মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি শক্তির অবদান: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নানা প্রেক্ষিতে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে যেমন প্রভাব বিস্তার করেছে তেমনি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও এর কমতি ছিলনা। একদিকে পাকিস্তান, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র অন্যদিকে বাংলাদেশ, ভারত ও সোভিয়েত রাশিয়ার সমন্বয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সেসময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আলোচিত বিষয় ছিল। নিম্নে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত ও সোভিয়েত রাশিয়ার আবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান:
মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি শক্তির অবদান: ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্তৃক “অপারেশন সার্চলাইট” নামে গণহত্যা শুরু হওয়ার পর দিন ২৬ শে মার্চ ভারতীয় লোকসভায় বিষয়টি আলোচিত হয়। ৩১ মার্চ ভারতের রাজ্য ও লোকসভার যৌথ অধিবেশনে পাকিস্তান সরকারের প্রতি তীব্র নিন্দা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি সমর্থন জানানো হয়। তারপর থেকে ১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ভারত প্রবলভাবে সহযোগিতা করেছে।
ভারত শুধু নিজেদের মাধ্যমেই নয়, বরং অন্যদেশ থেকেও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন সংগ্রহ করতে যথেষ্ট ভুমিকা পালন করে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, সামরিক প্রভৃতি দিক দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে সহযোগিত করেছে। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি শরণার্থীদের আশ্রয়দান করে। এছাড়াও ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ভারত প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করে। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ সরাসরি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং যৌথবাহিনী গঠন করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের পরাজিত করে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ চুড়ান্ত বিজয় নিয়ে আসে। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান কোনোভাবে অস্বীকার করার মতো নয়।
মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত রাশিয়ার অবদান:
মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি শক্তির অবদান: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমানে রাশিয়া) বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের ক্রান্তিলগ্নে সোভিয়েত ইউনিয়নের দৃঢ় সমর্থন ও সহায়তা বাংলাদেশ অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। নিচে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা আলোচনা করা হলো:
জাতিসংঘে ভোটো প্রদান: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ গ্রামিকো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৬ তম অধিবেশনের ভাষণে পূর্ব-পাকিস্তানের ঘটনায় ভারতের উদ্বিগ্নতা যৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেন। এবং এ বিষয়টি কেবল পাকিস্তানের অভ্যন্তরিন বিষয় নয় বলে দাবি করেন। নিরাপত্তা পরিষদে স্বাধীনতার বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখতে যুদ্ধ বিরতি ও সৈন্য পত্যাহারের প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ৩ বার ভেটো প্রদান করে। ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়া থেকে রক্ষা পায়।
পারমাণবিক সাবমেরিণ প্রেরণ: পাকিস্তানের অবশ্যম্ভাবী পরাজয় আচ করতে পেরে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন তাদের সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরে প্রেরণ করেন। যা ভারতীয়রা নিউক্লিয়ার যুদ্ধ শুরু করার হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন। সপ্তম নৌবহর ১৯৭১ সালের ১১ই ডিসেম্বর বঙ্গোপসাগরে পৌছায়। যুক্তরাষ্ট্রের এই হুমকির জবাব হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ৬ ও ১৩ ডিসেম্বর নিউক্লিয়ার মিসাইলবাহী দুটি ডুবোজাহাজ ভ্লাডিভস্টক থেকে বঙ্গোপসাগরে প্রেরণ করেন। যারা ইউএস টাস্ক ফোর্স-৭৪ কে ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ভারত মহাসাগরে তাড়া করে বেড়ায়।
পাকিস্তানকে চাপ প্রয়োগ: ১৯৭১ সালের ২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার নিকট সুপ্রিম সোভিয়েত সভাপতি মণ্ডলির সভাপতি নিকোলাই পদবোর্নি একটি বার্তা প্রেরণ করেন। এই বার্তায় তিনি বলেন, পূর্ব-পাকিস্তানের জনসাধারণের বিরুদ্ধে সামরিক বল প্রয়োগ করে অগণিত মানুষের প্রাণহানি ঘটিয়েছেন। তাতে সোভিয়েত ইউনিয়নে গভীর উদ্বেগের সঞ্চার হয়েছে। এছাড়াও তৎকালীন সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী কোসিগিন সুপ্রিম সোভিয়েতের নির্বাচন প্রাক্কালে এক বক্তৃতায় বাংলাদেশের ঘটানাবলি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এভাবে রাশিয়া অর্থাৎ, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রবল সমর্থন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালান করে।
আরো পড়ুন:
- বাংলা নামের উৎপত্তি
- বিসিএস প্রিলি সূচিপত্র (সকল বিষয়, সকল অধ্যায়)
- মুজিবনগর সরকার-১৯৭১
- বিসিএস মডেল টেস্ট: অনলাইন এক্সাম
- বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস ইবুক
তথ্য সংগ্রহ করে লিখেছেন: Al-Amin Islam | অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো ভুল হয়ে থাকলে মেসেজ করে জানানোর জন্য অনুরোধ রইল।