লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব

১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ অবিভক্ত পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরে নিখিল ভারত মুসলিমলীগের অধিবেশনে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক “লাহোর প্রস্তাব” পেশ করেন। বিপুল পরিমাণ উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ২৪ মার্চ প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। নিচে লাহোর প্রস্তাবের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ দেওয়া হলো:


০১। ভৌগোলিক দিক থেকে সংলগ্ন এলাকাগুলোকে পৃথক অঞ্চল বলে গণ্য করতে হবে।
০২। উত্তর-পশ্চিম ও পূর্ব ভারতের সমস্ত অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সমন্বয়ে একাধিক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রগঠন করতে হবে। এবং এ সমস্ত স্বাধীন রাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য হবে সার্বভৌম ও স্বায়ত্তশাসিত।

০৩। ভারতের ও নবগঠিত মুসলিম রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু সম্প্রাদায়ের সাংস্কৃতিক, শাসনতান্ত্রিক ও অন্যান্য অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের কার্যকর ব্যবস্থা করা হবে। অর্থাৎ, সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষার সার্বিক ব্যবস্থা সংবিধানে থাকতে হবে।
০৪। দেশের যেকোনো ভবিষ্যৎ শাসনতান্ত্রিক পারিকল্পনায় উক্ত বিষয়গুলোকে মৌলিক নীতি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

এখনো amarStudy অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড না করে থাকলে গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করতে এখানে যানঃ Download Now. অ্যাপটি বিসিএস’সহ প্রায় সব রকমের চাকুরির প্রস্তুতির সহায়ক।

লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব:

১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব পূর্ব-পাকিস্তানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ প্রস্তাবের মাধ্যমে শোষিত, উপেক্ষিত এক বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্টভাবে মানুষের সামনে উঠে আসে। মূলত লাহোর প্রস্তাবের পর থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশের পট-পরিবর্তন শুরু হয়। নিচে লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:

০১। দ্বিজাতি তত্ত্বের সূচনা: ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দুদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে সংখ্যালঘু মুসলমানরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের স্বীকার হয়। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য লাহোর প্রস্তাবে “এক জাতি, এক রাষ্ট্র” নীতির দাবি করা হয়। দাবির মূল কথাই হলো হিন্দুদের জন্য একটি রাষ্ট্র এবং মুসলমানদের জন্য আলাদা একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করতে হবে। এ নীতির প্রেক্ষিতেই মোহম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্বের ঘোষণা দেন।


০২। স্বাধীন বাংলাদেশের রূপরেখা: লাহোর প্রস্তাবের মূল বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলার বাঘ এ.কে. ফজলুল হক বাংলাদেশকে স্বাধীন করার পথ সুগম করতে চেয়েছিলেন। লাহোর প্রস্তাব পাশ হলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নতুন স্বপ্নের সৃষ্টি হয়। যা ইংরেজদের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পায়।


০৩। ‍মুসলমানদের স্বতন্ত্র স্বীকৃতি: ইংরেজ আমল শুরু হওয়ার পর থেকেই ভারতীয় মুসলমানদের আধিপত্য হ্রাস পেতে থাকে। মুসলমানরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়ে বাস করা শুরু করে। তাদের মধ্যে এই উপলদ্ধি হয় যে ভারত স্বাধীনতা অর্জন করলে মুসলমানরা হিন্দুদের তুলনায় পিছিয়ে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপিত হলে মুসলমানদের মধ্যে স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বার উপলদ্ধি ঘটে। যা স্বাধীন পাকিস্তান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


০৪। ভারত ও পাকিস্তানের সৃষ্টি: লাহোর প্রস্তাবে ভারতীয় উপমহাদেশকে ভেঙ্গে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে হিন্দু ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে ১৪ আগষ্ট পাকিস্তান এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা নিয়ে ১৫ আগষ্ট ভারত রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়।


০৫। মুসলিম জাতিয়তাবাদের উন্মেষ: লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম জাতীয়তাবাদ তীব্র আকার ধারণ করে এবং বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে মনবিলে মকসুদের দিকে এগিয়ে যায়। ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে এ মুসলিম জাতীয়তাবাদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


০৬। ধর্মীয় ঐক্য সৃষ্টি: ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে মুসলিমলীগ তেমন ভালো ফল করতে পারেনি। এতে মুহম্মদ আলী জিন্নাহ বিচলিত হয়ে পড়েন। ১৯৪০ সালে লাহোরে অধিবেশন ডাকেন। এ অধিবেশনে মুসলমানদের অধিকারের দাবিতে এ.কে ফজলুল হক প্রস্তাব উত্থাপন করেন, যা লাহোর প্রস্তাব নামে খ্যাত। এ প্রস্তাব পাশ হওয়ার পরে ভারতের সকল মুসলিম এটাকে স্বাগত জানায় এবং মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে শক্তিশালী ঐক্য সৃষ্টি হয়।


উপরিউক্ত আলোচনার উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, লাহোর প্রস্তাব ছিল মুসলমানদের স্বার্থরক্ষা ও স্বতন্ত্র আবাসভূমি গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রস্তাব, যা ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত করে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র গঠন করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।


তথ্য সংগ্রহ করে লিখেছেন: Al-Amin Islam

আরো পড়ুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You're currently offline !!

error: Content is protected !!
Scroll to Top