ব্যাংক জব | সরকারী ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় মূল ধাপ তিনটি। প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং ভাইভা। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ দুইটি হলো প্রিলিমিনারি এবং রিটেন। প্রিলিমিনারি অংশে ভালো করার উপরে নির্ভর করবে আপনি রিটেন পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন কি-না। এর বাইরে আর প্রিলিমিনারি অংশের কোনো ভূমিকা নেই।
অন্যদিকে রিটেন অংশটাই হচ্ছে সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রাণ। যে স্কেলের উপরে ভিত্তি করে আপনাকে অ্যাসেস করা হবে তার বেশীরভাগ মার্কিং ই এই রিটেন অংশ থেকে আসবে। এখানে রয়েছে টোটাল ২০০ মার্কস।
এখানে ভালো করলে ২৫ মার্কস এর ভাইভা দিতে হবে। তবে, যেহেতু ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেই একটা মিনিমাম লেভেলের মার্কিং করার রেওয়াজ রয়েছে, সেহেতু মূল প্রতিযোগিতা কিন্তু এই রিটেন অংশেই! এখানে খুব ভালো করে যদি ভাইভা বোর্ডে গিয়ে আপনার পেটে বোমা মারলেও মুখ দিয়ে কোন কথা বের না হয়, তাহলেও এমনকি খুব একটা সমস্যা হয়না!
এই রিটেন অংশে কিভাবে ভালো করতে পারেন সেটা নিয়েই এই লেখা। লেখাটিকে দুইভাগে ভাগ করে পোস্ট করতে চাচ্ছি যেন খুব বেশী বড় না হয়ে যায় পোস্ট। আজকে প্রথম পর্ব। আশা করি অতিরিক্ত ব্যস্ততা না থাকলে সপ্তাহখানেকের মধ্যে পরের অংশ পোস্ট করতে পারবো।
প্রিলিমিনারি এক্সামে যেমন আপনি যতটুকু সঠিক উত্তর করতে পারবেন সে বিচারেই মার্কস পাবেন রিটেনে কিন্তু সেরকম না। প্রিলি তে যদি আপনি ৬০ টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেন তাহলে এক্স্যাক্টলি ৬০ মার্কসই পাবেন। অন্যদিকে রিটেনে ৬০ মার্কসের সঠিক উত্তর দিয়েও আপনি কোনভাবেই বলতে পারবেন না যে ৬০ এর মধ্যে ৬০ ই পাবেন। কারণ, রিটেনের একটি বড় অংশের মার্কিং সাবজেক্টিভ জাজমেন্টের উপরে ভিত্তি করে করা হয়।
এখানে এক্সট্রা অর্ডিনারি কিছু করতে গেলে আপনার ডেলিভারি এবং ভাগ্য…দুইটাই স্পেশাল হতে হবে। ব্যাংকের একটা বড় নিয়োগ পরীক্ষায় গড়ে প্রায় হাজার দশেক পরীক্ষার্থী রিটেন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এই দশ হাজার জনের খাতা যে নির্দিষ্ট একজন শিক্ষকই চেক করে মার্কিং করবেন এটা মোটেই না।
খাতা চেক করার জন্য বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি প্যানেল থাকে। ওই প্যানেলে যেমন কিপটা শিক্ষক থাকেন তেমনি উদার শিক্ষকও থাকেন। এক্স্যাক্টলি একই উত্তর দিয়ে দুইজন পরীক্ষার্থী দুইরকম মার্কিং ফেইস করতে পারেন দুইজন ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষক খাতা চেক করার কারণে। একজন হয়তো ১০ এর মধ্যে ৮ দেবে, অন্যজনের হাত থেকে ৬ এর বেশী কোনোভাবেই বের করতে পারবেন না!
