মুজিবনগর সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য গঠিত বাংলাদেশের প্রথম সরকার। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১০ এপ্রিল এ সরকার গঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে।
মুজিবনগর সরকারের নামকরণ:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে বৈদ্যনাথতলা গ্রামের নামকরণ করা হয় ‘মুজিবনগর’ এবং এটার নামকরণ করেন তাজউদ্দীন আহমেদ। মুজিবনগর সরকারের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ ভূখণ্ডের বাইরে থেকে পরিচালিত হয়েছিল বলে এ সরকার প্রবাসী মুজিবনগর সরকার হিসেবেও খ্যাত।
মুজিবনগর সরকার গঠন:
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড তথা প্রধান নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি সরকার গঠিত হয়। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুক্তাঞ্চল বৈদ্যনাথতলায় সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবদুল মান্নান এমএনএ এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী এমএনএ। নবগঠিত সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে এখানে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রীদের দফতর বণ্টন:
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল সরকার গঠন এবং ১৭ এপ্রিল সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও মন্ত্রীদের মধ্যে দফতর বণ্টন হয় ১৮ এপ্রিল। মুজিবনগর সরকারকে ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ভাগ করা হয়। এছাড়া কয়েকটি বিভাগ মন্ত্রিপরিষদের কর্তৃত্বাধীন থাকে।
মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগ:
০১. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- রাষ্ট্রপতি।
০২. সৈয়দ নজরুল ইসলাম- উপরাষ্ট্রপতি (রাষ্ট্রপতি পাকিস্তানে অন্তরীণ থাকার কারণে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের দায়িত্বপ্রাপ্ত)।
০৩. তাজউদ্দীন আহমদ- প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা, তথ্য, সম্প্রচার ও যোগাযোগ, অর্থনৈতিক বিষয়াবলি, পরিকল্পনা বিভাগ, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, শ্রম, সমাজকল্যাণ, সংস্থাপন এবং অন্যান্য যেসব বিষয় কারও ওপর ন্যস্ত হয়নি তার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী।
০৪. খন্দকার মোশতাক আহমদ- মন্ত্রী, পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
০৫. এম মনসুর আলী- মন্ত্রী, অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
০৬. এ এইচ এম কামরুজ্জামান- মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং কৃষি মন্ত্রণালয়।
এসব মন্ত্রণালয়ের বাইরে আরও কয়েকটি সংস্থা সরাসরি মন্ত্রিপরিষদের কর্তৃত্বাধীন হয়ে কাজ করত। যেমন-
- পরিকল্পনা কমিশন* শিল্প ও বাণিজ্য বোর্ড
- নিয়ন্ত্রণ বোর্ড, যুব ও অভ্যর্থনা শিবির
- ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটি
- শরণার্থী কল্যাণ বোর্ড।
যুদ্ধকালীন এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রয়োজনীয়তা এবং ভূমিকা ছিল অপরিসীম। এর মধ্যদিয়েই প্রধানমন্ত্রী দেশি- বিদেশি সাংবাদিকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান। এভাবেই মুক্তিযুদ্ধকালীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সূচনা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়। বাংলাদেশ নব উদ্যমে যাত্রা শুরু করে।
আরো পড়ুন:
- বাংলা সাহিত্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
- বিসিএস প্রিলি সূচিপত্র (সকল বিষয়, সকল অধ্যায়)
- ২৭তম বিসিএস: বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক
- ২৬তম বিসিএস: বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক
- বিসিএস মডেল টেস্ট: অনলাইন এক্সাম