Site icon Alamin Islam

বাংলা নামের উৎপত্তি

বাংলা নামের উৎপত্তি | অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে, যা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা বিভিন্ন জনপদে বিভক্ত ছিল। তার মধ্যে গৌড় ও বঙ্গ অন্যতম ছিল। বাংলায় বঙ্গ-গঙ্গারিডই, পুণ্ডু, গৌড় ও বাঙাল জনপদের উল্লেখ পাওয়া যায়। ইতিহাস থেকে জানা যায় এই ‘বঙ্গ’ থেকে ধীরে ধীরে বাঙালা নামধারণ করে অবশেষে বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়।


বাংলা নামের উৎপত্তি যেভাবে হয়:

বাংলা নামের উৎপত্তি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে নানা ধরণের মতবিরোধ রয়েছে। এছাড়াও অনেকগুলো উৎসের ভিত্তিতে বাংলা নামের উৎপত্তি হয়। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:


পৌরাণিক কাহিনী: অন্ধমুনীর গর্ভে পাচ জন সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। যাদের মধ্যে একজনের নাম ছিল ‘বঙ্গ’। তিনি পরাক্রমশালী রাজা ছিলেন। তার বংশধরদের নাম অনুসারে “বঙ্গ” নামের উৎপত্তি হয়। বিভিন্ন সংযোজনের মাধ্যমে এটি নাকি বাংলা নাম ধারণ করে। অন্যদিকে বলা হয়, হযরত নূহ (আ)-এর এক বংশধরের নাম ছিল ‘বঙ্গ’। তার নাম অনুসারেও ‘বঙ্গ’ নামের উৎপত্তি হতে পারে। পৌরণিক কাহিনীর এসকল উৎস থেকে বলা হয় প্রাচীনকালে এমন কোনো পরাক্রমশালী রাজা ছিল যার নামানুসারে ‘বঙ্গ’ নামের উৎপত্তি হয়েছে।

এখনো amarStudy অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড না করে থাকলে গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করতে এখানে যানঃ Download Now. অ্যাপটি বিসিএস’সহ প্রায় সব রকমের চাকুরির প্রস্তুতির সহায়ক।

আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরী:

আবুল ফজল “বাঙালা” নামের ব্যাখ্যায় তাঁর আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে বলেন, বাঙালার আদি নাম ছিল ‘বঙ্গ’। আদিকালে এখানে জলাবদ্ধতা রোধ করার জন্য রাজারা ১০ গজ উঁচু ও ২০ গজ বিস্তৃত প্রকাণ্ড ‘আল’ নির্মাণ করতেন। বঙ্গের সাথে “আল” যুক্ত হয়ে “বাঙ্গাল” বা “বাঙালা” নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে আবুল ফজল মনে করেন।


চীনা ও তিব্বতি শব্দের মিল:

অনেকের ধারণামতে বঙ্গ চীনা ও তিব্বতি শব্দ। বঙ্গের “অং” অংশের সাথে গঙ্গা, হোয়াংহো ও ইয়াংসিকিয়াং ইত্যাদি নদীর নামের মিল রয়েছে। বঙ্গ নামে যেহেতু বাংলায় অনেক জলাশয়ের নামও রয়েছে। এভাবেই বঙ্গের উৎপত্তি হতে পারে।


কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র: সুকুমার সেনের মতকে সমর্থন করে বলা যায় খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বঙ্গের শ্বেত স্নিগ্ধ স্মৃতির নাম পাওয়া যায়। সুকুমার সেনের মতে, অনেক তুলা উৎপাদন হতো বলে এ অঞ্চলের নাম “বঙ্গ” রাখা হয়েছে।


রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতামত: রমেশচন্দ্র মজুমদার মনে করেন “বাঙ্গাল” দেশের নাম হতেই ধীরে ধীরে সমগ্র দেশের নাম “বাংলা” নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশের আদিবাসীদের যে ‘বাঙ্গাল’ বলা হয় তা সেই প্রাচীন ‘বাঙ্গাল‘ দেশের স্মৃতি বহন করে।


আব্দুল মমিন চৌধুরীর মতামত:

বাংলা নামের উৎপত্তি বিষয়ে অধ্যাপক আব্দুল মমিন চৌধুরী বলেন, বাংলার প্রচীন জনপদের মধ্যে ‘বাঙ্গাল’ কখনো ‘বঙ্গোর’ তুলনায় খ্যাতিমান ছিল না। তার মতানুসারে, বঙ্গের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার অনেক জনপদ অন্তর্ভূক্ত ছিল। তিনি বলেন, বাঙ্গাল বঙ্গের সমুদ্রতীরবর্তী দক্ষিণভাগ ছিল। ফলে তিনি মনে করেন, নদীমাতৃক বৃষ্টিবহুল এ বাংলা ‘আল’ নির্মাণ করায় ‘বঙ্গ’ থেকেই ‘বাংলা’ নামের উৎপত্তি হয়েছে।


ইলিয়াস শাহের শাসনামল:

লখনৌতি, সাতগাঁও ও সোনারগাঁও একত্রিত করে নিজ শাসনে এনে “শাহ-ই-বাঙালা” উপাধি ধারণ করেন। বিখ্যাত ঐতিহাসিক শামস-সিরাজ-আফসীফ তার “তারিখ-ই-ফিরোজশাহী” গ্রন্থে ইলিয়াস শাহকে “শাহ-ই-বাঙালা” এবং তার সৈন্যদের “বাঙালা পাইক” বলে আখ্যায়িত করেছেন।


ইউরোপীয়দের অভিমত:

ষোড়শ শতকে পর্তুগীজরা বাংলায় আক্রমণ করে বাঙালাকে “বাঙ্গালা” বলে উল্লেখ করেন। পর্তুগিজ, ভার্থেমা, বারবোসা ও জোয়াওদ ব্যাবোসের বর্ণনায় ‘বাঙ্গালা’ রাজ্যের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। এছাড়াও র‌্যাফেল ফির, স্যামুয়েল পার্স-এর বর্ণনায় ‘বাঙ্গালা’ রাজ্যের উল্লেখ করেন।


উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, যদিও বাংলা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যথেষ্ট মতবিরোধ আছে। তবে সার্বিকভাবে এটা নিশ্চিন্তকরে বলা যায় যে প্রাচীনকালে ‘বঙ্গ’ নামের একটি স্বতন্ত্র আবাসভূমির অস্তিত্ব ছিল। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন বিবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বাংলা নাম ধারণ করে।


Al-Amin Islam | অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো ভুল হয়ে থাকলে মেসেজ করার জন্য অনুরোধ রইল।

আরো পড়ুন:

Exit mobile version