এই বিষয়টা পুরোটাই ভাগ্যের উপরে নির্ভর করে। তবে এক্সামে মার্কিং করার একটা সুনির্দিষ্ট পলিসি থাকে। একারণে চাইলেও সেখানে মার্কসের ব্যবধান খুব বেশী হওয়ার সুযোগ নেই। বড়জোর ২-১ মার্কসের পার্থক্য হয়। কিন্তু ৫ টি প্রশ্নে ২ করে টোটাল ১০ মার্কসের ব্যবধান এসব পরীক্ষার ক্ষেত্রে কম না। এটা নিয়ে টেনশন না করে একে ভাগ্যের খেলা মনে করে মেনে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ৷
সুতরাং যে জায়গায় এধরণের মার্কসের ব্যবধান আসার কোনোই সুযোগ নেই সেসব জায়গায় বিন্দুমাত্র হেলাফেলা করা যাবে না। সে জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ম্যাথস আর ট্রানস্লেশন।
ব্যাংক জব | আজ রিটেন ম্যাথসের উপরেই ফোকাস করি। রিটেন অংশের ২০০ মার্কসের মধ্যে মিনিমাম ৩০-৫০ মার্কস থাকে ম্যাথস থেকে। এটি এমনই এক জায়গা…যেখানে সঠিক উত্তর করতে পারলে কোন পেপার চেকারের বাবারও ক্ষমতা নাই আপনার একটা মার্কস কেটে রাখে!
সুতরাং, এই ৩০-৫০ মার্কস নিশ্চিত করতে পারলে তা আপনাকে খুব সহজেই চাকুরী নিশ্চিত করার পথে দুইধাপ এগিয়ে দেবে অন্যদের চেয়ে। এ জায়গাটাতে তাহলে কতোটুকু ফোকাস করার দরকার নিজেই বুঝে নেন সেটা!
যাহোক, অনেকের কাছেই শুনি একই অংক প্রিলিমিনারি অংশের ম্যাথস করতে পারছে খুব সহজে, কিন্তু রিটেন ফরম্যাটে হলে করতে পারছেনা। একারণে প্রচুর প্রিলিতে টিকলেও একটা রিটেন এক্সামেও টিকতে পারছেনা! বিষয়টা কি আসলেও সম্ভব?
আসুন পুরো সিচুয়েশনটা পর্যালোচনা করে দেখিঃ প্রিলিমিনারি অংশের ম্যাথসে এমসিকিউ টাইপ প্রশ্ন থাকে, যেখানে প্রশ্ন থাকবে আর সম্ভাব্য সঠিক উত্তরের কয়েকটি অপশন দেওয়া থাকে। ওই অপশনগুলো থেকে আপনাকে সঠিক উত্তরটি বের করতে হবে। আপনি যদি সঠিক উত্তরটি বের করতে পারেন, তাহলে ধরে নেওয়াই যায় যে আপনি অংকটি করতে পারেন।
অন্যদিকে রিটেন ফরম্যাটে কি উত্তর করতে হয়? ওই যে সঠিক উত্তরটি আপনি বের করতে পেরেছেন, সেটি কিভাবে বের করেছেন সেই প্রসেসটি বর্ননা করে আসা। ধরে নেওয়া যায় যে, আপনি যদি আসলেও অংকটির সঠিক উত্তর বের করতে পারেন তাহলে সেটা করার প্রসেসও আপনি জানেন…তাই না? তাহলে তো আপনার আর রিটেন ফরম্যাটে অংক করে আসতে না পারার কোন কারণ নেই!
বাস্তবতা কিন্তু এমন বলছেনা! প্রচুর পরীক্ষার্থী এই সমস্যা ফেইস করছে প্রতিনিয়ত। তারা প্রিলিমিনারি এক্সামের ম্যাথস অংশে ভালো করলেও রিটেন অংশের ম্যাথস করতে গিয়ে খাবি খাচ্ছে। কেন হচ্ছে এমন?
আমার অবজারভেশন হলো…এই সমস্যার জন্য সবচেয়ে বড় দায় ম্যাথসের শর্টকাট মেথডের উপরে অতিরিক্ত নির্ভরশীল হওয়া। শর্টকাট মেথডে ম্যাথস করতে মজা লাগে অনেক। ইন্সট্যান্ট গ্রাটিফিকেশন সব যুগেই মানুষের জন্য একটা ফাঁদ হিসেবে ছিলো, আছে, থাকবে। কষ্ট না করে ফায়দা লুটতে পারলে কে আর কষ্ট করে! আরেকজন যদি আপনার হয়ে কাজ করে দেয় তাহলে শুধু শুধু নিজের কষ্ট করার দরকার কি! শর্টকাট মেথডও এমনই একটা জিনিস।
আরেকজন টেম্পলেট বা ফরম্যাট তৈরী করে দিয়েছে। আপনি জাস্ট ওই ফরম্যাটের মধ্যে সংখ্যাগুলোকে ছেড়ে দিচ্ছেন, আর কি মজায় মজায় উত্তরগুলো বের হয়ে আসছে! গোল্ডেন হারভেস্টের প্যাকেট সিংগাড়া আর সমুচার মতো! দোকানে গিয়ে প্যাকেট কিনবেন, তেল গরম করবেন আর প্যাকেটের সিংগাড়া বা সমুচা তাতে ছেড়ে দেবেন। হয়ে গেলো সুস্বাদু সিংগাড়া!
