ক্যাডার চয়েস দেওয়া সম্পর্কিত কিছু বহুল প্রচলিত ভুল ধারনা

সঠিকভাবে ক্যাডার চয়েস প্রদান নিশ্চিত করা একজন প্রার্থীর কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পাবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত। অথচ আমার নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বিসিএস প্রার্থীদের মধ্যে ক্যাডার চয়েস সম্পর্কে প্রচলিত অনেক ভুল ধারনা রয়েছে, আবেদন করার পূর্বে যা নিরসন না হলে বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। নিম্নে তেমন কিছু ভুল ধারনা ও সে সম্পর্কিত সঠিক তথ্য তুলে ধরা হল, আশা করি, আপনাদের কাজে আসবে।

*** যে ক্যাডারে পদ সংখ্যা বেশি সেই ক্যাডার চয়েস আগে দেওয়া নাকি ভাল? কম পোস্ট সম্পন্ন ক্যাডার আগে, আর বেশি পোস্ট সম্পন্ন ক্যাডার পরে চয়েস দিলে পরে নাকি কোন ক্যাডারই পাওয়া যায় না?

এখনো amarStudy অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড না করে থাকলে গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করতে এখানে যানঃ Download Now. অ্যাপটি বিসিএস’সহ প্রায় সব রকমের চাকুরির প্রস্তুতির সহায়ক।

উত্তরঃ পিএসসির ক্যাডার বণ্টন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারনার অভাব থেকেই এই ভুলের জন্ম। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বর যোগ করে প্রার্থীদের যে মেধাতালিকা হবে, তার ভিত্তিতেই ক্যাডার বন্টিত হবে, আপনার ক্যাডার চয়েস যাই হোক, সেটা এ ক্ষেত্রে গুরুত্ববহ নয়।
উদাহরণস্বরূপ আমরা লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা মিলে নম্বরের ভিত্তিতে ১ম থেকে ৫০ তম প্রার্থীর ক্যাডার প্রাপ্তির প্রক্রিয়াটি পর্যালোচনা করতে পারি।

*** প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে যিনি প্রথম হয়েছেন, তিনি যে ক্যাডার ফার্স্ট চয়েস দিয়েছেন, সেটা নিশ্চিত ভাবেই পাবেন, কারন তখনো সব ক্যাডার পদ এভেইলেবল রয়েছে।( এভাবে প্রথম বেশ কয়েকজনই হয়ত সেটা পাবেন।)

*** যিনি মেধাতালিকায় ৩০ তম হয়েছেন, তার ফার্স্ট চয়েস ছিল পররাষ্ট্র। দেখা গেল পররাষ্ট্র ক্যাডার শেষ,( অর্থাৎ তার আগের মেধাক্রমের কমপক্ষে ২১ জন প্রার্থীর ফার্স্ট চয়েস ছিল পররাষ্ট্র, এবং সে মোতাবেক তারা পররাষ্ট্র ক্যাডার পেয়েছেন) তাহলে দেখা হবে তার দ্বিতীয় চয়েস কি, সেটি যদি হয় পুলিশ, তাহলে তিনি এখন সেই পুলিশ ক্যাডারই পাবেন।

*** যিনি ৭০ তম হয়েছেন, তার ফার্স্ট চয়েস যদি হয় প্রশাসন, তাহলে তিনি তার পছন্দের ক্যাডারই পাবেন। কারন প্রশাসন ক্যাডার তো তখনো শেষ হয় নি। যদি তার ফার্স্ট চয়েস হত পররাষ্ট্র, তাহলে, যেহেতু সেই ক্যাডার অলরেডি শেষ, তাই দেখা হত তার দ্বিতীয় চয়েস কি।

*** যিনি ২০০ তম হয়েছেন, দেখা গেল তার ফার্স্ট চয়েস ছিল পররাষ্ট্র, তা যে তিনি পাবেন না, তা তো বুঝাই যাচ্ছে, কারন সেটা তো আগেই শেষ। এবার দেখা হবে তার সেকেন্ড চয়েস কি, ধরি সেকেন্ড চয়েস পুলিশ, দেখা গেল, পুলিশ ক্যাডারও শেষ, অর্থাৎ এর আগেই ১০০ টি পুলিশ ক্যাডারের পদ মেধাক্রম অনুযায়ী পূরণ হয়ে গেছে, তখন দেখা হবে তার থার্ড চয়েস কি ছিল,ধরি থার্ড চয়েস এডমিন, কর্তৃপক্ষ দেখলেন যে প্রশাসনে এখনো পদ পূর্ণ হয় নি, তখন তিনি এডমিন ক্যাডারই পাবেন।

