ভূ-রাজনীতির উপাদানসমূহ

ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে সকল রাষ্ট্র সমান মর্যাদা বা সুযোগ লাভ করতে পারে না। ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে একেক রাষ্ট্রের ক্ষমতা, প্রভাব, সুযোগ-সুবিধা, মর্যাদা ইত্যাদি ভিন্নরকম হয়ে থাকে। একটি রাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণের ক্ষেত্রে কতগুলো বিষয়ের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়। এইসব বিষয় ভূরাজনৈতিক উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। সাধরণভাবে রাজনৈতিক ক্রিয়া, রাজনৈতিক শক্তি এবং ভৌগোলিক বিন্যাসের সম্পর্ক বিশ্লেষণ হচ্ছে ভূরাজনীতি। যেকোন দেশের আন্তর্জাতিক কৌশল নির্ধারণে ভূ-রাজনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। ভূ-রাজনীতির ব্যাখ্যায় হেনরি কিসিঞ্জার বলেছেন, “In Geopolitics uneasy approach that hostile interntions have disappeared and traditional foreign policy considerations no longer apply.” ভূ-রাজনীতির বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে রয়েছে পররাষ্ট্র সম্পর্ক, সম্পদের অবস্থান এবং ভৌগোলিক উপাদান, যেমন: জলবায়ু, প্রাকৃতিক সম্পদ, খনিজ সম্পদ, ধর্মের ব্যবহারিক বিজ্ঞানসহ নানাবিধ উপকরণ। ভূ-রাজনীতির বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ হলো Checkerboard Phenomera এর অর্থ হলো আমার পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী আমার শত্রু এবং তার পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী আমার
বন্ধু।

ভূ-রাজনীতির উপাদান : নিম্নে ভূ-রাজনীতির উপাদানসমূহ আলোচনা করা হলো

এখনো amarStudy অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড না করে থাকলে গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করতে এখানে যানঃ Download Now. অ্যাপটি বিসিএস’সহ প্রায় সব রকমের চাকুরির প্রস্তুতির সহায়ক।

০১। ভৌগোলিক আয়তন : ভৌগোলিক আয়তন যেকোন রাষ্ট্রের জন্য ভূ-রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আয়তনের দিক দিয়ে বড় রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ সম্পদও বেশি হয়। বড় রাষ্ট্রগুলো ভূ-রাজনীতিতে শক্তিশালী হয়ে থাকে। যেমন, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, বর্তমান রাশিয়া, চীন, কানাডা, ভারত তাদের বিশাল আয়তনের কারণে বিশ্ব রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চীনের সাথে রয়েছে ১৪টি দেশের সীমানা, সবগুলো দেশ থেকেই সে সুযোগ করতে চায়।

০ ২। ভৌগোলিক অবস্থান : ভৌগোলিক অবস্থানও ভূ-রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। উদাহরণস্বরূপ বর্তমান বিশ্বে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে কোন Hegemonial endency নেই, সে কারণে তাদের জন্য ভূ-রাজনীতি নির্ধারণ যতটা সহজ হয়, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোর জন্য বিষয়টা ঠিক ততটা সহজ নয়। এছাড়াও বাংলাদেশের খনিজ সম্পদ আহরণ করতে পারে। তাই অন্যান্য পার্শ্ববর্তী দেশ বিশেষ করে ভারত ও মায়ানমার এর সুযোগ নিতে পারে। যেমন আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তার সকল নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলেছে।

০৩। প্রতিবেশী রাষ্ট্র : যে কোন রাষ্ট্রের ক্ষমতা ও প্রতিপক্ষ নির্ধারণের ক্ষেত্রে তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে তার সম্পর্ক কেমন, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতিবেশী যদি বড় ও ব্যাপক ক্ষমতাধর হয় তবে ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোকে অনেক সমীহ করে চলতে হয়, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষণ দেখা যায় যে, অনেক ক্ষুদ্র প্রতিবেশী রাষ্ট্রও। বিদেশের কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কারণে নিজেকে প্রতিবেশী বৃহৎ রাষ্ট্র হতে অধিকতর ক্ষমতাবান হিসেবে। প্রতিষ্ঠিত করেছে।

০৪ । অনুকূল জলবায়ু : অনুকূল জলবায়ু থাকলে দেশ কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে। আর ভূরাজনীতির নিয়ন্ত্রণ করতে হলে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হয়। যেমন চীন তার অনুকূল জলবায়ুকে কাজে লাগিয়ে কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে।

০৫ । অধিক জনসংখ্যা : অধিক জনসংখ্যাও ভূ-রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। উদাহরণ হিসেবে আমরা চীন ও ভারতের কথা উল্লেখ করতে পারি। তবে শুধু জনসংখ্যা হলেই হবে না। দেশের জনসংখ্যাকে কাজে লাগাতে হবে। জনসংখ্যাকে কাজে লাগাতে পারলে তা ভূরাজনীতির ক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে।

০৬ । অভ্যন্তরীণ কাঠামো : দেশের অভ্যন্তরীণ কাঁঠামোও ভূরাজনীতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। যে দেশের পাহাড়, পর্বত, অরণ্য বেশি থাক সে দেশ অন্য দেশের মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। কারণ দুর্গম অঞ্চলে আক্রমণ করা খুবই কঠিন। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে নদ-নদী বেশি থাকলে তা দেশের ভূ-রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।

০৭ । রাষ্ট্রীয় ঐক্যবোধ : রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে ঐক্যবোধ থাকলে তা যেকোন রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখে। রাষ্ট্রের জনগণের মাঝে ঐক্যবোধ থালে তা ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করে তোলে। পক্ষান্তরে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে যদি কলহ-বিবাদ থাকে তাহলে সেটা মিটাতেই রাষ্ট্রের অনেক শক্তি ক্ষয় হয়।

০৮। সরকারের দূরদর্শীতা : সরকারের দূরদর্শীতার কারণেও একটি রাষ্ট্র ভূ-রাজনীতিতে অনেক এগিয়ে যেতে পারে।
পক্ষান্তরে সরকার দুর্বল হলে ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। ভূ-রাজনীতি বর্তমান সময়ের খুবই আলোচিত বিষয়। ভূ-রাজনীতির উপাদান গুলো একটি রাষ্ট্রের ভূ-রাজনীতির গতি প্রকৃতি, ধরন, শক্তি ইত্যাদি নির্দেশ করে। একটি রাষ্ট্র ভূ-রাজনৈতিকভাবে কতটা শক্তিশালী তা ভূরাজনীতির উপাদানগুলোর স্বতন্ত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমেই নির্ণয় করা সম্ভব। উক্ত উপাদানগুলো ছাড়াও ভূরাজনীতির আরো অনেক উপাদান হতে পারে। রাষ্ট্রের পরিধি, Media Hegemony, প্রাকৃতিক সম্পদ, জাতীয়তাবোধ, কাচামালের প্রাপ্তি ইত্যাদি বিষয়গুলোও একটি রাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।

আরো পড়ুন:

1 thought on “ভূ-রাজনীতির উপাদানসমূহ”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You're currently offline !!

error: Content is protected !!