আগামী ১৪ ই ফেব্রুয়ারী চাকুরিতে যোগদানের পর হয়তো সারদায় ১ বছরের ট্রেইনিং এ যেতে হবে তাই নামের সাথে ASP যুক্ত হওয়ার পেছনের কাহিনীটা লিখতে বসলাম (হয়তো আর সুযোগ হবেনা তাই)।
ব্যর্থতা দিয়ে শুরুঃ
SSC, HSC তে GPA 5 পাওয়ার পর আর দশজন বাবা-মায়ের মতো আমার বাবা-মাও আমাকে বলেছিলেন ডাক্তার হতে হবে কিন্তু বিধাতা হয়তো ভিন্ন চিত্রনাট্য লিখেছিল তাই অনেক চেষ্টার পরেও নিজেকে সেই elite club এর অংশ করতে পারলাম না ????। মনে আছে সেই সময় অনেকেই বলতো ডাক্তারি চান্স পেতে অনেক বেশি মেধাবী আর পরিশ্রমী হতে হয়। নিজেকে পরাজিতদের ঘরে আবিষ্কার করলাম যে কিনা পিতার স্বপ্ন পুরনে ব্যর্থ ????????।
অগুছালো জীবনঃ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলাম আলহামদুলিল্লাহ। ২০১৩ সালে ক্লাস শুরুর পর কেন জানিনা ডাক্তার হতে না পারার যন্ত্রণাটা আমাকে কুড়ে খাচ্ছিলো তাই কোন কিছুতেই মন বসছিলো না। পড়াশোনায় যখন মন বসছিলোনা তখন সবসময়ের বিষন্নতার সঙ্গী হিসেবে প্রচুর হলিউডের মুভি দেখতাম (এত বেশি যে দিনে ২-৩ টাও দেখতাম মাঝে মাঝে ) আর প্রচুর বই পড়তাম। এর ফল হাতে নাতে পেলাম যখন পরীক্ষা আসলো মাথায় হাত যেখানে আমার সার্কেলের সব বন্ধুরা ৩.৫০ এর উপরে আমি কোনরকম ৩ পেলাম প্রথম বর্ষে। তবে রবীন্দ্রনাথ, শরৎ, বৈশ্বিক ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ বিষয় সহ অন্তত ৫০-৬০ টা বই প্রথম বর্ষেই পড়া হয়ে গেছে।
এভাবেই দিন চলছিলো আর আমার অগোছালো জীবন চলছিলো আগের মতোই। ৩য় বর্ষে যখন পড়ি আমার পরিচিত এক ভাই ৩৫ বিসিএস এ প্রশাসন ক্যাডারে টিকে গেলো যার অভুতপূর্ব সম্মান দেখে বিস্মিত হলাম আর জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবনার জন্ম হলো। ম্যাজিষ্টেট ভাইয়ের সাথে কথা বললাম ভাইয়া বললো তুমি বিসিএস এ ভালো করতে চাইলে ইংরেজিতে ভালো করতে হবে কারন science background হওয়ায় গণিত আর science এ সমস্যা কম ছিলো। ভাইয়ের পরামর্শে ইংরেজি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য IELTS এ ভর্তি হলাম যেটা জীবনের অন্যতম সেরা সিদ্ধান্ত ছিলো।
জীবনের সেরা কিছু অধ্যায়ঃ
হল জীবনে রুমমেটের গুরুত্ব কতটা বেশি আমার চেয়ে বেশি হয়তো কেউ জানেনা। ৪র্থ বর্ষে এসে হলের রুম পরিবর্তন করলাম আর mentors হিসেবে পেলাম রেজাউল ভাইকে যার সংস্পর্শে আমার জীবনটাই পরিবর্তন হয়ে গেল যে আমি চাকুরির বই নিয়ে বসতেই গায়ে জ্বর আসতো সেই আমি রুমমেটের ১৪-১৫ ঘন্টা পড়ার stamina দেখে নিজেকে গালি দেয়া শুরু করলাম আর পণ করলাম ভাই পারলে আমি কেন নয়?
