পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনা সংক্রান্ত সমস্যা

পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনা সংক্রান্ত সমস্যা || ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হয়। কিন্তু স্বাধীনতা লাভের পর ভারত একটি শাসনতন্ত্র রচনা করতে পারলোও পাকিস্তান তা করতে পারেনি। ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনানুসারে পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান তৈরির উদ্দেশ্যে উক্ত সালেই প্রথম গণ-পরিষদ গঠন করা হয়। এটাই পাকিস্তানের প্রথম গণ-পরিষদ নামে খ্যাত। আর পরবর্তীতে এই গণ-পরিষদই পাকিস্তানের সংবিধান তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পটভূমি : ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা আইনের দ্বারা পাকিস্তান গণ-পরিষদকে সংবিধান প্রণয়নের পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয়। সংবিধান প্রণয়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গণপরিষদ ১৯৪৯ সালের মার্চ মাসে আদর্শ প্রস্তাব নামে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। এই প্রস্তাবে সংবিধানের মূল আদর্শের উল্লেখ ছিল। প্রথম গণপরিষদের কাজ ছিল মূলত দুটি।যথা :

এখনো amarStudy অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড না করে থাকলে গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করতে এখানে যানঃ Download Now. অ্যাপটি বিসিএস’সহ প্রায় সব রকমের চাকুরির প্রস্তুতির সহায়ক।

প্রথমত : সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান রচনা করা। দ্বিতীয়ত : যতদিন সংবিধান রচিত না হবে ততদিন পর্যন্ত এ গণপরিষদ কেন্দ্রীয় সভা হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এ গণপরিষদ সুদীর্ঘ সাত বছরেও দেশের জন্য সংবিধান রচনা করতে সক্ষম হয় নি ১৯৪৯ সালের মার্চ মাসে গণপরিষদ সংবিধান প্রণয়নের জন্য যে আদর্শ প্রস্তাব অনুমোদন করে তাতে গণপরিষদ কর্তৃক কতকগুলো বিষয় সন্নিবেশিত হয়। বিষয়গুলো ছিল নিম্নরূপ : প্রথমত : স্বাধীন, সার্বভৌম পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান রচনা করা হবে।

দ্বিতীয়ত : পাকিস্তান হবে একটি যুক্তরাষ্ট্র।

তৃতীয়ত : পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

চতুর্থত: পাকিস্তান একটি ইসলামি রাষ্ট্র বলে গণ্য হবে। পঞ্চমত : পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বাধীনতা ও স্বার্থ রক্ষিত হবে এবং সংবিধানের তদ্রূপ ব্যবস্থা থাকবে।

ষষ্ঠত : সংবিধানে জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ লিপিবদ্ধ থাকবে।

সপ্তমত: সংবিধানের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। অষ্টমত : সংবিধানের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা স্বীকৃত ও পূর্ণভাবে রক্ষিত হবে।

নবমত : পাকিস্তানের জনগণ যাতে উন্নত জীবনের অধিকারী হতে পারে এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় যথাযথ অংশগ্রহণ করতে
সক্ষম হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্রের প্রকৃতি নির্ধারণ করাই ছিল এগুলোর প্রধান উদ্দেশ্য। কিছু সমালোচনা সত্ত্বেও গণ পরিষদ কর্তৃক আদর্শ প্রস্তাব অভিনন্দিত হয়। গণপরিষদ কর্তৃক আদর্শ প্রস্তাবের অনুমোদন পাকিস্তানের সাংবিধানিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সত্যিই স্বাধীনতা অর্জনের পর এটাকেই পাকিস্তানের সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলা চলে।

এ থেকে বোঝা যায় যে, পাকিস্তানের সংবিধান বা শাসনতন্ত্র প্রণেতাগণ বাস্তবিকই শাসনতন্ত্র রচনার কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তারপরও কিন্তু পাকিস্তানের গণপরিষদ সুদীর্ঘ ৯ বছরে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করতে পারে নি। অথচ প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত মাত্র আড়াই বছরের মধ্যে সংবিধান রচনা করেছিল।

