বিসিএস ক্যাডার

কেন সবাই বিসিএস ক্যাডার হতে চায়?

বিসিএস ক্যাডার | বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস সংক্ষেপে বিসিএস নামে পরিচিত। কোথাও বিসিএস নিয়ে সামান্য কিছু একটা হলেই অনার্সের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে ছেলে-মেয়েদের জন্য পাত্র-পাত্রী খোঁজ করা পিতা-মাতা পর্যন্ত মোটামুটি সবাই কান খাড়া করেন। চাকরিপ্রার্থীদেরও পছন্দের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে বিসিএস। রবার্ট ব্রুসের মতো সাতবার চেষ্টা করে সফল না হলেও কেন অনেকেই হাল না ছেড়ে লেগে থাকেন বিসিএসের পিছনে? কী আছে বিসিএসে?


বিসিএসে শিক্ষাগত যোগ্যতা কেমন লাগে?

বিসিএস ক্যাডার | দেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে যখন অনার্স পাসের রেজাল্ট ও সার্টিফিকেট ছাড়া আবেদন করা যায় না, তখন শুধু অনার্স, আবারও বলছি, শুধু অনার্স চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েই আপনি বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আবেদনের জন্য রেজাল্ট ও সার্টিফিকেটের কোন দরকার নাই। বুঝলেন কিছু? অন্যান্য চাকরিতে যখন বিবিএ বা এমবিএ বা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি ছাড়া আবেদন করা যায় না, সেখানে গাছ, লতা, পাতা বা অন্য যেকোন অদ্ভুত বিষয়েই পড়েন না কেন আপনি বিসিএসে আবেদন করতে পারবেন। এমনকি পাস কোর্সে ডিগ্রী পাস করে মাস্টার্স করলেই আপনি বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন করার যোগ্য। ঠান্ডা মাথায় ব্যাপারটা একবার ভাবুন।

এখনো amarStudy অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড না করে থাকলে গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করতে এখানে যানঃ Download Now. অ্যাপটি বিসিএস’সহ প্রায় সব রকমের চাকুরির প্রস্তুতির সহায়ক।

বিসিএস ক্যাডার | বিবিএ বা এমবিএ বা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি থাকলেও অন্যান্য চাকরিতে ভালো গ্রেড চাওয়ার কারণে যখন আবেদন করা যায় না, তখন এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স ও মাস্টার্স এই চারটা পরীক্ষার যেকোন দুটি বা তাঁর বেশি পরীক্ষার তৃতীয় শ্রেণি না থাকলেই আপনি বিসিএসে আবেদন করতে পারবেন। মাথা খারাপ করার মতোই কথা।


বিসিএস ক্যাডার | অনেক চাকরির সার্কুলারে অভিজ্ঞতা চাওয়ার কারণে যখন সার্কুলার ছুয়ে দেখতেই ভয় লাগে, আবেদন করা তো দূরের কথা, বিসিএস তখন ফ্রেস গ্রাজুয়েটদের আশার আলো। বিসিএস দিতে কোন চাকরির অভিজ্ঞতা থাকা লাগে না। অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে আবেদন করে ক্যাডার হয়ে প্রশাসন, পুলিশ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ইত্যাদি ক্যাডারে সুনামের সাথে চাকরি করছেন অনেকেই।


বিসিএসে কি দুর্নীতি হয়?

বিসিএস ক্যাডার | দেশের অন্যান্য চাকরির পরীক্ষার তুলনায় বিসিএসে দুর্নীতি নাই বললেই চলে বলে আমার ধারণা। পিএসসির বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক স্যারের মতে, আপনি যোগ্য হলে কোনো রেফারেন্স ছাড়া বা তদবির ছাড়াই বিসিএসে সুযোগ পাবেন। যোগ্যতা ছাড়া এখানে আসার সুযোগ নেই। অনেকের মনে হতে পারে, কেউ হয়তো রেফারেন্স বা তদবিরের মাধ্যমে বিসিএসে আসতে পেরেছেন বা পারছেন। আসলে তা নয়। রেফারেন্স বা তদবিরের সুযোগ এখন নেই।


বিসিএসে সামাজিক মর্যাদা কেমন?

