লেখাটি মূলত প্রথমবার প্রিলি দিচ্ছেন কিংবা আমার মতোই এভারেজ মেধার অধিকারী প্রার্থীদের জন্য। অভিজ্ঞরা স্বাচ্ছন্দ্যে এড়িয়ে যেতে পারেন ????
বিসিএস প্রিলিমিনারি এক্সাম নিয়ে ভয়/সংশয় কাজ করে না এমন প্রার্থী খুঁজে পাওয়াটা কঠিন। প্ল্যানিং এ কিছুটা ঘাটতি, এক্সাম হলে করে ফেলা সামান্য কিছু ভুল একজন খুব ভালো প্রার্থীকেও যুদ্ধের ময়দান থেকে ছিটকে দিতে পারে নিমেষেই। তাই বলে প্রিলি নিয়ে বেশিবেশি দুর্ভাবনা করাটা কিন্তু আরো বড় ভুল। শুধু কিছু ব্যাসিক বিষয় ঠিকঠাক রাখলে প্রিলি ভালোভাবে উতরে যাওয়াটা কোনো সমস্যা না।
মূলত যেসব কারণে প্রিলি এক্সাম খারাপ হয় :
১. প্রিলি পরীক্ষা যখন দরজায় কড়া নাড়ে তখন কী কী পড়বো, কত সময় নিয়ে পড়বো- এসবের একটা রাফ প্ল্যানিং না থাকা
২. নতুন নতুন বই পড়ার লোভ সামলাতে না পারা ও রিভিশন কে কম গুরুত্ব দেয়া
৩. পর্যাপ্ত এনালাইসিস না করেই পড়া শুরু করা
৪. প্রিলি এক্সামকে সহজভাবে না নিয়ে বেশি হাইপ সৃষ্টি করা
১. আপনাকে প্রথমেই একটা প্ল্যান সেট করে ফেলতে হবে। আপনার ঘাটতি কোন সাবজেক্ট এ বেশি সেটা বুঝে সেখানে সময় কিছুটা বেশি দিতেই হবে সত্যি কিন্তু এখানে একটা ভুল করে ফেলে অনেকেই- একটা সাবজেক্ট ভালোভাবে পড়তে গিয়ে ধরা যাক ১৫ দিন শেষ করে ফেললো। এরপর শেষের দিকে এসে অন্য কিছুকিছু সাবজেক্ট এ একদমই পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয় না। আবার যেই বিষয়টি প্রথমে ১৫ দিন সময় নিয়ে পড়েছিলো, সেটাও তখন দেখা যায় যে অনেক কিছুই আর মনে নেই! তারমানে রিভাইস করতে হবে কিন্তু সময় যে তখন বিদ্যুৎবেগে কমে যাচ্ছে!! ব্যাস গুরু, নার্ভাসনেস বাড়া শুরু আর কনফিডেন্স হাওয়ায় গায়েব ???? তাই বিষয় ধরে ধরে কোনটায় কতোদিন দেয়া হবে এরকম একটা রাফ প্ল্যান কাগজে লিখে ফেললে সেটা অশেষ উপকারী হয়, গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি একথা।
২. প্রিলি পরীক্ষার আগে নতুন নতুন অনেক কিছু পড়তে ইচ্ছা করে। মনে হয়, এই বইটা পড়লাম কিন্তু ওটা তো পড়লাম না! যদি ওখান থেকে প্রশ্ন এসে পড়ে! এই প্রবণতায় লাগাম টেনে ধরতে পারাটা অন্য হাজার হাজার প্রার্থীর সাথে আপনার ব্যবধান তৈরি করে দিতে পারে। আপনি কতো বেশি পড়লেন সেটার দিনশেষে কোনো দাম নেই যদি আপনি পরীক্ষার হলে গিয়ে কনফিউজড হয়ে ভুলভাল দাগিয়ে দিয়ে আসেন। তাই যেই বইটি পড়েছেন বা পড়ছেন সেটাকেই আগে আত্মস্থ করার দিকে মনোযোগ দিন।
৩. পরীক্ষার সিলেবাস,আগের বছরের প্রশ্ন এসব নিয়ে একটু গবেষণা করে এরপর পড়া শুরু করুন। এই গবেষণায় ২ দিন যদি চলেও যায়, সেটা আপনার অন্যদিকে ২০ দিনের বেগার খাটনি বাঁচিয়ে দিতে পারে৷ প্রিলি পরীক্ষায় ভালো করার মূল রহস্যের একটি হলো এটা বুঝতে পারা যে- আমি কোন কোন টপিক এক্সাম এর আগে বাদ দিলেও তেমন কোনো ক্ষতিই হবে না। Graps All Lose All কথাটা প্রিলি এক্সাম এ অনেক বেশিই প্রাসঙ্গিক। পরীক্ষা যখন আসন্ন তখন একটা ভালো পদ্ধতি হলো প্রস্তুতিটাকে একটা গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করা,আর এরপর সময় পেলে সেই গণ্ডির পরিধি বাড়ানো ( কিন্তু বিশ্বাস করেন, এই বাড়তি সময় আর কখনই আসলে পাওয়া যায় না। কিন্তু তাতে লাভের লাভ যেটা হয় তা হলো, একটা ওভারঅল প্রস্তুতি নেয়া হয়ে যায় যা ছন্নছাড়াভাবে অনেক বেশি পড়ার চেয়ে অধিক কার্যকরী। আর তখন আত্মবিশ্বাস ও অনেক বেড়ে যায় যা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য রিতীমত আশীর্বাদ)।
৪. প্রিলি পরীক্ষা নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত প্রেশার নেয়া যাবে না। প্রতি বিসিএস এ বেশ কিছু আনকমন প্রশ্ন থাকবেই যেগুলা প্রার্থীর মানসিক শক্তির পরীক্ষা নেয়ার জন্যই দেয়া হয়। সেসব না পারলেও কোনো ক্ষতি হয় না। আপনি এক্সাম দিয়ে বের হয়ে যতোটা না আনকমন প্রশ্ন নিয়ে দুঃখ করবেন, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি দুঃখ করবেন কমন প্রশ্নগুলো কনফিউজড হয়ে ভুল দাগানো নিয়ে। আর মূলত এই ভুল দাগানোই আপনার প্রিলি ফেল করার প্রধান কারণ হবে।
শরিফুল হক শরিফ | Zakir's BCS specials