সংবিধান প্রণেতাদের সম্মুখে উপস্থিত সমস্যাবলি (The Problems before Constitute) : পাকিস্তানের স্থায়ী সংবিধান তৈরি করতে গিয়ে সংবিধান প্রণেতাগণকে কতকগুলো বিতর্কিত বিষয় বা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, যার ফলে পাকিস্তানের সংবিধান রচনায় দীর্ঘকালীন সময় ব্যয়িত হয়। সংবিধান প্রণয়নকালে যে সমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে সেগুলো নিম্নে ক্রমধারায় বর্ণনা করা হলো :

পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনা সংক্রান্ত সমস্যা :

০১। আদর্শভিত্তিক সমস্যা : পাকিস্তানের আন্দোলনের ভিত্তি ছিল দ্বি-জাতি তত্ত্ব। পাক-ভারত উপমহাদেশের মুসলমানেরা যে একটা স্বতন্ত্র জাতি এই আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুসলিম নেতৃবৃন্দ পাকিস্তান আন্দোলনকে দুর্বার করে গড়ে তোলেন। ফলে পাকিস্তানের বিরাট এক জনসংখ্যা প্রথম হতে দাবী উত্থাপন করে যে, পাকিস্তান হবে একটা ইসলামী রাষ্ট্র। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান বলেন “A state where the brotherhood of Islam will prevail where there is no minority or majority and where human dignity. and human equity prevail.”

অন্যদিকে উদারনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের নিকট ইসলামি রাষ্ট্রের ধারণা ছিল অনেকটা সেকেলে। ১৯৪৯ সালে যখন আদর্শ প্রস্তাব গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয় তখনও গণপরিষদে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সংবিধান রচয়িতাদের একটা বিরাট অংশ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে। হিন্দু সম্প্রদায়ের নিকট ইসলামি ব্যবস্থা ছিল অগ্রহণযোগ্য। কিছু কিছু মুসলমান সদস্যও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন করে। সুতরাং পাকিস্তানের সংবিধান রচনার প্রাথমিক পর্যায়ে আদর্শগত সমস্যা গুরুতর আকার ধারন করে।

০২। সরকারের স্বরূপ : পাকিস্তান রাষ্ট্রের সরকারের স্বরূপ এককেন্দ্রিক হবে না যুক্তরাষ্ট্রীয় হবে এই নিয়ে তমুল মতবিরোধ সংবিধান প্রণয়নে পাহাড় সমান সমস্যার সৃষ্টি করে। পাকিস্তানের দুই অঞ্চল ছিল বিচ্ছিন্ন এবং উভয়ের মধ্যে ব্যবধান ছিল প্রায় বারশত মাইলেও বেশি। উভয় অঞ্চলের ভাষা, কৃষ্টি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, জীবন ব্যবস্থা ছিল স্বতন্ত্র।

উভয় অঞ্চলের জনসাধারণের খাদ্য, বস্ত্র এমনকি মানবিক গঠনও ছিল ভিন্ন প্রকৃতির ফলে আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের প্রয়োজনীয়তা ছিল অত্যধিক বেশি। অন্যদিকে উভয় অঞ্চলের সামাজিক শাসন ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত অনুপযোগী। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মাধ্যমেও পাকিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং উন্নয়নমুখী প্রক্রিয়া ও উভয় অঞ্চলের মধ্যেও গড়ে তুলেছিল বৈষম্যের পাহাড়। এসব কারণে সংবিধান প্রণয়নের অগ্রগতিকে ভীষণভাবে ব্যাহত করে।

