Site icon Alamin Islam

ঘুষ গ্রহণের আধুনিক মডেল

N.B : This writing is based on various events that occurred under the fascist Hasina regime.

আমাদের সমাজ আধুনিক হচ্ছে, আমরা প্রতিনিয়ত সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে ঘুষ গ্রহণের পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আসছে। আজকের আলোচনাটি এ নিয়েই ঘটনাচক্র আকারে সাজানো হয়েছে।

ঘটনাচক্র-০১ঃ আমার ঢাকা কলেজের এক বন্ধু আমার কাছে ই-পাসপোর্টের আবেদন করে নেয়। আবেদন করার পরে তার ভেরিফিকেশনের জন্য পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে কল দেয় এবং একটা দোকানে গিয়ে কিছু কাগজ জামা দিয়ে আসতে বলে। আমার বন্ধু সেই দোকানে যায় এবং দোকানদারকে বিষয়টি বলে। কিন্তু দোকানদার টাকা ছাড়া ওর কাগজগুলো জমা নিচ্ছিলো না।

পরে সে পুলিশের ওই কর্মকর্তাকে কল দিয়ে দেখা করতে চাইলে উনি ব্যস্ততার কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং কাগজগুলো ওই দোকানির কাছে জমা দিতে বলেন। দোকানি কিসের টাকা চায় জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি। কারণ- তারাতো একটা সিন্ডিকেট !!! তারা মানুষকে জিম্মি করে অবৈধ অর্থ উপার্জনের জন্য ঘুষ গ্রহণের আধুনিক মডেল তৈরি করছে।

এখনো amarStudy অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড না করে থাকলে গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করতে এখানে যানঃ Download Now. অ্যাপটি বিসিএস’সহ প্রায় সব রকমের চাকুরির প্রস্তুতির সহায়ক।

আমরা সচেতন এবং প্রতিবাদী হলে হাতেগোনা কিছুসংখ্যক এসব অসৎ কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেট থেকে রক্ষা পাওয়া হয়তোবা সম্ভব হবে। আমার ধারণা পুলিশের সেই কর্মকর্তা ফোন কলে ঘুষ চাননি কলরেকর্ডের ভয়ে এবং সরাসরি দেখা করেননি বেইজ্জতির ভয়ে। সোস্যাল মিডিয়া এবং মূলধারার গণমাধ্যমে এসব বিষয়ে যথেষ্ট আলোড়ন তৈরি করা গেলেই আমরা ঘুষ মুক্ত দূষিত সমাজ থেকে প্রকৃতপক্ষে আধুনিক উন্নত-সভ্য সমাজের দেখা পাবো বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

ঘটনাচক্র-০২ঃ আমার স্পষ্টভাবে মনে আছে আমি যখন ২০১৯ সালে পাসপোর্ট করার জন্য পঞ্চগড় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যাই, আমার সকল কাগজপত্র ঠিক থাকার পরেও ওখানকার দায়িত্বরত কর্মচারী নানা অজুহাত দেখিয়ে আমার কাগজ জমা নিচ্ছিলেন না। অথচ, আমার সামনেই উনি অন্য কয়েকজনের পাসপোর্টের আবেদন ফর্ম পূরণ করে দিচ্ছিলেন। পরে জানতে পারলাম ওখানে কিছু লেনদেন হয়েছে, তাই তিনি নিজ হাতে তাদের র্ফম পূরণ করে দিচ্ছেন।

ঘটনাক্রমে আমি পার্সপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালককে বিষয়টি অবহিত করলে উনি ওই কর্মকর্তাকে উনার রুমে ডেকে নিয়ে আমার কাগজগুলো জমা নিতে বলেন। কাগজগুলো জমা দিয়ে, পাসপোর্টের জন্য ফটো তুলে আমার কাজ শেষ হওয়ায় আমি চলে আসি। কিন্তু আমার সাথে আরো ২/৩ জন মানুষ ছিলেন তাদের পাসপোর্টের আবেদন একইসাথে করার পরেও নানা অজুহাত দেখিয়ে তাদের কাগজপত্র কিংবা ফটো কোনোটাই নেয়নাই। পরে খোজখবর নিয়ে জানতে পারলাম তাদের দুইটা পাসপোর্টের জন্য এক্সট্রা ২ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।

ঘটনাচক্র-০৩ঃ পাসপোর্ট অফিসে কাগজপত্র এবং ফটো তুলে আসার দেড়মাস পরে হঠাৎ করে আমার ফোনে তথাকথিত একজন আওয়ামীলেগের নেতার নম্বর থেকে কল আসলো। কাকতালিয় ভাবে উনি আমার পরিচিত ছিলেন। উনি বললো যে, ❝তোর পাসপোর্টের ভেরিফিকেশনের জন্য পুলিশ আসছে, উনাদের চা নাস্তা খাওয়ার জন্য কিছু টাকা পয়সা দিতে হবে❞

বিষয়টি কি এরকম যে, ভেরিফিকেশনের জন্য পুলিশ স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাদের কাছ থেকে তথ্য নেন এবং উনাদের যোগসাজসে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ঘুষ আদায় করেন ??? প্রশ্নটি রেখে গেলাম, কারো জানা থাকলে জানাবেন।