এককথায় ১০ টা প্লেটে ভালমন্দ মিলিয়ে ১০ ধরনের ফল আছে। যাদের মার্কস বেশি তারা তাদের ফল বেছে নেওয়ার পর সেই ফল অবশিষ্ট থাকবে সেখান থেকে তার পরের জন ফল গ্রহন করবে।

তাই পদ সংখ্যা কম বেশি যাই হোক, আপনি আপনার পছন্দের ক্যাডারগুলোই একের পর এক পূরন করে যাবেন।

*** ২/৩ টার বেশি ক্যাডার চয়েস দেওয়া নাকি ভাল নয়?

উত্তরঃ আমি মনে করি আপনি যদি কোন চাকুরীতে না থাকেন, তাহলে যে কয়টি ক্যাডার চয়েস দেওয়া সম্ভব, তার সবগুলোই ধারাবাহিক ভাবে একের পর এক চয়েস লিস্টে দিয়ে দিন। কারন পছন্দের ক্যাডার পেলে তো ভাল, আর না হয় অন্তত বেকারত্ব ঘোচানোর জন্য হলেও আপনার যে কোন একটা চাকুরি দরকার।

আর আপনি যদি সরকারি /বেসরকারি কোন ভাল চাকুরী তে থাকেন, তাহলে আপনি সিদ্ধান্ত নিন যে, কোন কোন ক্যাডারে সুপারিশকৃত হলে আপনি চাকুরি করবেন, তারপর সে মোতাবেক ক্যাডার চয়েস দিন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি, এনএসআই এর এডি, বা পাবলিক ভার্সিটির টিচারদের পছন্দের দু তিনটির বেশি ক্যাডার চয়েস দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না (পুলিশ, পররাষ্ট্র ও এডমিন দেওয়ার প্রবণতাই বেশি।)

*** আবেদনের সময়সীমার শেষমুহূর্তে আবেদন করলে নাকি ভাইভায় সুবিধা হয়। তখন নাকি আগের দিনগুলোর ভাইভা প্রশ্ন বাজারে পাওয়া যায়, এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে ভাল ফল লাভ করা যায়

উত্তরঃ ভুল। যে সুবিধার কথা বলা হচ্ছে, সেটা এক শ্রেণীর মানুষের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে পরিচালিত প্রচারনার ফলে সৃষ্ট ভুল ধারনা মাত্র। এরা নিজেরা ভাইভা উপযোগী কিছু প্রশ্ন লিখে বিগত বছরের ভাইভার কিছু প্রশ্ন তার সাথে মিশিয়ে সেগুলো চলতি বছরের ভাইভা প্রশ্ন হিসেবে বাজারে বিক্রি করে।

তারা তাদের সুচতুর ব্যবসায়িক বুদ্ধি খাটিয়ে এমনভাবে তারিখ দিয়ে দিয়ে কথিত ভাইভার প্রশ্ন বাজারে আনে, সুক্ষ্মভাবে চিন্তা না করলে যে কেউই তাদের কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে বোকা বনে যাবেন।

উল্টো দেরিতে আবেদন করলে আপনার পরীক্ষার সেন্টার পড়বে গাজীপুর, উত্তরা, শনির আখড়া ইত্যাদি দূরবর্তী কেন্দ্রে, যা আপনার দুর্ভোগই শুধু বাড়াবে। আমি মনে করি আবেদন করা উচিত ১৫/১৬ তম দিনে, তাতে মোটামুটি মাঝামাঝি একটা জায়গায় রেজি: নম্বর পাওয়া যায়, তখন আশা করা যায় যে ঢাকা শহরের কোন স্কুল কলেজেই আপনার প্রিলি রিটেনের সেন্টার পড়বে। তখন একেবারে প্রথম দিকে ভাইভা দেওয়ার ঝুঁকি(!!) টাও এড়ানো যায়।

*** আমার হাত-পা ছোটবেলায় ভাঙ্গা/ চোখের নিম্ন দৃষ্টিসীমা / হার্টের প্রবলেম/ অঙ্গহানি/ অন্য কোন মেজর শারীরিক সমস্যা আছে, আমি কোন কোন ক্যাডার চয়েস দিতে পারব?