০৩। রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে : পাকিস্তান বহু ভাষাভাষী রাষ্ট্র হওয়ায় রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য দেখা যায়। বাংলা ভাষা পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভাষা হওয়ায় সত্ত্বেও বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে পাকিস্তানের বাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টা করা হয় অপরদিকে পাকিস্তানের গণপরিষদের অধিবেশনে প্রথম থেকেই বাঙালি সদস্যগণ বাংলাভাষার উপযুক্ত মর্যাদা পাবার জন্য দাবি জানাইতে ছিলেন।

পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনা সংক্রান্ত সমস্যা || ১৯৫০ সালে প্রকাশিত মূলনীতি কমিটির প্রথম রিপোর্টে একমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানী জনগণ উক্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ জানায়। ফলে গণপরিষদে উক্ত রিপোর্টের বিচেনা স্থগিত করা হয়। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২ সালে এক ঐতিহাসিক আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানে গড়ে ওঠে। রাষ্ট্রভাষার এই বিতর্কিত প্রশ্নে গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করতে সংবিধান প্রণেতাগণকে দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হয়।

০৪। কেন্দ্রীয় আইন সভায় প্রতিনিধত্বের প্রশ্ন ; পাকিস্তানের বিভিন্ন আইন সভায় বিভিন্ন অঞ্চলকে কি পরিমাণ প্রতিনিধিত্ব প্রদান করা হবে সেই প্রশ্নে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণেতাগণের মধ্যে বড় রকমের মতবিরোধ দেখা দেয়। পাকিস্তানের বিভিন্ন ও বিক্ষিপ্ত এলাকাগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী একটি কেন্দ্রীয় আইনসভায় সর্বসম্মত গঠন রীতি উদ্ভাবন করা অত্যন্ত দুরূহ ছিল। আইনসভার বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে এমন প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে কোন একটি অঞ্চল অন্যান্য অঞ্চলের উপর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে না পারে।

০৫। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন নিয়েও দুই অংশের মধ্যে মতবিরোধ ছিল। এই সমস্যা একমাত্র পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রেই বিদ্যমান নয়, অন্যান্য যুক্তরাষ্ট্রেও এই বিরোধ দেখা দেয়। কেউ কেউ প্রদেশের জন্য সর্বাধিক স্বায়ত্বশাসন দাবি করতে ছিলেন। আবার কেউ কেউ প্রদেশের হাতে সীমিত ক্ষমতা নিয়ে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার স্থাপনের পক্ষপাতী ছিলেন। উভয় দলই নিজ নিজ দাবীর প্রতি ছিল অটল। ফলে তাদের মধ্যে আপোষ রক্ষা করতে সংবিধান প্রণেতাগণকে বেগ পেতে হয়।

রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে প্রাদেশিক নেতৃবৃন্দ এমন মনোভাব পোষন করতেন যাকে কেউ কেউ বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকর বলে মনে করতেন, যা শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি করেছিল। প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনের দাবীদারগণ যথেষ্ট ন্যায়সঙ্গতভাবেই দাবী করেন যে, দেশে ভৌগোলিক ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে কেন্দ্রের ক্ষমতা সুস্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করে দেওয়া এবং অবশিষ্ট ক্ষমতা প্রদেশের হাতে ন্যস্ত করা উচিত।

প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনের দাবী প্রথম পূর্ব পাকিস্তান থেকেই করা হয়। কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের যথেষ্ঠ ন্যায়সঙ্গত অভিযোগ ছিল। এজন্য পূর্ব পাকিস্তান ভবিষ্যত শাসনতন্ত্রে ন্যায্য অংশের নিশ্চয়তা বিধান করতে চেয়েছিল। ফলে ক্ষমতা বণ্টনের সমস্যা নিয়ে শাসনতন্ত্র প্রণেতাদের যথেষ্ট সময় ব্যয় করতে হয়।

