অনেকেই আছেন যারা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চাচ্ছেন কিন্তু কিভাবে কোন বিষয় নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন তা বুঝতে পারছেন না, সেসব নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে আজকের এই লেখা। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে মানুষ ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বেশি নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে। ভার্চুয়ালি যেসব কাজ করা সম্ভব সবকিছুই বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে করা যাচ্ছে। তাই মানুষের ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ফ্রিল্যান্সার এবং উন্নত বিশ্বের বায়াররা উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশের ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে তাদের কাজ করিয়ে নিচ্ছে।
সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেছেন বা অনেকেই শুরু করতে চাচ্ছেন কিন্তু বুঝতে পারতেছেন না কোথা থেকে এবং কিভাবে শুরু করবেন? কোন বিষয়টি নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন এটি মূলত আপনার উপর নির্ভর করবে। আপনার যদি ডিজাইন, আকাআকি ইত্যাদি ভালো লাগে তবে আপনি গ্রাফিক ডিজাইন দিয়ে শুরু করতে পারেন। আপনার যদি টাইপিং স্পিড ভালো থাকে তাহলে আপনি ডেটা এন্ট্রি দিয়ে শুরু করতে পারেন। আপনার যদি কোডিং-প্রোগামিংয়ের প্রতি আগ্রহ থাকে তবে আপনি ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট অথবা অ্যাপ ডেভেলপন্ট দিয়ে শুরু করার চেষ্টা করুন।
আপনার যদি মার্কেটিং বিষয়ে ভালো আইডিয়া বা অবিজ্ঞতা থাকে তবে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং দিয়ে শুরু করতে পারেন। আপনি যদি একাধিক ভাষা জেনে থাকেন তবে ট্রান্সলেশন সার্ভিস দেওয়ার মাধ্যমেও ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন। এছাড়াও অসংখ্য বিষয় আছে যেগুলোতে দক্ষতা অর্জন করার মাধ্যমে অনলাইনে কাজ করে ইনকাম করা যায়। তবে এখানে মূখ্য বিষয় হচ্ছে কোন বিষয়টা নিয়ে আপনার কাজ করতে ভালো লাগছে বা কোন বিষয়টার প্রতি আপনার আগ্রহ বেশি সেই বিষয়টি নিয়েই কাজ শুরু করে দিন।
নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং
কোন বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং করবেন এটা বেছে নেওয়ার পরে এখন কথা হলো শিখবেন কিভাবে/কোথা থেকে? শুরুর দিকে আপনার কোনো ট্রেইনিং সেন্টার বা অন্যকোথাও যাওয়ার কোনো দরকার নেই। আপনার যে বিষয়টি নিয়েই ফ্রিল্যান্সিং করার ইচ্ছা থাকুক না কেন গুগল/ইউটিউব ইত্যাদি মাধ্যমে সার্চ করে উক্ত বিষয়ে কিছু বেসিক ভিডিও দেখে নিন। এভাবে বেসিক আইডিয়া নিয়ে দেখুন আপনি যে বিষয়গুলো নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে চাচ্ছেন সেগুলো আপনার ভালো লাগছে কি’না। একবার দেখে ভালো না লাগলে দুই-তিন বার দেখে বুঝার চেষ্টা করুন উক্ত বিষয়টি আপনার ভালো লাগছে কি’না। যদি সব ঠিক থাকে তবে আপনি ভালো দেখে একটি ট্রেইনিং সেন্টারে ভর্তি হতে পারেন। ভালো লাগার বিষয়টি বার বার বলেছি এজন্য কারণ- আপনি যে বিষয়টি নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে যাচ্ছেন সেটাকে আপনি কিভাবে নিচ্ছেন? কাজের প্রতি ভালোলাগা/ভালোবাসা না থাকলে আপনি উক্ত বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে বেশিদিন টিকে থাকতে পারবেন নাহ।
তবে ট্রেইনিং সেন্টারে ভর্তি হবার পূর্বে অবশ্যই উক্ত ট্রেইনিং সেন্টারের বিষয়ে বিশ্বস্ত সূত্র থেকে খোজ খবর নিয়ে তারপরে ভর্তি হোন। কারণ- আজকালতো অমুক ষাঁড়, তমুক ষাঁড় বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং ইন্সটিটিউট খুলে বসে আছে যারা কিনা ফ্রিল্যান্সিংয়ের নামে স্পেমিং শিখায়। তাই ট্রেইনিং সেন্টার বাছাই করার পূর্বে অবশ্যই উক্ত ট্রেইনিং সেন্টার সম্পর্কে খোজ খবর নিয়ে তারপরে ভর্তি হবেন। সবথেকে ভালো হয় যদি পরিচিত কোনো বড়ভাই অথবা অন্যকারো থেকে শিখতে পারেন। শুরুর দিকে কাজ শিখতে গিয়ে বড়ভাইদের যদি ফ্রিতে কোনো প্রজেক্ট করে দেওয়া লাগে তাও করুন। রিয়েল লাইফ প্রজেক্ট করতে গিয়ে অনেক ভুল করবেন যেগুলো বড়ভাইয়েরা সমাধান করে দিবেন। এভাবেই আসলে শিখতে হবে।
নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কিছু পরামর্শঃ
আপনি যে বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে যাচ্ছেন সেই বিষয়ে একটা স্ট্যান্ডার্ড ধারণা না নিয়ে মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট করতে যাবেন নাহ। প্রয়োজনবোধে একাউন্ট করলেও সে একাউন্ট থেকে ক্লায়েন্টদের জবপোস্টগুলো দেখুন এবং তাদের রিকোয়ারমেন্টসগুলো বুঝার চেষ্টা করুন। এভাবে কিছু জব পোস্ট দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ করার জন্য কতটুকু উপযুক্ত। কিছুদিন বায়ারদের জব পোস্ট দেখার পরে আপনি যদি উপলব্ধি করতে পারেন যে আপনি মোটামুটি স্ট্যান্ডার্ড মানের কাজ শিখেছেন তাহলেই কেবলমাত্র মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করার জন্য গিগ বা আপনার অফারকৃত সার্ভিসগুলো বায়ারদেরকে দেখানোর জন্য প্রোফাইলটি ভালোভাবে তৈরি করুন।
গিগ তৈরি করার সময় আরো কয়েকজন ফ্রিল্যান্সারের গিগ গুলো দেখে একটা আইডিয়া নিন। তবে কোনোকিছু হুবহু কপি করবেন নাহ। শুরুর দিকে আপনি হয়তোবা কোনো কাজ এমনকি কোনো ক্লায়েন্টের কাছ থেকে মেসেজও পাবেন না। এতে করে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। আপনি সঠিকভাবে আপনার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। শুরুর দিকে টপরেটেডসহ বিভিন্ন লেভেল পাওয়া ফ্রিল্যান্সারদের থেকে তুলনামূলক কম খরচে আপনি ভালো সার্ভিস দেওয়ার চেষ্টা করুন। আপনার কিছু স্যাম্পল কাজ প্রস্তুত রাখুন, যাতে করে আপনি যে প্রকৃতপক্ষে কাজ পারেন সেটা বায়ারদেরকে কনভেন্স বা বুঝানোর চেষ্টা করুন।
সবথেকে ভালো হয় যদি আপনি একটি পোর্টফোলিও টাইপ ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখানে আপনার রিয়েল কাজের স্যাম্পলগুলো রাখেন। অন্যজনের কাজ চুরি করে নিজের পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটে দিবেন নাহ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবং আল্লাহর রহমত থাকলে ধীরে ধীরে কাজ পাওয়া শুরু করবেন। প্রথমের দিকের কাজগুলো খুব ভালোভাবে শেষ করুন এবং ক্লায়েন্টকে জিজ্ঞেস করুন সে আপনার কাজে স্যাটিসফাই কি’না? ক্লায়েন্ট যদি বলে সব ঠিক আছে, তবে কাজ ডেলিভারি করে দিন। ক্লায়েন্ট যদি কোনো রিভিউ না দেয় তবে সিস্টেমে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে ফিডব্যাক চাওয়া যেতে পারে। তবে সরাসরি ক্লায়েন্টকে রিভিউ দিতে বলা যাবেনা।
নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং | তবে সবসময় একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে আর সেটা হলো এমন কিছু করবেন নাহ যেটা উক্ত ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসের রুলস ব্রেক করে। শুরুর দিকে রুলস ব্রেক করলে প্রোফাইল ব্যান হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ১০০ ভাগ। তাই যে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করবেন বলে ভাবছেন সে মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করার আগেই তাদের রুলসগুলো কয়েকবার পড়ে নেওয়া উচিত।
অনলাইন আর্নিং/ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য আমার এই চ্যানেলটি ফলো করতে পারেন। এই চ্যানেলে আমি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ওয়েব ডিজাইন, ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট, এসইও, ফেসবুক মার্কেটিং এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিনিয়ত ভিডিও আপলোড করে থাকি।