বিসিএস ক্যাডার | বিসিএসের চাকরিতে অন্যান্য চাকরির চেয়ে সামাজিক মর্যাদা বেশি। প্রশ্ন আসতে পারে, কেন বেশি? আপনি হয়তো জানেন সরকারী বিভিন্ন পদের মর্যাদা অনুসারে একটা তালিকা আছে সরকারের। যার নাম ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্স। বিসিএসের চাকরি করলে আপনি একদিন না একদিন ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্সে স্থান পাবেনই।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করে একটা সময় আপনি সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যেতে পারবেন। লাল বা নীল পাসপোর্ট ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। সেলফ ড্রইং অফিসার হিসেবে গণ্য হবেন। ভিজিটিং কার্ডে সরকারি মনোগ্রাম ব্যবহার করতে পারবেন।


চাকরিতে স্কলারশিপ:

বিসিএস ক্যাডার | অন্যান্য চাকরির চেয়ে বিসিএসের চাকরিতে স্কলারশিপ বেশি। আপনি স্কলারশিপ ও শিক্ষা ছুটি নিয়ে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে যেতে পারবেন। সুতরাং চাকরিতে যোগ দেয়ার পরও পড়ালেখা বন্ধ হচ্ছে না। সুযোগ থাকছেই। চাকরিতে থেকেই আপনি আপনার মেধার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটাতে পারবেন।


উন্নত প্রশিক্ষণের সুযোগ:

বিসিএস ক্যাডার | দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষনের সুযোগ পাবেন। এতে নিজেকে দক্ষ করে দেশকে কিছু দেওয়ার পাশাপাশি সরকারি অর্থে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।


বিসিএসে প্রেষন সুবিধা:

বিসিএস ক্যাডার | বিসিএসের চাকরিতে প্রেষণ সুবিধা পাবেন। তাতে বৈধ উপায়ে ভালো আর্থিক সুবিধা পাবেন। প্রেষন কী জিনিস? সরকার তাঁর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এক অফিসের কাউকে অন্য আরেক অফিসে নিয়োগ দেয়। এটাই প্রেষণ। র‍্যাবে যারা কাজ করেন তাঁরা সবাই প্রেষণে কাজ করেন। এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের মধ্যে পুলিশ ৪৪%, ডিফেন্স ৪৪%, আনসার ৫%, বিজিবি ৫%, কোস্ট গার্ড ১%, প্রশাসন ১%।


লিয়েন সুবিধা:

বিসিএস ক্যাডার | লিয়েন সুবিধাও পাবেন। লিয়েন কী জিনিস? লিয়েন এক ধরণের ছুটি। সরকারী কর্মকর্তারা এই ছুটি নিয়ে নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে চাকরি করে ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারেন। লিয়েন শেষে তিনি আবার মূল চাকরিতে ফিরে এসে যথারীতি কাজ করবেন।


দেশসেবায় অংশগ্রহণের সুযোগ:

বিসিএস ক্যাডার | বিসিএসের চাকরির মাধ্যেমে সরাসরি দেশসেবায় অংশগ্রহণ করা যায়। পিএসসির বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক স্যারের মতে, আপনি মেধাবী হলে, দেশের স্বার্থে সরাসরি কাজ করার ইচ্ছে আপনার থাকলে অব্যশই বিসিএস বেছে নিতে পারেন। এই চাকরিতে তরুণরা সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান।


চাকরির নিরাপত্তা:

বিসিএস ক্যাডার | জব সিকিউরিটির দিক থেকেও বিসিএস সবার শীর্ষে। কারণ বিসিএসের চাকরি গেজেটেড চাকরি। গেজেটেড আবার কী? রাষ্ট্রপতি কোন অফিসিয়াল পেপারে স্বাক্ষর করলেই তা গেজেটেড হয়ে যায়। আর বিসিএস কর্মকর্তাদের নিয়োগদাতা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি।


বিসিএস ক্যাডার | পিএসসির বর্তমান চেয়ারম্যান স্যারের একটা কথা দিয়ে এই লেখার সমাপ্তি টানছি। বাংলাদেশ আর আগের বাংলাদেশ নেই। একটা সময় যারা আমাদের বটমলেস বাস্কেট বলেছে, তারাও এখন বলছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোলমডেল। এখন যারা মনে করেন এই ট্রানজিশনাল সময় বা উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণ করা দরকার, যারা দেশের ঋণ শোধ করতে চান, তাদের প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত বিসিএস।


লিখেছেন:  সৈকত তালুকদার | বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত

আরো পড়ুন:


amarStudy.com


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You're currently offline !!

error: Content is protected !!