ঘুমের অনিয়ম | ঘুম বা নিদ্রা হচ্ছে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর দৈনন্দিন কর্মকান্ডের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যখন সচেতন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া স্তিমিত থাকে। (উইকিপিডিয়া)
ঘুমের অনিয়মের ফলে সৃষ্ট উল্লেখযোগ্য সমস্যাসমূহঃ
— অমনোযোগ, অস্থিরতা, স্মৃতি হ্রাস।
— রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস।
— শক্তি ও অনুপ্ররণার অভাব।
— অস্বস্তি, হতাশা ও উদ্বেগ।
— উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক অবসাদ।
— ওজন বাড়ে, ব্রেনের পাওয়ার কমে।
— আয়ু কমে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে।
— ত্বকের সৌন্দর্য কমে, হার্টের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
— মাথা-ব্যথা, শরীরে-ব্যথা, গ্যাসের ইত্যাদি সমস্যা।
রাত জাগার স্বাস্থ্যঝুঁকিঃ
ঘুমের অনিয়ম | রাত জাগার উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের একটি প্রকাশনায় বলা হয়, একজন সুস্থ মানুষ প্রতি ৯০ মিনিট পর পর ঘুমের গভীর থেকে গভীরতর ধাপের দিকে যায়। যার মধ্যে সবচেয়ে গভীর ঘুমের সময় মানুষের ফিজিওলজিক্যাল পরিবর্তন আনে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। অনিয়মিত ঘুমের কারণে ঘুমে বিঘ্ন ঘটে, ফলে মানুষ গভীর ঘুমের ধাপ পর্যন্ত যেতেই পারে না। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
উচ্চ রক্তচাপঃ বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে টানা ২-৩ দিন ঠিক করে না ঘুমলে শরীরের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে তার প্রভাবে রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে। আর এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত যদি ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রমে নিয়ে আসা না যায়, তাহলে শরীরের যে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
মানসিক সমস্যার আশঙ্কাঃ গবেষণায় দেখা গেছে যারা প্রায়ই রাত জাগেন তাদের উদ্বিগ্নতা, অবসাদ ও বাইপোলার ডিজঅর্ডারে ভোগার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এমনকি রাতে না ঘুমানোর সঙ্গে আত্মহত্মার প্রবণতারও সম্পর্ক রয়েছে। | ঘুমের অনিয়ম
ব্রেনের পাওয়ার কমেঃ আমরা যখন ঘুমোই তখন আমাদের মস্তিষ্ক নিজেকে রিজুভিনেট করতে থাকে। সেই সঙ্গে সারা দিন ধরে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা এবং তথ্য ব্রেনে স্টোর করার কাজটাও এই সময় ঘটে থাকে। তাই তো ঠিক মতো ঘুম না হলে প্রথমেই স্মৃতিশক্তির উপর প্রভাব পরে। সেই সঙ্গে কগনিটিভ ফাংশন কমে যাওয়ার কারণে মনোযোগ এবং বুদ্ধি কমে যাওয়ার মতো ঘটনাগুলিও ঘটে থাকে।
চেহারায় মলিনতাঃ এমনটা কি হয়েছে, নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেওয়ার পরও ব্রণ বা চোখের চারপাশে কালো দাগ হচ্ছে। নিয়মিত রাত জাগা এর একটা কারণ হতে পারে। এই একই কারণে অকালে চেহারায় বয়সের ছাপ ও ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
আয়ু কমে আসাঃ প্রায় দশ হাজার ব্রিটিশ ছাত্রের উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা ৫ ঘন্টা বা তার কম সময় ঘুমায়, তাদের হঠাৎ করে মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা সাধারণ মানুষদের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ঘুমের সঙ্গে হার্ট এবং ব্রেনের স্বাস্থ্যের সরাসরি যোগ রয়েছে। তাই তো ঘুম ঠিক মতো না হলে শরীরেই সবথেকে দুটি ভাইটাল অঙ্গ দুর্বল হয়ে যেতে শুরু করে। আর এমনটা হতে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই আয়ু চোখে পরার মতো কমে যায়। | ঘুমের অনিয়ম
