। আজকে আমরা প্রাচীন বাংলার এরকম আটটি জনপদ নিয়ে আলোচনা করবো। বাংলার জনপদগুলোর নাম পাওয়া যায় খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দি থেকে ষষ্ঠ শতাব্দিতে। তখন প্রাচীন বাংলার বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। প্রতিটি অঞ্চলের শাসকগণ স্বাধীন দেশের মতো নিজের অঞ্চলকে শাসন করতেন। তখন থেকে প্রাচীন বাংলার এসব স্বাধীন অঞ্চলগুলোর নাম দেওয়া হয় জনপদ। নিম্নে প্রাচীন বাংলার জনপদগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
বঙ্গ জনপদ
প্রাচীন বঙ্গ একটি শক্তিশালি রাজ্য ছিল। ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জ, কুষ্টিয়া, নদীয়া, শান্তিপুর, পটুয়াখালীর নিম্ন জলাভূমি, পশ্চিমের উচ্চভুমি যশোর এবং ঢাকার বিক্রমপুর সংলগ্ন অঞ্চল ছিল বঙ্গ জনপদের অন্তভূক্ত।
গৌড় জনপদ
বাংলার উত্তরাংশ অর্থাৎ, উত্তর বঙ্গে ছিল গৌড় রাজ্যের অস্তিত্ব। সপ্তম শতকে রাজা শশাঙ্ক বিহার ও উড়িষ্যা পর্যন্ত গৌড় রাজ্যের সীমা বিস্তার করেছিলেন। প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোকে শশাঙ্ক গৌড় নামে একত্রিত করেছিলেন। শশাঙ্কের সময়ে গৌড় রাজ্যোর রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদের কর্ণসুবর্ণ। গৌড় নগরী সুলতানী আমলে বাংলার উত্তর পশ্চিমাংশ, বিহার ও উড়িষ্যা অঞ্চলের রাজধানী ছিল।
পুন্ড্র জনপদ
প্রাচীন বাংলায় বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার অবস্থান ভুমিকে কেন্দ্র করে পুন্ড্র জনপদ গড়ে উঠে। এটি বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন জনপদ। পুন্ড্র রাজ্যের রাজধানী ছিল পুন্ড্রবর্ধন এবং এর বর্তমান অবস্থান বগুড়ার মহাস্থানগড়।
সমতট
হিউয়েন সাংয়ের বিবরণ অনুযায়ী সমতট ছিল বঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ পূর্বাংশের একটি রাজ্য। সমতট রাজ্যের রাজধানী ছিল কুমিল্লা জেলার বড়কমতা। মেঘনা নদীর মোহনাসহ বর্তমান কুমিল্লা ও নোয়াখালি অঞ্চল সমতট রাজ্যের অন্তভূক্ত ছিল।
বরেন্দ্র
রাজশাহী বিভাগের উত্তর পশ্চিমাংশ অর্থাৎ রংপুরের সমান্য অঞ্চল ব্যতীত উত্তরবঙ্গের বিস্তৃত অঞ্চলে বরেন্দ্রভূমি গড়ে উঠে। বর্তমানে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরের লালমাটি সমৃদ্ধ অঞ্চলই বরেন্দ্রভূমি গড়ে উঠে।
রাঢ় জনপদ
বাংলার আরেকটি প্রাচীন জনপদ হচ্ছে রাঢ়। তৎকালীন রাঢ় অঞ্চলের তাম্রলিপিতে বিখ্যাত নৌ বন্দর ও বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। ভাগীরথী নদীর পশ্চিম হতে গঙ্গা নদীর দক্ষিণাঞ্চল রাঢ় অঞ্চলের অন্তর্গত ছিল।। অজয় নদী রাঢ় অঞ্চলকে দুইভাগে বিভক্ত করেছে। রাঢ়ের দক্ষিণে মেদিনীপুর জেলায় তাম্রলিপি ও দণ্ডভুক্তি নামে দুটি ছোট বিভাগ ছিল।
হরিকেল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্ষিত দুটি শিলালিপিতে হরিকেল সিলেটের সাথে সমার্থক বলে অভিহিত করা হয়েছে। ত্রিপুরার শৈলশ্রেণির সমান্তরাল অঞ্চল সিলেট থেকে চট্রগ্রাম পর্যন্ত হরিকেল বিস্তৃত ছিল। হরিকেল ভারতবর্ষের পূর্ব প্রান্তের অঞ্চল।
বাকেরগঞ্জ
প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর মধ্যে বাকেরগঞ্জ অন্যতম। এই জনপদটি বরিশাল, খুলনা ও বাঘেরহাট নিয়ে গঠিত। অনেকে বাকেরগঞ্জ জনপদটিকে চন্দ্রদ্বীপ বলে অভিহিত করেন। কিন্তু চন্দ্রদ্বীপ বরিশালের পূর্বনাম। চন্দ্রদ্বীপ মূলত বাকেরগঞ্জের অংশ ছিল। নীহাররঞ্জন রায় বলেছেন: “চন্দ্রদ্বীপ ছিল বর্তমান বাকেরগঞ্জ অঞ্চলে”। বর্তমানে বাকেরগঞ্জ বরিশাল জেলার একটি উপজেলা।