৩৬ তম বিসিএস এ রুমমেট প্রিলিমিনারিতে টিকে গেল আমি ৪ র্থ বর্ষে, একদিন ভাই বললো ফারুক চলো written কোচিং এ ভর্তি হই একসাথে ক্লাস করবো তোমারো সময় কেটে যাবে। ভাইয়ের সব বিষয় অনুসরণ করার পণ নিয়েছিলাম তাই ৪র্থ বর্ষের একটা ছেলে রিটেন কোচিং এ ভর্তি হলাম। সব বই কিনে পড়া শুরু করলাম আর আমার একটা বিষয় ছিলো কখনো ক্লাস মিস দিতাম না। এভাবেই ৪র্থ বর্ষেই খুব ভালোভাবেই আমার রিটেন পড়া হয়ে গেল। আমার মনে আছে আমি কোচিং এ ৩৬ ব্যাচের রিটেন মডেল টেস্টে মেধা তালিকায় ৫ ম হয়েছিলাম ????।
৩৮ প্রিলিমিনারি প্রস্তুতিঃ
আমাদের ৪ র্থ বর্ষ ফাইনালের ডেট হলো আর ৩৮ বিসিএস সার্কুলার হলো তাই appeared দিয়েই আবেদন করলাম। BBA পরিক্ষার পর আমাদের internship এর কাজ শুরু হলো কিন্তু সরকারি ব্যাংকে intern করায় মাত্র ৩ দিন গেছি????। আমাদের Internship ৩ মাসের স্হানে ৫ মাস লেগেছিল ঘটনাক্রমে যে সময় পুরোটা শুধু প্রিলিমিনারি পড়েছি পাগলের মতো। MBA শুরুর ১ মাসের মাথায় প্রিলিমিনারি পরিক্ষা হলো যার জন্য ৬ মাস পড়ার সময় পেয়েছিলাম কিন্তু আল্লাহর রহমতে টিকে গেলাম।
রিটেন প্রস্তুতিঃ
রিটেন প্রস্তুতির সময় আমার সব কিছু সহজ হয়ে গেল কারণ সবই পরিচিত বিষয় ছিলো। যেখানে সিলেবাস বুঝতেই অনেকের নাভিশ্বাস অবস্থা আমার তখন সবই পড়া তাই একটু different কিছু করার জন্য বাংলাদেশ বিষয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় ইংরেজিতে দেয়ার preparation নিতে থাকলাম। আমার একটা অভ্যাস ছিলো আগে থেকেই যেকোন বই পড়ার সময় কিছু ভালো লাগলে তা খাতায় লিখে রাখতাম যা রিটেন প্রস্তুতির সময় কাজে লাগলো। math, science নিয়ে কখনও চিন্তা করা লাগেনি science background হওয়ায় তাই রিটেনটা মনের মতো হলো আলহামদুলিল্লাহ।
অভাবনীয় ঘটনার ভাইভা প্রস্তুতিঃ
রিটেন ভালো হওয়ায় আগে থেকেই ভাইভা প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। আগে ভাইভা দিয়েছে এবং সফল হয়েছে এমন ভাইদের শরণাপন্ন হলাম ভাইভা বিষয় জানার জন্য। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটলো এইবার কারন যেসব বিষয় পড়ার জন্য সবাই পরামর্শ দিলো সেইসব বিষয়ে বলা যায় PHD করার মতো পড়াশোনা কাকতালীয় ভাবে সময় কাটানোর মানসে আমি ১ম, ২য় বর্ষেই করে ফেলেছিলাম ????????????।
বাকি ছিলো আগের পড়া গুলো একটু ঝালিয়ে নেয়া আর মক ভাইভা দেয়া। হলের ১-২ জন ছোট ভাই ছিল যাদের সাথে প্রতিদিন রাতে ১১-১২ টার মধ্যে English এ বলার practice করতাম এইবার IELTS টাও কাজে লেগে গেলো। সত্যি বলতে কি রিটেন পরবর্তী সময়টায় এত বেশি মক ভাইভার চর্চা করেছিলাম যে মূল ভাইভার সময় মনে হচ্ছিল আমি মক ভাইভা দিচ্ছি তাই একটুও ঘাবড়ে যাইনি। আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো ভাইভা হলো।
বাবাকে একটা নতুন পরিচয় দেয়ার গল্পঃ
ডাক্তারি চান্স না পাওয়ায় বাবা খুব কষ্ট পেয়েছিলো কিন্তু কখনো আমাকে বুঝতে দেয়নি বরং আমাকে সবসময় বলেছে এমন কিছু করো যেন ডাক্তার হওয়ার আক্ষেপ না থাকে। আল্লাহর রহমতে বাবাকে একটা নতুন পরিচয় দিতে পেরেছি যেদিন রেজাল্ট হলো সেদিন বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলেছিলাম বাবা এখন থেকে আপনি ASP র বাবা। হ্যাঁ আমার বাবাকে সবাই SP র বাপ বলেই ডাকে (গ্রামের মানুষ ASP বোঝেনা তাই SP বলে ????) ।
অনেক sacrifice হয়তো করেছি, অনেক বন্ধু আমার নিঃসঙ্গ ভাবে চলায় আমাকে formal boy বলতো কিন্তু এখন এটাই কেন জানিনা গর্ব অনুভব করি কারন হয়তো formal ছিলাম বলেই আমার বাবাকে গর্ব করার মতো একটা পরিচয় দিতে পেরেছি।
আমার লেখার শিরোনাম ছিলো পাগলাটে বিসিএস অভিযাত্রার গল্প কারণটা নিশ্চয় সবাই বুঝে গেছেন যেখানে সবাই প্রিলি, রিটেন, ভাইভা এই sequence এ প্রস্তুতি নেয় আমি ছিলাম উল্টো পথের যাত্রী ????।
মোঃ ওমর ফারুক | সহকারী পুলিশ সুপার (৩৮ বিসিএস) | মেধাক্রম - ৩৬ তম