০৬। আইন ও শাসন বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক : শাসনতন্ত্র প্রণেতাগণের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ছিল শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক নিরূপণ করা। যদিও ব্রিটিশ ও ডোমিনিয়ন আদর্শের পার্লামেন্টারী শাসন ব্যবস্থার অধীনে এই দেশের রাজনৈতিক জীবন আরম্ভ হয়েছিল, তথাপিও পার্লামেন্টারী ধরনের শাসনতন্ত্র হাস্যস্পদ হয়ে দাঁড়াবে এবং তাই এখানে স্থায়ী সরকার সম্ভব হবে না।

পার্লামেন্টারী ও রাষ্ট্রপতী সরকারের গুনাগুণ নিয়ে গণপরিষদের ভিত্তিতে ও বাইরে দীর্ঘ আলোচনা চলেছিল। কোন শাসন ব্যবস্থাটি এদেশের জন্য উপযুক্ত ইহা নির্ধারণের জন্য সংবিধান প্রণেতাগণ দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে যান। ফলশ্রুতিতে সংবিধান প্রণয়নে দীর্ঘ প্রশ্নও দেখা দেয়।

পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনা সংক্রান্ত সমস্যা :

০৭। সংখ্যালঘুদের সমস্যা : ইসলামি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পাকিস্তানের বসবাসকারী সংখ্যালঘুদের ন্যায়সঙ্গত ধর্মীয় সামাজিক,
রাজনৈকি, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ সংবিধান মোতাবেক সংরক্ষণজনিত প্রশ্নও এই সংবিধান প্রণয়নে একটি জটিল
সমস্যার সৃষ্টি করে।

০৮। নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্যা : পাকিস্তানে পৃথক না যুক্ত নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে এই ব্যাপারেও সংবিধান প্রণেতাগণকে বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অনেকে জাতীয় সংহতি ও ঐক্যের তাগিদে যুক্ত নির্বাচন ব্যবস্থার পক্ষে মত প্রকাশ করেন, আবার অনেকের মতে পৃথক নির্বাচনের ভিত্তিতে পাকিস্তান কায়েম করা হবে বলে পৃথক নির্বাচনের পক্ষে মত দেন। ফলে এই ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান করার জন্য প্রণেতাগণদের যথেষ্ট সময় ব্যয় করতে হয়।

০৯। রাজনৈতিক সমস্যা : পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর হতেই পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানের অংশগ্রহণ ছিল
হতাশাব্যঞ্জক। সামরিক বাহিনীতে পূর্ব পাকিস্তানের অংশগ্রহণ ছিল নগন্য। উচ্চতর পর্যায়ে বিশেষ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে পূর্ব
পাকিস্তানের কোন ভূমিকা ছিল না। পাকিস্তানের রাজধানী পশ্চিম পাকিস্তানে হওয়ায় এবং উভয় অঞ্চলের মধ্যে যাতায়াত ব্যবস্থার অপ্রতুলতার জন্য পূর্ব পাকিস্তান ছিল বিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক এই অস্থিরতার কারণে সংবিধান প্রণয়নের গতি হয় মন্থর।

১০। উদ্ধান্ত সমস্যা : দেশ বিভাগের সময় হাজার হাজার ভারতীয় মুসলমান উদ্বৃত্ত পাকিস্তানে আগমন করে। তাদের খাওয়া ও থাকার সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সংবিধান প্রণেতাগণকে প্রচুর সময় নষ্ট করতে হয়েছিল বলে সংবিধান প্রণয়নের কাজে প্রচুর ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।

উপর্যুক্ত সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান গণপরিষদ করাচী অধিবেশনে প্রথমে এক ইউনিট বিল উত্থাপন করে এবং ১৯৫৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তা গৃহীত হয়। এর ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশগুলোর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে সেখানে একটি মাত্র প্রদেশের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালের ৯ জানুয়ারি গণপরিষদে “সংবিধান বিল” উত্থাপিত হয় এবং ২৯ ফেব্রুয়ারি তা গৃহীত হয়। এভাবে দীর্ঘ নয় বছর পর পাকিস্তান একটি সংবিধান লাভ করে।

আরো পড়ুুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You're currently offline !!

error: Content is protected !!