বিষয়টা মেনে নেওয়া যেতো যদি এটি আইবিএ, জিম্যাট বা জিআরই টাইপের এক্সাম হতো। অথবা শুধু প্রিলিমিনারি অংশ দিয়েই ব্যাংক জব নিয়োগ পরীক্ষা শেষ হয়ে যেতো। এগুলোতে শুধু সিংগাড়া প্লেটের উপরে প্রেজেন্ট করতে পারলেই চলে; মানে কোনমতে উত্তরটা বের করতে পারলেই আপনার দায়িত্ব শেষ।
কিভাবে বের করেছেন সেটা কেউ দেখতে আসবেনা। কিন্তু ব্যাংক জব রিটেন পরীক্ষায় কি এমন হচ্ছে? এখানে তো ম্যাথের প্রশ্নটাই এমনঃ “সিংগাড়া/সমুচা কিভাবে বানায় সে প্রসেসের বিস্তারিত বর্ণনা দিন!”
সুতরাং…এখানে আপনাকে পুরোপুরি জানতে হবে কিভাবে আটা গুলিয়ে খামি তৈরী করা হয়, সেই খামি কিভাবে শেইপ করতে হয় যেন আলটিমেটলি এটা সিংগাড়া বা সমুচার শেইপেই থাকে…লাড্ডুর মতো গোল না হয়ে যায়; সাথে স্বাদ বাড়াতে সিংগাড়া বা সমুচার ভিতরে কি কি উপকরণ কতোটুকু করে দিতে হয়! এগুলো ভালোভাবে জানলেই আপনি লিখে দিয়ে আসতে পারবেন সিংগাড়া বানানোর প্রোসেস। গোল্ডেন হার্ভেস্টের রেডিমেইড সিঙ্গাড়া/সমুচা দিয়ে কাজ হবেনা এখানে।
গোল্ডেন হারভেস্টের সিংগাড়ার প্যাকেট কিনে বড়জোর প্রিলি পাস করতে পারবেন রে ভাই! উদাহরণস্বরূপ বলা যায়ঃ স্পেশাল রাইট ট্রায়াঙ্গলস বা ৪৫-৪৫-৯০/৩০-৬০-৯০ ট্রায়াঙ্গলস শিখে প্রিলিতে খুব ভালোভাবে অংক করতে পারবেন। কিন্তু রিটেন ফরম্যাটের অংকগুলোতে এ নিয়ম ফলো করলে বেশীরভাগ শিক্ষকই আপনাকে কোন মার্ক দেবেন না। রিটেন সেকশনে এ ধরণের অংকে ফুল মার্কস পেতে হলে কিন্তু আপনাকে আবার সেই স্কুল লাইফের বেসিক ত্রিকোণমিতির নিয়মে ফেরত যেতেই হবে!
সুতরাং…আর ভুল কইরেন না। ম্যাথসের বেসিক কনসেপ্টগুলো আগে শক্ত করেন। প্রিলি/রিটেন কোনজায়গাতেই আটকে যাবেন না। এরপর যদি ইচ্ছা থাকে তাহলে প্রিলিতে আরও কম সময়ে অংকগুলো করে ফেলার জন্য শর্টকাট মেথডের শরণাপন্ন হতে পারেন। কিন্তু…মনে রাখবেন, “বেসিক শক্ত না করে আগে শর্টকাট শেখা”….কখনোই না!
ফেরদৌস কবির | ডেপুটি ডিরেক্টর, বাংলাদেশ ব্যাংক