ঘটনাচক্র-০৪ঃ আমার দুখণ্ড জমি কেনার সৌভাগ্য হয়েছিলো। জমিজমা সম্পর্কিত লিগ্যাল বিষয়ে আমার তেমন কোনো ধারণা নেই। উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালায়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার পরে জানতে পারলাম, ক্রয়কৃত জমিগুলোর মিউটেশন/খতিয়ান করতে হবে। জমির দলিলগুলো হাতে পাওয়ার পরে খতিয়ান করার জন্য প্রথমেই ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগাযোগ করি।

জমি রেজিট্রেশন করার সময় সাব-রেজিট্রারের অফিসে আমাকে কোনো অনিয়মের শিকার হতে হয়নি। কিন্তু জমির খতিয়ান করার জন্য যখন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের শরণাপন্ন হই, তখন ভূমি অফিসের রফিকুল ইসলাম (অফিস সহকারী, ইউনিয়ন ভুমি অফিস, চন্দনবাড়ী, বোদা, পঞ্চগড়) নির্ধারিত টাকার বাইরে দ্বিগুণ টাকা দাবি করেন, নাহলে উনি কাগজ ফেলে রেখে সময়ক্ষেপণ করতেছেন। এভাবে ২ মাস চলে গেলো।

এমন অবস্থায় আমি সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ ইমরানুজ্জামান এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করার কথা রফিকুল ইসলাম কে জানালে তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেন এবং সহকারী কমিশনারকে অভিযোগ না করার জন্য অনুরোধ করেন।

সেসময় আমি ঢাকায় অবস্থান করার কারণে কমিশনার সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারিনি। তবে অফিস সহকারী (রফিকুল ইসলাম) আমাকে আশ্বস্ত করার অল্প কিছুদিন পরে খতিয়ানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানায়। অভিযোগের ব্যাপারে উনাকে না জানালে উনি হয়তোবা আরো কালক্ষেপণ করতেন, যেহেতু আমি উনার দাবি অনুযায়ী ঘুষ দেইনি।

উল্লেখ্য, এখন অনলাইনেই জমির খতিয়ান পাওয়া যায়। জমির খতিয়ানের মতো অন্যান্য সেবাগুলো ডিজিটালাইজ করা গেলে অনিয়ম দুর্নীতি অনেককাংশে কমানো সম্ভব। এছাড়াও দুর্নীতি বিরোধী ক্যাম্পেইনে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করা গেলে দুর্নীতির কোটা শূন্যের ঘরে নিয়ে আসা সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি।

ঘটনাচক্র-০৫ঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার একজন পরিচিত বন্ধু আমার কাছে ই-পাসপোর্টের আবেদন করে নেয়। আবেদন করে নেওয়ার আনুমানিক প্রায় ১ মাস পরে সে আমাকে আবার কল দেয় এবং জিজ্ঞেস করে তার ভেরিফিকেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার কাছ থেকে কিছু টাকা দাবি করছে। আমি তাকে নিষেধ করলাম তাদের কোনো টাকা না দেওয়ার জন্য, সে আমার জানামতে এক টাকাও দেয়নি। তবে পুলিশের ওই কর্মকর্তা তাকে নেগেটিভ রিপোর্ট দেওয়ার ভয় দেখিয়েছে।

আমি তাকে সাহস দিয়ে বলছি, ওরা কি বলে বলুক! পাসপোর্ট হয় কি’না দেখি। তুইতো আর কোনো অপরাধ করিস নাই যে তোর পুলিশিং রিপোর্টে ওরা ঝামেলা করবে❞। পরে সে সময় মতোই পাসপোর্ট হাতে পেয়েছে, কোনো প্রকার ঘুষ ছাড়াই। এখান থেকে আমার যতোটুকু মনে হলো তারা মানুষের অবস্থান দেখে ঘুষ চায় এবং ঘুষ না দিলে কাজ সঠিকভাবে না হওয়ার হুমকি দেয় কিন্তু আমার বিশ্বাস দিনশেষে ঘুষ ছাড়াই সেবা পাওয়া সম্ভব। তবে তার জন্য দরকার ঘুষ বিরোধী একটি অহিংস সামাজিক গণআন্দোলনের।

মূলকথাঃ উপরের ঘটনাচক্রগুলোর মধ্যে একটি সাধারণ মিল রয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঘুষ/অবৈধ অর্থ লেনদেনের সাথে দ্বিতীয়/তৃতীয়/চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দেখা যায়। বিষয়টি কি প্রকৃতপক্ষেই এমন ??? আঞ্চলিক অফিসগুলোর সর্বোচ্চ কর্মকর্তারা তাদের অধীনে কর্মচারিদের ঘুষ লেনদেনের ব্যাপারে অবহিত নন ??? যদি সত্যিই অবহিত না হয়ে থাকেন, তবে এই ব্যর্থতার দায়ভার কার ??? নাকি তারা নিজেরাই তাদের অধিনে কর্মচারীদের দিয়ে ঘুষ ব্যবসা পরিচালনা করছেন ???? প্রশ্ন রেখে গেলাম, কারো জানা থাকলে জানাবেন।

আরো পড়ুন:

Exit mobile version