কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
প্রশ্নঃ আধিপত্য (hegemony) বলতে কী বোঝেন?
প্রশ্নঃ প্রোটোকল কী?
প্রশ্নঃ ‘ফেডারেশন’ বা যুক্তরাষ্ট্র বলতে কী বোঝেন?
প্রশ্নঃ বর্ণবাদ বা ‘রেসিজম’ বলতে কী বোঝেন?
প্রশ্নঃ ‘বাফার স্টেট’ কী?
প্রশ্নঃ ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতি’ ও ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক’র মধ্যে পাঁচটি পার্থক্য নিরূপণ করুন।
প্রশ্নঃ পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী কী?
প্রশ্নঃ ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা’ বাহিনীর কয়েকটি কাজ উল্লেখ করুন।
প্রশ্নঃ নব্য উপনিবেশবাদ (Neo-Colonialism) কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
আধিপত্য (hegemony) বলতে কী বোঝেন?
কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | উত্তরঃ সাধারণত কোনো শ্রেণির দ্বারা অন্যান্য শ্রেণি বা রাষ্ট্র দ্বারা রাষ্ট্রের উপর প্রভুত্ব বা আধিপত্য করা। এক রাষ্ট্র যখন অন্য বা অন্যান্য রাষ্ট্রের উপর নিজের আধিপত্য চাপিয়ে দিতে চায়, অর্থাৎ অন্যান্য রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে নস্যাৎ বা খর্বিত করে সেসব রাষ্ট্রের সরকার, প্রশাসন, অর্থনীতি, সমাজ ইত্যাদির উপর নিজের প্রাধান্য চাপিয়ে দিতে চায়, তখন প্রথম রাষ্ট্রের এরূপ প্রবণতাকে বলা হয় আধিপত্যবাদ।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভারতের এর প্রতিবেশী ছোট রাষ্ট্রগুলোর উপর বিভিন্ন ইস্যুতে দাদাগিরি আধিপত্যজনিত আচরণকেই নির্দেশ করে।
প্রোটোকল কী?
উত্তরঃ প্রোটোকল হল একাধিক রাষ্ট্রের মধ্যে কোনো চুক্তি বা কার্য সম্পাদনের পূর্ব প্রস্তুতি বা আনুষ্ঠানিকতা। সাধারণত একাধিক রাষ্ট্র, সরকার বা পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার আগে কূটনৈতিক পর্যায়ে যে চূড়ান্ত দলিল তৈরি করা হয় সেটাকেই প্রোটোকল বলে। তা ছাড়া, কূটনৈতিক শিষ্টচার বা আচরণবিধিকেও প্রোটোকল বলা হয়।
‘ফেডারেশন’ বা যুক্তরাষ্ট্র বলতে কী বোঝেন?
কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | উত্তরঃ কতিপয় স্বকীয়তা সম্পন্ন রাষ্ট্রের বা রাজ্যের ইউনিয়নই হল ফেডারেশন বা যুক্তরাষ্ট্র। এখানে একটি কেন্দ্রীয় সরকার বিদ্যমান থাকে এবং প্রত্যেক প্রদেশে প্রাদেশিক সরকার নিয়োজিত থাকে। তবে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ যেমন-প্রতিরক্ষা, মুদ্রাব্যবস্থা ও রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয় কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে। ফেডারেল সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতীয় কাঠামো বিদ্যমান থাকে এবং ফেডারেল সরকারের সিদ্ধান্তসমূহ অঙ্গরাজ্যসমূহ এবং তাদের নাগরিকদের ওপর প্রযোজ্য হয়।
১৮৮৭ সাল পরবর্তী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বর্তমান ভারত ফেডারেশ্ন এর উদাহরণ।
বর্ণবাদ বা ‘রেসিজম’ বলতে কী বোঝেন?
উত্তরঃ বর্ণবাদ হল কোনো জনগোষ্ঠীর প্রতি অন্য গোত্রের এক ধরণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বৈষম্যমূলক আচরণের নীতি। সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্বেতাঙ্গ শাসিত দক্ষিন আফ্রিকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণকায়দের প্রতি যে অমানবিক বৈষম্যমূলক আচরণ ও নীতি অনুসৃত হয়, সেই নীতির বর্ণবাদের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। স্থানীয় ভাষায় এই বর্ণবাদকে বলা হয় Apartheid.
‘বাফার স্টেট’ কী?
কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | উত্তরঃ সাধারণত দুইটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের মধ্যবর্তী ক্ষুদ্র নিরপেক্ষ রাষ্ট্র বা সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রক রাষ্ট। দুটি বৃহৎ বিবদমান রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘর্ষ বা সংঘাত এড়ানোর জন্য দু-রাষ্ট্রের মাঝখানে যে ক্ষুদ্র রাষ্ট্র স্থাপন করে বা বজায় রাখা হয়, সেই রাষ্ট্রকেই বলা হয় বাফার স্টেট। দুটি শক্তিশালী রাষ্ট্র একই সীমানায় পাশাপাশি থাকলে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ বাধতে পারে। এই আশঙ্কায় উভয় রাষ্ট্র চুক্তি করে মধ্যবর্তী স্থানে নিরপেক্ষ ক্ষুদ্র রাষ্ট্র স্থাপন করে।
পামার ও পামকিন্স-এর মতে, ‘‘ Buffer states are of great importance because of their great cushioning effect between great powers.’’
উদাহরণস্বরূপ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বেলজিয়াম অক্ষ শক্তি ও মিত্র শক্তির ‘বাফার স্টেট’ হিসেবে বিবেচিত হত।
‘আন্তর্জাতিক রাজনীতি’ ও ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক’র মধ্যে পাঁচটি পার্থক্য:
১। বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা আন্তর্জাতিক রাজনীতির মূল লক্ষ্য। অপরদিকে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সম্প্রীতি ও বন্ধুত্ব স্থাপন করাই হল আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূল লক্ষ্য।
২। আন্তর্জাতিক রাজনীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয়। তাই বলা যায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরিধি ও বিষয়বস্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতির তুলনায় ব্যাপক ও বিস্তৃত।
৩। আন্তর্জাতিক রাজনীতি পরোক্ষভাবে নীতি নির্ধারণ করে থাকে। অপরদিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রত্যক্ষভাবে নীতি নির্ধারণ করে থাকে। কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
৪। আন্তর্জাতিক রাজনীতির স্ব-রাষ্ট্রীয় কল্যাণের জন্য নীতি প্রণয়ন করে। অপরপক্ষে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মানবকল্যাণের কথা চিন্তা করে সর্বদা নীতি প্রণয়ন করে।
৫। আন্তর্জাতিক রাজনীতি হল বিভিন্ন দেশের সরকারের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা, আইন, অর্থনীতি, যোগাযোগ ইত্যাদি নিয়ে গড়ে উঠে।
পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী কী?
কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী বা নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপ (Nuclear Suppliers Group বা NSG) একটি বহুজাতিক পারমাণবিক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। পরমাণু অস্ত্র উন্নয়নের ক্ষেত্রে উপাদানের রফতানি ও পুনর্স্থানান্তরণ নিয়ন্ত্রণ ও বিদ্যমান উপাদানের সুরক্ষার মাধ্যমে এই সংস্থা পরমাণু অস্ত্রসম্ভারের হ্রাসকরণের কাজে নিযুক্ত।
পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৪ সালে ভারতের পরমানু বোমা পরীক্ষার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ। ১৯৭৫ সালে এর প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা’ বাহিনীর কয়েকটি কাজ:
১) শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও তদারকি করা ও শান্তিচুক্তি পরিস্থিতি গড়ে তোলা।
২) যুদ্ধ ও অস্ত্র বিরতি কার্যক্রম পর্যবেক্ষ্ণ এবং তদারকি করা এবং বিবদমান গ্রুপগুলোর মাঝে শান্তি পরিস্থিতি বলবৎ করা।
৩) গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে উত্তরণের জন্য নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা প্রদান ও তদারকি করা।
৪) অসামরিক অঞ্চলে সেনা টহল দান এবং স্থিতিবস্থা বজায় রাখা।
৫) পরস্পর বিরোধী অঞ্চলে বাজার অঞ্চল স্থাপন করা।
৬) যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, শরণার্থী ও উদ্বাস্তুদের মানবিক সাহায্য প্রদান।
৭) যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে ভূমি মাইন অপসারণ ও অন্যান্য স্থাপনা পুনর্গঠনে সহায়তা করা ইত্যাদি | কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
নব্য উপনিবেশবাদ (Neo-Colonialism) কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
১। উন্নত রাষ্ট্র কৃর্তক গরীব রাষ্ট্রগুলোতে তাঁবেদারি সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে;
২। অর্থনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে;
৩। সামরিক জোটের অন্তর্ভুক্তকরণের মাধ্যমে;
৪। সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে;
৫। শিক্ষা ও সংস্কৃতির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।