ইনডেমনিটি কালো অধ্যায়

ইনডেমনিটি কালো অধ্যায় :

কোর কথা :
১। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারবর্গের আত্মস্বীকৃত খুনীদের দায়মুক্তি দিতে ইনডেমনিটি- জারি হয় ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টম্বর । জারি করে খন্দকার মোশতাক ।

এখনো amarStudy অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড না করে থাকলে গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করতে এখানে যানঃ Download Now. অ্যাপটি বিসিএস’সহ প্রায় সব রকমের চাকুরির প্রস্তুতির সহায়ক।

২। এটি ১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ নং ৫০ নামে অভিহিত ছিল। পরে ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই জিয়াউর রহমানের আমলে সংসদে এই কালো আইনটিকে অনুমোদন দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই জেনারেল জিয়ার আমলে বাংলাদেশ সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর পর সংশোধিত এ আইনটি বাংলাদেশ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

৩। ১৯৯৬ সালের ১২ নবেম্বরের ঐতিহাসিক দিনে সংসদে পাস হয় মানবতা ও সভ্যতাবিরোধী কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল বিল।ফলে খুলে যায় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ।

ইনডেমনিটি কালো অধ্যায় | ৪। ১৯৯৮ সালের ৮ নবেম্বর তারিখে মামলার যাবতীয় কার্যক্রম শেষে পনেরো জন আসামিকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়। আসামি পক্ষের পনেরো আসামি উচ্চ আদালতে আপীল করার সুযোগ পান। উক্ত আপীলে ১২ জনের মৃত্যুদ- বহাল এবং ৩ জনকে খালাস প্রদান করা হয়।

৫। ২০০৯ সালে লিভ-টু-আপীল এর মাধ্যমে এ বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। আপীল শেষে বারো জনের মৃত্যুদ- বহাল রাখেন মহামান্য আদালত। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি খুনীদের মধ্যে পাঁচ জনের ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। বাকি ছয় খুনী এখনও বিভিন্ন দেশের আশ্রয়ে পলাতক। পলাতকদের মধ্যে একজন এরইমধ্যে বিদেশের মাটিতে মৃত্যুবরণ করে।

ইনডেমনিটি কালো অধ্যায় | ‘মানবতা ও সভ্যতাবিরোধী কুখ্যাত ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ’ বাঙালীর জাতীয় জীবনে একটি কালো অধ্যায়। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের এই দিনে জারি করা হয় কুখ্যাত এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ এবং এরই ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারবর্গের আত্মস্বীকৃত খুনীদের দায়মুক্তি দিতে খুনী মোশতাক-জিয়া গংরা জারি করে পৃথিবীর ইতিহাসে বর্বরোচিত সেই কালো অধ্যাদেশটি। আইনের শাসন, সাংবিধানিক অধিকার, বিচার পাবার অধিকারের পথ রুদ্ধ করে হত্যাকারীদের দায়মুক্তি ‘এক কালো অধ্যায়’ হিসেবেই বাংলাদেশের ইতিহাসে স্থান পেয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- সংঘটিত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। যেহেতু তখন সংসদ অধিবেশন ছিল না, সেহেতু ১৯৭৫ সালের এই দিনে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতির পদ দখলকারী খুনী মোশতাক আহমেদ একটি অধ্যাদেশ আকারে ইনডেমনিটি জারি করেন। এটি ১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ নং ৫০ নামে অভিহিত ছিল। পরে ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই জিয়াউর রহমানের আমলে সংসদে এই কালো আইনটিকে অনুমোদন দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই জেনারেল জিয়ার আমলে বাংলাদেশ সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর পর সংশোধিত এ আইনটি বাংলাদেশ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ইনডেমনিটি কালো অধ্যায় | বিএনপিসহ তাদের সমর্থিত কিছু বুদ্ধিজীবী দাবি করেন যে, জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি জারি করেননি। কিন্তু বিষয়টি যে মোটেও ঠিক নয়, ওই সময়ের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করলেই তা জাতির সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠে। কারণ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাত্র ৯ দিনের মাথায় অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট সেনাবাহিনী প্রধান নিযুক্ত হন জিয়াউর রহমান। আর খুনী মোশতাক সরকার ছিল সম্পূর্ণভাবে সেনাসমর্থিত সরকার।