উত্তরঃ পিএসসির আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আপনি সব ক্যাডারই চয়েস দিতে পারেন। তবে পুলিশ বা আনসার ক্যাডারে যোগ দিলে যে ট্রেনিং করতে হয়, এই শারীরিক সমস্যা সেখানে আপনার বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা দিবে। তাই পুলিশ এবং আনসার বাদ দিয়ে অন্য সকল ক্যাডার আপনি চয়েস দিতে পারেন।

*** বিসিএস ক্যাডার হবার জন্য সর্বনিম্ন কতটুকু উচ্চতা থাকতে হয়?

উত্তরঃ পুলিশ এবং আনসার ক্যাডারের জন্য পুরুষ প্রার্থীগণের সর্বনিম্ন ৫’৪” এবং নারী প্রার্থীগণের জন্য সর্বনিম্ন ৫’০”” উচ্চতার অধিকারী হতে হয়। অন্যথায় চূড়ান্ত মেডিকেলে আপনি বাদ পড়ে যাবেন। পুলিশ ও আনসার ব্যতীত অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ন্যূনতম উচ্চতা পুরুষ প্রার্থীদের ৫.০”, নারী প্রার্থীদের ৪’১০” প্রয়োজন হবে।

*** চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স যারা ইউজ করেন, তারা কি পুলিশ ক্যাডার চয়েস দিতে পারবেন?

উত্তরঃ কোন সমস্যা নেই, দেওয়া যাবে।

*** পররাষ্ট্র ক্যাডার ফার্স্ট চয়েস দিলে নাকি সব পরীক্ষা ইংরেজি তে দিতে হয়?

উত্তরঃ আপনার ক্যাডার চয়েস যা-ই হোক, প্রিলি রিটেনে অভিন্ন প্রশ্নপত্রেই আপনাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। তবে হ্যা, পররাষ্ট্র ক্যাডার ফার্স্ট চয়েস দিলে ভাইভা পুরোপুরি ইংরেজি মাধ্যমে হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৯৯%। তাই যাদের স্পোকেন ইংলিশে আত্মবিশ্বাসের অভাব আছে, তারা পররাষ্ট্র ফার্স্ট চয়েস দেওয়ার আগে দুবার ভেবে নিলে ভাল হবে

*** শিক্ষা ক্যাডারকে চয়েজে সবার শেষে রাখলে ভাইভা বোর্ড কি নেতিবাচক হিসেবে নেয়!

উত্তরঃ নেতিবাচক নেওয়ার কোন কারন নেই। তবে বোর্ড অনেক সময় জানতে চাইতে পারে, এত মহান পেশা সবার শেষে কেন? তখন আপনি সন্তোষজনক উত্তর দিলে কোন প্রবলেম নেই

*** যদি ১ম চয়েস প্রশাসন, ২য় চয়েস শিক্ষা ক্যাডার হয়, তাহলে প্রশাসনের যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও বোর্ড কি শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ করতে পারেন?

উত্তরঃ ভাইভা বোর্ড সুপারিশ করার কেউ না। বোর্ড শুধু আপনার পারফর্মেন্স অনুযায়ী ২০০ নম্বরের মধ্যে ভাইভার মার্কস দিবে, নাথিং এলস। তার পর আপনার লিখিত ও ভাইভায় প্রাপ্ত মার্কস অনুযায়ী আপনি প্রথম/ দ্বিতীয়/তৃতীয় পছন্দের ক্যাডারে সুপারিশকৃত হবেন।

*** ১ম ও ২য় চয়েস পুলিশ ও প্রশাসন দেওয়ার পর ৩য় চয়েস পররাষ্ট্র দেওয়া কি উচিত হবে?

উত্তরঃ যৌক্তিক হবে না, কারন পরীক্ষা যত ভাল বা খারাপ হোক, পুলিশ এবং প্রশাসন ছাড়া কোন অবস্থাতেই আপনি পররাষ্ট্র পাবেন না। তাই দিতে চাইলে পররাষ্ট্র ফার্স্ট চয়েস হিসেবেই দেওয়া উচিত।

এএসপি (RAB) ৩৪তম বিসিএস (পুলিশ) | এক্স একাউন্টিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরো পড়ুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You're currently offline !!

error: Content is protected !!