কর্মোদ্যম কমে যাওয়াঃ ডাক্তাররা বলেন, রাতে মানুষের ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন যেন দিনের বেলা দেহ ও মন কর্মক্ষম থাকতে পারে। ঘুমে অনিয়ম মানুষের কাজের উদ্যম কমিয়ে দিতে পারে। এমনকি রাতে ঘুম কম হলে মানুষের ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।
মানসিক অবসাদঃ ২০০৫ সালে হওয়ার বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছিল দিনের পর দিন ঠিক মতো ঘুম না হলে ধীরে ধীরে মস্তিকের অন্দরে ফিল গুড হরমোনের ক্ষরণ কমে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ডিপ্রেশন এবং অ্যাংজাইটির মতো সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই হাজারো চাপের মাঝেও মনকে যদি চাঙ্গা রাখতে চান, তাহলে ভুলেও ঘুমের সঙ্গে আপোস করবেন না যেন! | ঘুমের অনিয়ম
রোগ প্রতিরোধে সমস্যাঃ গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত রাত জাগেন তাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, শারীরিক স্থূলতা এমনকি স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেশি থাকে। বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে মানুষ যতো বেশি রাত জাগে ততই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়াঃ একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে মাসের পর মাস ঠিক মতো ঘুম না হলে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু অংশ এতটাই ক্লান্ত হয়ে পরে যে ঠিক মতো কাজ করে উঠতে পারে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কম সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। সেই সঙ্গে কেরিয়ারে দ্রুত উন্নতি করার সম্ভাবনাও হ্রাস পায়।
রাত জাগার কারণে হার্টের মারাত্মক ক্ষতি হয়: একাধিক গবেষণার পর এই বিষয়ে আর কোনও সন্দেহ নেই যে ঘুমের সঙ্গে হার্টের স্বাস্থ্যের সরাসরি যোগ রয়েছে। সেই কারণেই তো চিকিৎসকেরা দৈনিক কম করে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আসলে এমনটা না করলে ধীরে ধীরে হার্ট দুর্বল হয়ে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে হার্ট ফেলিওর, ইরেগুলার হার্ট বিট সহ আরও নানাবিধ হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। | ঘুমের অনিয়ম
মানসিক চাপ বাড়েঃ খুব কম বা বেশি ঘুমালে অবসাদ ভর করে। এ সময় মানসিক চাপ বেড়ে যায়। গোটা দিন সেই চাপ বয়ে বেড়াতে হয়। এতে মনোযোগ নষ্ট হয় এবং কাজে অনীহা চলে আসে। অপর্যাপ্ত ঘুম পেশা থেকে ধীরে ধীরে মানুষকে বিচ্ছিন্নও করে ফেলতে পারে।
ত্বকের সৌন্দর্য কমে যাওয়াঃ দিনের পর দিন ঠিক মতো ঘুম না হলে কর্টিজল নামক স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যেতে শুরু করে। ফলে একদিকে যেমন মন-মেজাজ খিটখিটে হয়ে যা, সেই সঙ্গে ত্বকের অন্দরে কোলাজেনের মাত্রা কমতে শুরু করার কারণে সৌন্দর্যও হ্রাস পায়।
সুষ্ঠুভাবে চিন্তায় বাধাঃ মস্তিষ্কের চিন্তা করার ক্ষমতা ঘুম কম হওয়ার কারণে কমে যায়। কারণ নিউরনের কার্যক্রম, উদ্ভাবনী চিন্তা ও স্মৃতিশক্তির ক্ষমতা ৩৮ শতাংশ কমে আসে। এ ছাড়া এলোমেলো চিন্তা বেড়ে যায়।
সকালে দেরিতে ঘুম থেকে উঠার অপকারিতাঃ
ঘুমের অনিয়ম | যুক্তরাজ্যের সুবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রোনোলজি বিভাগের অধ্যাপক জন রিচার্ডসন বলেন, ‘আমরা দেখেছি, যারা দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে তারা নানা ধরনের মানসিক ও শারীরিক জটিলতায় ভোগে। তাদের গড় আয়ু নিয়মিত সকালে উঠা মানুষের চেয়ে সাড়ে ছয় বছর কম।’
সতর্কতা: অনেকেই ঘুম না হলে নিজে নিজেই ঘুমের ওষুধ কিনে খান। এটা একদমই উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ঘুমের ওষুধ খাবেন না।
হাদিসের নির্দেশনাঃ দেরি করে ঘুমাতে নিষেধ করেছেন রাসুল (সা.)।