ইনডেমনিটি কালো অধ্যায় | জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান থাকাকালীন অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। যেহেতু মোশতাক সরকার ছিল সেনাসমর্থিত। জিয়াউর রহমান ছিলেন সেনাপ্রধান। সেহেতু ওই সময় রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণকারী সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের নির্দেশ কিংবা সম্মতি ছাড়া নামেমাত্র রাষ্ট্রপতি খুনী মোশতাকের পক্ষে কোনভাবেই বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দায়মুক্তি দিতে এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা কোনদিনই সম্ভব হতো না। সে কারণে এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির দায় জিয়াউর রহমান কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেন না। আর বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীরা বিবিসিতে সাক্ষাতকার দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জেনারেল জিয়াউর রহমানও যে জড়িত ছিলেন, তা স্পষ্ট করেই বলেছে।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনজ্ঞদের মতে, খুনী মোশতাকের জারি করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বৈধতা দেয়া না হলে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল সামরিক আইন প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই ১৫ আগস্টের খুনীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া যেত। ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানই ব্যবস্থা নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি ব্যবস্থা নেয়া দূরের কথা, ভবিষ্যতে কেউ যাতে ব্যবস্থা না নিতে পারে সে ব্যবস্থা করে দেন। ওই সময় একটি প্রপাগা-া ছড়িয়ে দেয়া হয় যে, যেহেতু এটি সংবিধানের অংশ হয়ে গেছে এটি আর পরিবর্তন হবে না।

ইনডেমনিটি কালো অধ্যায় | শুধুমাত্র এই দোহাই দিয়েই জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরও বিচারপতি আবদুস সাত্তার, জেনারেল এইচ এম এরশাদ এবং ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলেও কালো আইন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বাতিল বা রহিত করেননি। ফলে দায়মুক্তি পেয়ে খুনীরা ১৫ আগস্টের হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা প্রকাশ্যেই বলে বেড়াত। জিয়া থেকে শুরু করে খালেদা জিয়া পর্যন্ত সব সরকারই বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচারের পরিবর্তে করেছে পুরস্কৃত, করেছে ক্ষমতার অংশীদার। যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।

১৯৯৬ সালে ২১ বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকার প্রথমেই জাতির পিতা হত্যাকা-ের বিচারের পথ উন্মুক্ত করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল সংক্রান্ত আইনগত দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব আমিন উল্লাহ’র নেতৃত্বে যে কমিটি গঠন করা হয়, তাদের রিপোর্টেই প্রকাশ পায় এই কুখ্যাত আইনটি বাতিলের জন্য সংবিধান সংশোধনের কোন প্রয়োজন নেই।

ইনডেমনিটি কালো অধ্যায় | কমিটির ওই রিপোর্ট আইন কমিশনের মতামতের জন্য পাঠানো হলে সাবেক প্রধান বিচারপতি এফকে এম মুনীরের নেতৃত্বাধীন এই কমিশনও তা সমর্থন করে। এরপর তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী (পরবর্তীতে মন্ত্রী) এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বিল বাতিলের জন্য ‘দি ইনডেমনিটি রিপিল এ্যাক্ট-১৯৯৬’ নামে একটি বিল উত্থাপন করেন। ১৯৯৬ সালের ১২ নবেম্বরের ঐতিহাসিক দিনে সংসদে পাস হয় মানবতা ও সভ্যতাবিরোধী কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল বিল। ঘোচানো হয় ২১ বছরের জাতীয় কলঙ্ক। যার মাধ্যমে বাতিল হয়ে যায় কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ, খুলে যায় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ।

দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে শুরু করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া। ১৯৯৮ সালের ৮ নবেম্বর তারিখে মামলার যাবতীয় কার্যক্রম শেষে পনেরো জন আসামিকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়। আসামি পক্ষের পনেরো আসামি উচ্চ আদালতে আপীল করার সুযোগ পান। উক্ত আপীলে ১২ জনের মৃত্যুদ- বহাল এবং ৩ জনকে খালাস প্রদান করা হয়। তবে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলে এ মামলার কার্যক্রম ফের স্থবির হয়ে পড়ে।

ইনডেমনিটি কালো অধ্যায় | ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভের পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে আবার এ বিচারকার্য চালিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০০৯ সালে লিভ-টু-আপীল এর মাধ্যমে এ বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। আপীল শেষে বারো জনের মৃত্যুদ- বহাল রাখেন মহামান্য আদালত। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি খুনীদের মধ্যে পাঁচ জনের ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। বাকি ছয় খুনী এখনও বিভিন্ন দেশের আশ্রয়ে পলাতক। পলাতকদের মধ্যে একজন এরইমধ্যে বিদেশের মাটিতে মৃত্যুবরণ করে। জাতি হয় কলঙ্কমুক্ত।


আরো পড়ুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You're currently offline !!

error: Content is protected !!